এই 20টি ব্যবস্থা পোল্ট্রি খামারকে বার্ড ফ্লু থেকে নিরাপদ রাখবে! ভার্মি কম্পোস্ট ইউনিটের জন্য ৫০% পর্যন্ত ভর্তুকি পাওয়া যাবে, শীঘ্রই আবেদন করুন এই হাইব্রিড জাতের টমেটো 900 কুইন্টাল প্রতি হেক্টর ফলন দেবে দুধের সঠিক সময় বেছে নিলে উৎপাদন বাড়বে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
Updated on: 14 April, 2020 5:56 PM IST

ছাগল পশ্চিমবঙ্গের অতি গুরুত্বপূর্ণ পশু সম্পদ। ছাগল আমদের দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। উল্লেখ্য যে, এ রাজ্যের ছাগলের অধিকাংশই ব্ল্যাক বেঙ্গল প্রজাতির। বাংলার কালো ছাগল প্রজাতির নাম হলেও কালো রঙ ছাড়া বাদামী এবং সাদা রঙের প্রজাতির ছাগল কম সংখ্যায় দেখা যায়।

ছাগল পালনের সুবিধাদি –

  • ছোট প্রাণীর খোরাক তুলনামূলকভাবে অনেক কম, পালনের জন্য অল্প জায়গা লাগে এবং মূলধনও সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে থাকে
  • গবাদি পশুর তুলনায় ছাগলের রোগ বালাই কম।
  • তুলনামূলক কম সময়ে অধিক সংখ্যক বাচ্চা পাওয়া যায়। বছরে দু’বার বাচ্চা প্রসব করে এবং প্রতিবারে গড়ে ২-৩ টি বাচ্চা হয়ে থাকে
  • দেশে ও বিদেশে ব্ল্যাক ছাগলের চামড়া, মাংস ও দুধের বিপুল চাহিদা আছে
  • ছাগলের দুধ যক্ষ্মা ও হাঁপানি রোগ প্রতিরোধক হিসাবে জনশ্রুতি রয়েছে এবং এজন্য এদের দুধের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
  • ছাগল ভূমিহীন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীদের অতিরিক্ত আয়ের উৎস হিসাবে বিবাচিত হয়

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বৈশিষ্ট্য –

  • ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বক্ষস্থল চওড়া, কান কিছুটা উপরের দিকে ও শিং ছোট থেকে মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে। দেহের গড়ন আঁটসাঁট, পা অপেক্ষাকৃত খাটো এবং লোম মসৃণ হয়

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনের সুবিধা –

  • সাধারণত ১২-১৫ মাস বয়সে প্রথম বাচ্চা দেয়। একটি ছাগী বছরে দু’বার বাচ্চা প্রসব করলেও উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় একটি ছাগী থেকে ২-৮ টি পর্যন্ত বাচ্চা পাওয়া যেতে পারে
  • ২০ কেজি দৈহিক ওজন সম্পন্ন একটি ছাগী থেকে কমপক্ষে ১১ কেজি খাওয়ার যোগ্য মাংস এবং ১-.৪ কেজি ওজনের অতি উন্নতমানের চামড়া পাওয়া যায়। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের চামড়া একটি অতি মূল্যবান উপজাত।
  • সেমি-ইন্টেনসিভ পদ্ধতিতে ২৫ টি ছাগীর খামার থেকে প্রথম বছরে ৫০,০০০ টাকা, দ্বিতীয় বছরে ৭৫,০০০ টাকা এবং তৃতীয় বছরে ১,০০০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব

বাংলার কালো ছাগল ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিবেচ্য গুণাবলী –

পাঁঠার ক্ষেত্রে –

  • পাঁঠার বয়স ১২ মাসের মধ্যে হতে হবে, অণ্ডকোষের আকার বড় এবং সুগঠিত হতে হবে
  • পিছনের পা সুঠাম ও শক্তিশালী হতে হবে।
  • পাঁঠার মা, দাদী বা নানীর বিস্তারিত তথ্যাদি (অর্থাৎ তারা বছরে দুবার বাচ্চা দিত কিনা, প্রতিবারে একটির বেশীর বাচ্চা হত কিনা, দুধ উৎপাদনের পরিমাণ ইত্যাদি গুণাবলী) সন্তোষজনক বিবেচিত হলেই ক্রয়ের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে

