মাছ চাষে চাষীরা অনেক সময় বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। অনেকে বলেন মাছের সঠিক বৃদ্ধি হচ্ছে না, মাছের রঙ সুন্দর হচ্ছে না, ওষুধ প্রয়োগে কখনও কখনও সাময়িক কমে গেলেও মাছের কিছুদিন পরে পরে বিভিন্ন রোগ বালাই হচ্ছে। মৎস্য চাষে মাছের রোগ দমন কিন্তু সর্বাপেক্ষা জরুরী। মাছের রোগগুলির মধ্যে Epizootic Ulcerative Syndrome বা মাছের ক্ষত রোগ বেশী দেখা যায়। এই রোগের লক্ষণ এবং কীভাবে এই রোগ প্রতিকার করা যায়, আজ সেই সম্পর্কে আমরা আপনাদের তথ্য প্রদান করব।
মাছের ক্ষত রোগ বা EUS-এর লক্ষণ (Fish Disease, Epizootic Ulcerative Syndrome) -
কোন কারণে পুকুরে ভৌত-রাসায়নিক পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন বা পরিচর্যার শিথিলতার দরুন মাছ রোগাক্রান্ত হতে পারে। আজকাল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে রোগের প্রকোপ কিছুটা বেড়েছে ত বটেই। EUS-এ আক্রান্ত হলে মাছের গায়ে লাল ছোপ দেখা যায়। এই লাল দাগ গোলাকার এবং প্রায়শই মাছের লেজের দিকে আগে দেখা যায়। ক্রমে আক্রান্ত স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়, মাছ স্বাভাবিকভাবে ছোটাছুটি করে।
প্রতিকারের কিছু সরল উপায় (Disease Management) -
রোগ যাতে জলাশয়ে আসতে না পারে, তার জন্যে বিঘা প্রতি কুড়ি কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা প্রয়োজন। চুন প্রয়োগ করার পরের দিন রেকার দিয়ে পুকুরের তলদেশ ঘেঁটে দিতে হবে। বাইরে থেকে জল যাতে পুকুরে না আসতে পারে, তার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। দশ লিটার জলে এক গ্রাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ও ২০০ গ্রাম খাবার লবণ মেশানো জল পুকুরের পাড় থেকে ঝোলানো প্লাস্টিক বা পেট বোতলে ছিপিতে সামান্য ছিদ্র করে সারাদিন ধরে ড্রপ ড্রপ করে পড়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারলে ভালো হয়।
এছাড়া ভেষজ দেশীয় প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রেই মাছ চাষীরা বংশ পরম্পরায় ব্যবহার করে থাকেন। কাঁচা হলুদ, তুলসী পাতা, রসুন ও কচি নিমপাতা (প্রত্যেকটি ২৫ গ্রাম করে নিয়ে) হামান দিস্তায় পেস্ট বানিয়ে খাবারের সাথে সপ্তাহে একবার দিলে রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা প্রায় থাকবে না বললেই চলে।
মাছের ক্ষত রোগ নিয়ন্ত্রনে রসুনের ব্যবহার করা যায়। রসুনটি কার্যকর ভেষজ হিসাবে বিবেচিত হয়, কারণ এটিতে অ্যালিসিন নামক অ্যান্টিমাইকোবাইল যৌগ আছে যার ঔষুধি গুণ আছে। পুকুরে খাবার প্রয়োগের পূর্বে প্রতি ১০০ কেজি মাছের জন্য ১০ গ্রাম রসুন ৩ দিন পর পর প্রয়োগ করলে মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে। এপিজুটিক আলসারেটিভ সিন্ড্রোম বা মাছের ক্ষত রোগের জন্য ২ কেজি রসুন, ২ কেজি লবন, ২০ গ্রাম পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট ও ২০ গ্রাম কপার সালফেট (তুঁতে) ভাল করে ৩০-৫০ লিটার জলে মিশিয়ে ৩৩ ডেসিম্যাল (১বিঘা) পুকুরে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিলে উপকার পাওয়া যায়। এটা জানা গেছে যে রসুনকে, তুলসী এবং হলুদের সঙ্গে মিশিয়ে দিলে কাতলা মাছের ডিমপোনার রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ে।