কোলাঘাট, ডায়মন্ডহারবার, দিঘা, রায়দিঘির পর এ বার ফরাক্কা ব্যারেজে ইলিশ সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছে সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট(সি আই এফ আর আই)। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ গঙ্গার উজানে অর্থাৎ ফরাক্কায় গঙ্গার মূল চ্যানেলে ইলিশ যেখানে ডিম পাড়ে, সেই সব জায়গাকে সংরক্ষণ করা। এর জন্য প্রথমেই নিয়ন্ত্রণ করা হবে মৎস্য শিকারীদের, যারা ৫০০ গ্রামের কম ওজনের খোকা ইলিশ না ধরে। এই ভাবে ফরাক্কায় এক কেজির বেশি ওজনের ও সুস্বাদু ইলিশ ভাল সংখ্যায় মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে। যা এখন বিলুপ্তপ্রায়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, উজানের ইলিশই স্বাদে সেরা।
বছর |
মোট ধরা পড়া ইলিশের ওজন (টন) |
রপ্তানি করা ইলিশের ওজন (টন) |
২০১৪-১৫ |
১০৬৯২ |
৮০০ |
২০১৫-১৬ |
১৫১৩২ |
৬০০ |
২০১৬-১৭ |
১৭১৩২ |
১৭৪৮ |
২০১৭-১৮ |
২৯৩৫৯ |
১৮২০ |
২০১৮-১৯ |
১৪৭৩৩ |
১২৫ |
রাজ্যে কোলাঘাটের ইলিশকে এখনও উৎকৃষ্টতম বলে গণ্য করা হয়। বহু মৎস্য বিক্রেতা পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির মতো এলাকায় ধরা পড়া ইলিশকেও কোলাঘাটের ইলিশ বলে বিক্রি করেন, অথচ কোলাঘাটে ইলিশ ধরা পড়ে খুবই কম। দূষণ ও অন্যান্য কারণে কোলাঘাটের ইলিশ কমে গিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
ইতিমধ্যেই সি আই এফ আর আই বেশ কয়েকটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, ফরাক্কার পর থেকে গঙ্গার মূল ধারায় ইলিশের প্রজনন এখন প্রায় বন্ধ। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সমুদ্র থেকে ভাগীরথীতে ঢুকে ফরাক্কা টপকে গঙ্গার উজানে রুপোলি শস্য আর ঢুকতে পারছে না। যে টুকু বিক্ষিপ্ত ভাবে পাওয়া যাচ্ছে, তা পদ্মার ইলিশ। অথচ ফরাক্কা ব্যারেজ চালু হওয়ার আগে পর্যন্ত এলাহাবাদের কাছে এক মরসুমে গঙ্গায় ৪৮ টন পর্যন্ত ইলিশ ধরা পড়েছে। ২০০৮ সালে সেটাই দাঁড়ায় ০.৪ টন । এর প্রধান কারণ হিসেবে সি আই এফ আর আইয়ের গবেষকেরা ফরাক্কা ব্যারেজকেই তুলে ধরেছেন। সেই সঙ্গে নদীর উজানে ব্যাপক পলি, নদী দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং নির্বিচারে খোকা ইলিশ শিকারকেও ফরাক্কায় ইলিশের পরিমাণ কমার পিছনে দায়ী করা হয়েছে। সমুদ্রের নোনা জল থেকে ডিম পাড়তে নদীর মিষ্টি জলে ঢুকলে তবেই ইলিশের স্বাদ খোলে বলে সমঝদাররা মনে করেন। তাই ফরাক্কায় ইলিশ যে সব জায়গায় ডিম পাড়ে, সেই এলাকাগুলিকে সংরক্ষণ করে ইলিশ লালন-পালন করে গঙ্গায় ইলিশের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চালানো হবে।
- রুনা নাথ
Share your comments