ছাগীর ক্ষেত্রে –

  • নির্বাচিত ছাগী হবে অধিক উৎপাদনশীল বংশের ও আকারে বড়।
  • নয় বা বারো মাস বয়সের ছাগী (গর্ভবতী হলেও কোন সমস্যা নেই) কিনতে হবে
  • ছাগীর পেট তুলনামূলকভাবে বড়, পাঁজরের হাড় চওড়া, প্রসারিত ও দুই হাড়ের মাঝখানে কমপক্ষে এক আঙ্গুল ফাঁকা জায়গা থাকতে হবে
  • নির্বাচিত ছাগীর ওলান সুগঠিত ও বাঁট সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়াদি –

গ্রহণযোগ্য ছাগল অবশ্যই সকল ধরণের সংক্রামক ব্যাধি, চর্মরোগ, চক্ষুরোগ, যৌনরোগ ও বংশগত রোগমুক্ত হতে হবে। পিপিআর খুবই মারাত্মক রোগ হওয়ায় কোন এলাকা থেকে ছাগল সংগ্রহ করার আগে উক্ত এলাকায় পিপিআর রোগ ছিল কিনা, তা জানতে হবে। উক্ত এলাকা কমপক্ষে ৪ মাস আগে থেকে পিপিআর মুক্ত থাকলে তবেই সেখান থেকে ছাগল সংগ্রহ করা যেতে পারে।

জৈব নিরাপত্তা –

  • খামার এলাকার বেড়া বা নিরাপত্তা বেষ্টনী এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে, যাতে সেখানে অনাকাঙ্খিত ব্যক্তি, শেয়াল, কুকুর ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী প্রবেশ করতে না পারে
  • প্রবেশ পথে ফুটবাথ বা পা ধোয়ার জন্য ছোট চৌবাচ্চায় জীবাণুনাশক মিশ্রিত জল রাখতে হবে। খামারে প্রবেশের আগে গমনকারী তার জুতা/পা ডূবীয়ে জীবাণুমুক্ত করবেন
  • খামারের জন্য সংগৃহীত নতুন ছাগল সরাসরি খামারে পূর্বে বিদ্যমান ছাগলের সাথ্র রাখা যাবে না। নতুন আনিত ছাগলদের স্বতন্ত্র ঘরে সাময়িকভাবে পালনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ধরণের ঘরকে পৃথকীকরণ ঘরবা আইসোলেশন শেড বলে। অন্ততপক্ষে দু’ সপ্তাহ এই শেডে রাখা বিশেষ জরুরি। এসব ছাগলের জন্য প্রাথমিক কিছু চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • প্রথমে এদেরকে কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে। এজন্য বহিঃপরজীবী এবং আন্তঃপরজীবীর জন্য কার্যকর কৃমিনাশক প্রয়োগ করতে হবে। চর্মরোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি ছাগলকে ০.% ম্যালাথিয়ন দ্রবণে স্নান করাতে হবে
  • আইসোলেশন শেডে ছাগল রাখার পর ১৫ দিনের মধ্যে যদি কোন রোগ না দেখা দেয়, তাহলে প্রথমে পিপিআর রোগের ভ্যাকসিন এবং ৭ দিন পর গোটপক্সের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। শেষ টিকা প্রদানের ৭ দিন পর ছাগলগুলিকে মূল খামারে নেওয়া যেতে পারে।
  • প্রতিদিন সকাল এবং বিকালে ছাগলের ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে।

কোন ছাগল যদি অসুস্থ হয়, তাহলে তাকে আলাদা করে আইসোলেশন শেডে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কোন ছাগল মারা যায়, তবে অবশ্যই তার কারণ সনাক্ত করতে হবে। ল্যাবরেটরিতে রোগ নির্ণয়ের পর তদানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বিশেষ করে অন্যান্য ছাগলের জন্য নিতে হবে। মৃত ছাগলকে খামার থেকে দূরে নিয়ে মাটির গভীরে পুঁতে বা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। রোগাক্রান্ত ছাগলের ব্যবহার্য সকল সরঞ্জামাদি ও দ্রব্যাদি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

