খরগোশ। দেখতে খুবই সুন্দর এই প্রাণীটি গোটা বিশ্বে জনপ্রিয় তার মাংসের জন্য। ঘরে ঘরে অন্যান্য প্রাণীর মতো ততটা প্রচলিত না হলেও, খরগোশ পালন কম খরচে মধ্যে অধিক আয়ের এক সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ। মাংসের জন্য মূলত খরগোশ পালন করা হয়। এই প্রাণীর চামড়া থেকে অত্যন্ত উন্নত মানের পশমও মেলে, যার বাজারে অর্থকরী মূল্য বেশ ভালোই।
খরগোশ পালনের সুবিধাকর দিক- (Profit margin)
১)খরগোশ পালনে শুরুর খরচ খুবই কম।
২) এই প্রাণীর পালনে বিস্তৃত জায়গার প্রয়োজন পড়ে না।
৩) খরগোশের দৈহিক আকার ছোট হওয়ায় এই প্রাণী পালনে খুব একটা অসুবিধা হয় না।
৪) খরগোশের জন্য বেশি খাবারের দরকার পড়ে না, তাই এটির পালনে খুব একটা বেশি খরচ নেই।
৫) অত্যন্ত দ্রুত হারে এদের বংশ বৃদ্ধির কারণে খরগোশ পালনে আয়ের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি।
৬) সবুজ শাক সবজি খেয়ে এরা নিজেদের খাদ্য চাহিদা মেটায় বলে, এদের রোগবালাই অত্যন্ত কম।
খরগোশের দেহে হাড়ের অনুপাতে মাংসের পরিমাণ বেশি থাকায়, এদের মাংস খেতে কারোরই কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কোলেস্টেরলের মাত্রা খরগোশের মাংসে অনেকাংশে কম হওয়ায়, সব বয়সের মানুষের জন্য এটি সঠিক প্রোটিনের ভরপুর খাবার। বাজারে এই মাংসের চাহিদাও দিনকে দিন বাড়ছে, সঙ্গে মানুষও ক্রমশ ঝুঁকছে খরগোশ পালনের মতন লাভজনক ব্যবসায়। খরগোশের বর্জ্য পদার্থরও সার হিসাবে বাজারে চাহিদা রয়েছে।
সামান্য জায়গাতেই খরগোশ পালনে অধিক লাভবান হওয়া যায়। খরগোশ যদি বাঁশের খাঁচার মধ্যে পালন করতে হয় তাহলে, শাকপাতা, তরিতরকারি, ভুট্টার গুঁড়ো, বাদাম খোল এইসব খাওয়ালেই চলবে। জলে মিশিয়ে ভিটামিন ও খনিজ লবণও খরগোশকে খাওয়ানো যেতে পারে। শাকপাতা, সবজি খরগোশের জন্য আদর্শ ও প্রয়োজনীয় খাদ্য, এইগুলো খাওয়ানোর পাশাপাশি খরগোশকে পরিষ্কার জলও পানের জন্য দেওয়া উচিত।
রোগ-বালাই (Disease)
ককসিডিয়া, পেটফোলা, কৃমিরোগ, নিউমোনিয়ার মতন রোগে মূলত খরগোশরা আক্রান্ত হয়। খরগোশ পালতে গেলে তাই এদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া উচিত। কোনও ভাবে খরগোশদের এইসব রোগ দেখা দিলে, প্রাণিচিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত।
খরগোশ প্রতিপাল পদ্ধতি: (Procedure of Rabbit Rearing)
মূলত দুই ভাবে খরগোশ পালন করা যায় ১) গভীর লিটার পদ্ধতি ২) খাঁচা পদ্ধতি
১) গভীর লিটার পদ্ধতি: অনুসরণ করে খরগোশ পালন করলে কম সংখ্যক খরগোশ পালতে হবে। এই প্রাণী মাটি খুঁড়ে গর্ত বানায়, তাই সবার আগে এই অসুবিধা থেকে বাঁচতে খরগোশ থাকার জায়গার মেঝে কংক্রিট দিয়ে বানানো উচিত। মেঝের উপর ৪-৫ ইঞ্চি পুরু করে তুষ, ধানের খড় ছড়িয়ে দিলে খরগোশের মেঝে থেকে ঠান্ডা লাগবে না। পুরুষ খরগোশ আলাদা ঘরে রাখা উচিত। অবশ্য এভাবে প্রতিপালন করলে খরগোশ সহজে রোগাক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া খরগোশকে সামলানোও খুব অসুবিধা হয়।
২) খাঁচা পদ্ধতি: ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে লোহার পাত দিয়ে তৈরি ৩-৪ তাক যুক্ত খাঁচা বানিয়ে তাতে খরগোশ প্রতিপালনের পদ্ধতি বর্তমানে খরগোশ খামারিদের কাছে অধিক জনপ্রিয়। তাক অনুযায়ী খরগোশ যাতে ঠিক মতন থাকতে পারে, তার জন্য খোপ বানিয়ে দিতে হবে।
আরও পড়ুন: Diseases management in okra: বর্ষায় ঢেঁড়স গাছের রোগ দমনের প্রতিকার শিখে নিন
খরগোশ পালন করে খুব সহজেই আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হওয়া যায়। এদের প্রতিপালনে বিশেষ খরচ না থাকায়, বিনিয়োগের হারও রডের পিছনে অত্যন্ত কম। কম পুঁজিতে আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য পশু পালন করতে হলে, কম বিনিয়োগকারীদের কাছে খরগোশ পালন আদর্শ এক ব্যবসা। বর্তমানে অনেক বেকার যুবক যুবতী খরগোশ পালনের মতন স্বল্প পুঁজির ব্যবসায় নামছে, এবং অল্প সময়ে লাভবানও হচ্ছে। দিনকে দিন খরগোশের মাংসের চাহিদা বাড়ায়, এই প্রাণীর প্রতিপালন এখনকার এক লাভবান ব্যবসা হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: Mixed Farming Procedure: মিশ্র চাষ করে লাভবান হতে হলে, জেনে নিন এই ক'টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য