ছাগলের বাসগৃহ –

  • ছাগলের ঘর শুষ্ক, উঁচু, জল জমে না, এমন স্থানে স্থাপন করা উচিৎ। পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি, দক্ষিণ দিক খোলা এমনভাবে করতে হবে। এছাড়া জল নিষ্কাশনের জন্য উত্তম ব্যবস্থা আছে, এমন স্থানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ছাগল ঠাসাঠাসি অবস্থায় বাস করতে পছন্দ করে না। এরা মুক্ত আলো, বাতাস এবং পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন স্থানে থাকতে পছন্দ করে
  • এক জোড়া ছাগলের জন্য ৫ ফুট লম্বা, .৫ ফুট চওড়া এবং ৬ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট খোঁয়াড় প্রয়োজন। প্রতিটি পূর্ণ বয়স্ক ছাগলের জন্য গড়ে ১০-১৮ বর্গফুট এবং বাড়ন্ত বাচ্চার জন্য ৩-৮ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন। ছাগলের ঘর খড়, টিন বা ইঁট নির্মিত হতে পারে। তবে ঘরের ভিতর বাঁশ বা কাঠের মাচা প্রস্তুত করে তার ওপর ছাগল রাখা উচিৎ। মাচার উচ্চতা ১ মি. (.৩৩ ফুট) এবং মাচা থেকে ছাদের উচ্চতা ৬-৮ ফুট হবে। মল-মূত্র নিষ্কাশনের গোবর ও চনা সুবিধার্থে বাঁশের চটা বা কাঠের মাঝে ১ সেমি. ফাঁক রাখতে হবে
  • মাটির হলে সেখানে পর্যাপ্ত বালি দিতে হবে। বৃষ্টি যেন সরাসরি ঘরের ভিতর প্রবেশ না করতে পারে, সেজন্য ছাগলের ঘরের চালা ১-.৫ মি. (-.৫ ফুট) ঝুলিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। শীতকালে রাতের বেলায় মাচার উপরের দেওয়ালকে চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পাঁঠার জন্য অনুরূপ ভাবে পর্যাপ্ত আলো বাতাস ও মল-মূত্র নিষ্কাশনের উত্তম সুবিধাযুক্ত পৃথক খামার তৈরি করতে হবে। শীতকালে মাচার উপর ১.৫ ইঞ্চি পুরু খড় বিছিয়ে তার ওপর ছাগল রাখতে হবে। প্রতিদিন ভালোভাবে পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকিয়ে পুনরায় খড় বিছাতে হবে।

ছাগলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা –

একথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, মুক্ত ভাবে ছাগল প্রতিপালনের তুলনায় আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালন অনেক বেশী ঝুঁকিপূর্ণ। এ ব্যবস্থায় বৈজ্ঞানিক চিন্তা-ভাবনা ও প্রযুক্তির সমন্বয় না ঘটালে খামারীকে বিস্তর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য ছাগলের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য  ও স্বাস্থ্যের প্রতি খামারীকে স্বতন্ত্রভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। ছাগলের খামারে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই বিভিন্ন রোগ দমনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত নেওয়া জরুরি। তা না হলে খামার থেকে লাভের আশা করা যায় না।

  • খামারে ছাগল আনার পর থেকে প্রতিদিনই প্রতিটি ছাগলের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। প্রথম পাঁচ দিন সকাল ও বিকালে দু’বার থার্মোমিটার দিয়ে ছাগলের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। হঠাৎ কোন রোগ দেখা মাত্রই পশুচিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
  • তীব্র শীতের সময় ছাগী বা বাচ্চাদের গায়ে চট পেঁচিয়ে দেওয়া যেতে পারে। মাচার নিচ এবং ঘর প্রতিদিন সকালে পরিষ্কার করতে হবে এবং কর্মসূচী অনুযায়ী জীবাণুনাশের ব্যবস্থা নিতে হবে।

সুস্থ ছাগলের বৈশিষ্ট্য – সুস্থ ছাগলের নাড়ির স্পন্দন প্রতি মিনিটে ৭০-৯০ বার, শ্বাস-প্রশ্বাস প্রতি মিনিটে ২৫-৪০ বার এবং তাপমাত্রা ৩৯.৫ সেমি. হওয়া উচিৎ। সুস্থ ছাগল দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করে, মাথা সবসময় উঁচু থাকে, নাসারন্ধ্র থাকবে পরিষ্কার, চামড়া হবে কোমল এবং পশম মসৃণ ও চকচকে দেখাবে এবং পায়ু অঞ্চল থাকবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ছাগল সুস্থ রাখতে যে সকল ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা আবশ্যক, সেগুলির মধ্যে রয়েছে

  • কর্মসুচী অনুযায়ী টিকাপ্রদান – ভাইরাসজনিত রোগ যেমন পিপিআর, গোটপক্স, ক্ষুরা রোগ ইত্যাদি এবং ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ যেমনএনথ্রাক্স, ব্রুসেলোসিস ইত্যাদি খুবই মারাত্মক বলে এগুলির বিরুদ্ধে যথাযথ টিকা প্রদান করা আবশ্যিক। যে সকল ছাগীকে পূর্বে পিপিআর, গোটপক্স, একথাইমা, ব্রুসেলোসিস ইত্যাদি টিকা দেওয়া হয় নি, তাদেরকে গর্ভের পঞ্চম মাসে উক্ত ভ্যাকসিনগুলি দিতে হবে। বাচ্চার বয়স যখন ৫ মাস, তখন তাকে পিপিআর ভ্যাকসিন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দিতে হবে

কৃমিনাশক ঔষধ প্রয়োগ – সকল ছাগলকে নির্ধারিত মাত্রায় বছরে দুবার কৃমিনাশক ঔষধ প্রদান করতে হবে। কৃমিনাশক কর্মসূচী অনুসরণের জন্য পশু চিকিৎসকের ব্যবস্থা পত্র অনুযায়ী সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

খাদ্য ব্যবস্থাপনা –

  • ছাগলকে রাস্তার ধার, পুকুর পাড়, জমির আল, পতিত জমি বা পাহাড়ের ঢালে বেঁধে বা ছেড়ে ৮ - ৯ ঘণ্টা ঘাস খাওয়াতে পারলে খুব উপকার হবে। এ ধরণের সুযোগ না থাকলে প্রতি ২০ কেজি ওজনের ছাগলের জন্য দৈনিক ০.১ কেজি পরিমাণ কাঁঠাল, ইপিল, ঝিকা, বাবলা ইত্যাদি গাছের পাতা অথবা এদের মিশ্রণ দেওয়া যেতে পারে। প্রতিটি ছাগলকে দৈনিক ২৫০ - ৩০০ গ্রাম ঘরে প্রস্তুতকৃত দানাদার খাদ্য দেওয়া যেতে পারে
  • ১০ কেজি দানাদার খাদ্য মিশ্রণে যেসব উপাদান থাকা প্রয়োজন, তা হল- চাল ভাঙ্গা ৪ কেজি, ঢেঁকি ছাঁটা চালের কুঁড়া ৫ কেজি, খেসারি বা অন্য কোন ডালের ভুষি ৫০০ গ্রাম, মিনারেল মিক্সচার ২০০ গ্রাম এবং লবণ ৩০০ গ্রাম
  • ইউরিয়া দ্বারা প্রক্রিয়াজাত খড় ও সাইলেজ খাওয়ালে ভালো হয়। কারণ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে আমিষের পরিমাণ বেশী থাকে এবং পরিপাকও ভালোভাবে হয়। জন্মের পর থেকেই ছাগল ছানাকে আঁশজাতীয় খাদ্য যেমন কাঁচা ঘাস ইত্যাদিতে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
  • দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর পর ছাগলকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিষ্কার জল খেতে দিতে হবে। বাড়ন্ত ছাগলকে দৈনিক প্রায় ১ লিটারের মতো জল পান করানো উচিৎ।
  • কাঁচা ঘাস কম বা এর অভাব ঘটলে ছাগলকে ইউরিয়া - চিটা গুড় মেশানো খড় নিম্নোক্ত প্রণালীতে বানিয়ে খাওয়াতে হবে

উপকরণ – ৩ ইঞ্চি মাপের কাটা খড় ১ কেজি, চিটা গুড় ২২০ গ্রাম, ইউরিয়া ৩০ গ্রাম ও জল ৬০০ গ্রাম। এবার জলেতে ইউরিয়া গুলে, তাতে চিটা গুড় দিয়ে খড়ের সাথে মিশিয়ে সরাসরি ছাগলকে দিতে হবে। খাসীর ক্ষেত্রে ৩ - ৪ মাস বয়সে দুধ ছাড়ানোর পর, নিয়মিত সঠিকভাবে এই প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাওয়ালে দৈনিক ৬০ গ্রাম করে দৈহিক ওজন বাড়ে ও এক বছরের মধ্যে ১৮২২ কেজি ওজনপ্রাপ্ত হয়ে যায়। খাসীকে দৈহিক ওজনের ওপর ভিত্তি করে মোট ওজনের ৭ শতাংশ পর্যন্ত পাতা বা ঘাস জাতীয় খাদ্য, দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ (চাল ভাঙ্গা ৪০ শতাংশ, কুঁড়া ৫০ শতাংশ, ডালের ভুষি ৫ শতাংশ, লবণ ৩ শতাংশ এবং মিনারেল মিক্সচার ২ শতাংশ) ২০ কেজির বেশী হয়ে গেলে এদের দেহে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই এ সময় এদেরকে বাজারজাত কড়া উচিত। ছাগল খামারের খাদ্য খরচ মোট খরচের ৬০ – ৭০ শতাংশ হওয়া আবশ্যক। বাণিজ্যিক খামারের লাভ-লোকসান তাই খাদ্য ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল

অন্যান্য ব্যাবস্থাপনা –

  • সঠিক অনুপাতে (১০ টি ছাগীর জন্য একটি পাঁঠা) ছাগী ও পাঁঠা পালন করতে হবে। পাঁঠা এবং ছাগীকে কখনও একত্রে খাদ্য ক্ষেতে ও মাঠে চড়ানো যাবে না, কারণ পাঁঠা ছাগীকে খাদ্য খেতে অসুবিধার সৃষ্টি করে এবং অনেক সময় মারামারি করে ক্ষতের সৃষ্টি করে থাকে
  • প্রজননক্ষম পাঁঠা, ছাগীকে নিয়মিত (বছরে ৫৬ বার) .৫ শতাংশ মেলাথিয়ন দ্রবণে চুবিয়ে বহিঃপরজীবী থেকে মুক্ত রাখতে হবে। বাচ্চার ক্ষেত্রে যাতে উক্ত দ্রবণ নাকে বা কানে যেন প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গর্ভের প্রথম মাসে ১ - .৫ মিলি. ভিটামিন এ.ডি.ই এবং গর্ভের শেষ দুই সপ্তাহে ১.৫ মিলি. ৪৮ ঘণ্টা পর ইনজেকশন দিতে হবে
  • প্রসবের লক্ষণ দেখা দিলে ছাগীর পিছনের অংশ ও ওলান পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট-এর ০.১ শতাংশ দ্রবণ দিয়ে ধুয়ে মুছে দিতে হবে। বাচ্চা প্রসবের পর জীবাণুমুক্ত সার্জিকাল ব্লেড দ্বারা নাভি ২ – ৩ সেমি. রেখে বাকি অংশ কেটে দিতে হবে। এ সময় ছাগীর জরায়ুতে যাতে ইনফেকশন না হয়, সেজন্য পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে
  • প্রসবের ২৪ ঘণ্টা পরও ফুল বা প্লাসেন্টা না পড়লে অক্সিটোসিন (মাত্র ১২ মিলি/১০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য) ইনজেকশন দিতে হবে
  • বাচ্চার বয়স যখন ৩ – ৫ সপ্তাহ তখন, তার বিশৃঙ্গীকরণ করতে হবে। বাচ্চার বয়স ২ – ৪ সপ্তাহ হলে তখন তাকে খাসী করানো উচিৎ। খাসী করতে হলে বারডিজো সাঁড়াশি ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে প্রাণী বন্ধু বা পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ছাগলের টিকা প্রদানের কর্মসূচী –

রোগের নাম

বয়স

মাত্রা ও পদ্ধতি

তড়কা

৬ মাস

বছরে একবার, বর্ষার আগে

২.৫ মিলি. চামড়ার নীচে

গলা ফোলা ও বজবজে

(H.S + B.Q)

৬ মাস

বছরে একবার, বর্ষার আগে

২.৫ মিলি. চামড়ার নীচে

পিপিআর

৩ মাস বয়সে

পরে বছরে একবার

১ মিলি. চামড়ার নীচে

গোটপক্স বা ছাগবসন্ত

৩ মাস বয়সে

পরে বছরে একবার

চামড়ায় ঘষে দেওয়া হয়

ক্ষুরাই বা এফ.এম.ডি

৪ মাস বয়সে

পরে বছরে দুবার করে

১ মিলি. চামড়ার নীচে

 

প্রবন্ধ লেখক - ড. মানস কুমার দাস (বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ (কেভিকে, জলপাইগুড়ি)

স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)

English Summary: Farmer can earn upto 1 lakh by farming black bengal goat
Published on: 14 April 2020, 05:54 IST