প্রাণিসম্পদ প্রজাতির মধ্যে মহিষের নিজস্ব গুরুত্ব ও স্থান রয়েছে কারণ এটি ভারতের মোট দুধ উৎপাদনের প্রায় ৫০ শতাংশ এবং দেশে মাংস রফতানি ও উত্পাদনে বড় অবদান রাখে। ভারতে মহিষের পালন (Buffalo Rearing) ঐতিহ্যগতভাবে তিনটি প্রধান উদ্দেশ্যে যেমন দুগ্ধ, মাংস এবং গাড়ীর ভার বহনের জন্য প্রচলিত।
আমাদের দেশে দুগ্ধ ব্যবসা একটি অন্যতম জনপ্রিয় ব্যবসা। এই দুগ্ধ শিল্পের মাধ্যমে অনেকেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। দুগ্ধ একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য । গবাদিপশু যেমন গরু, মহিষ ইত্যাদি প্রাণীর দুগ্ধ আমরা পান করে থাকি। কৃষকেরা যদি বেশী পরিমাণ দুগ্ধ উৎপাদন করেন, তাহলে তাঁরা সেই দুগ্ধ বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।
আজ আমরা আপনাদের মুররা প্রজাতির মহিষ পালন সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতে চলেছি। চলুন জেনে নেওয়া যাক, এই প্রজাতির মহিষের মূল্য, দুগ্ধ উৎপাদন ক্ষমতা এবং পালন পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে।
মুররা জাতের মহিষ (Murra Breed Buffalo) -
মুররা জাতের মহিষ ভারতে খুব জনপ্রিয়। এর দুগ্ধ উৎপাদনের পরিমাণ অনেক। এটি ভারতের সমস্ত অঞ্চলে পাওয়া যায়। ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশের কৃষকরাও এই জাতের মহিষ খুব পছন্দ করেন। হরিয়ানা ও রোহটাক, হিসার, জিন্ড ও কর্ণাল জেলা এবং দিল্লি ও পাঞ্জাবে এই প্রজাতির বেশী পালন করা হয়। এছাড়া মুম্বাইয়ের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে প্রায় ১ লক্ষ মুররা জাতের মহিষ পালন করা হয়। এই মহিষের সাহায্যে, প্রতিদিন ১০-২০ লিটার দুগ্ধ উৎপাদন সম্ভব।
উল্লেখ্য যে, ইতালি, বুলগেরিয়া এবং মিশরেও এই জাতের পালন করা হয়।
এই জাতের মহিষের প্রধান বৈশিষ্ট্য হ'ল -
-
গাঢ় কৃষ্ণ বর্ণের হয়
-
ছোট বাঁকানো শিং
-
লেজের নীচের অংশে সাদা দাগ থাকে
হরিয়ানায় একে 'কালো সোনা'-ও বলা হয়। ফ্যাটযুক্ত দুধ উৎপাদনের জন্য মুররা সেরা জাত। এর দুধে ৭% ফ্যাট পাওয়া যায়। মুরা মহিষের গর্ভকালীন সময়কাল ৩১০ দিন থাকে, এরপর অয়নটি বিকাশ লাভ করে এবং দুধের শিরা বের হয়।
মুরার মহিষের দাম –
এই প্রজাতির মহিষের দাম প্রায় ৪০-৮০ হাজারের মধ্যে হয়ে থাকে। দাম ভারতের বিভিন্ন অংশে পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
মহিষ পালনের উপযোগী স্থান –
মহিষ যেখানে পালন করবেন, খেয়াল রাখবেন সেই স্থানটি যেন সর্বদা পরিষ্কার থাকে। মনে রাখবেন যে, ঠান্ডা, প্রখর তাপ, বৃষ্টি ইত্যাদিতে যেন তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জায়গাটিতে কোন অসুবিধা না হয়। স্থানটির মেঝে যদি পাকা না হয় ক্ষতি নেই, কিন্তু নিশ্চিত হয়ে নিন মেঝে যেন পিচ্ছিল না হয়। অর্থাৎ সর্বদা খেয়াল রাখবেন, ঘরটি যেন কোনমতেই স্যাঁতসেঁতে না হয়, সেখানে বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
খাদ্য ও পানীয় -
প্রাণীদের সবসময় পানের জন্য পরিষ্কার জল দিন। তাদের বিশ্রাম করতে দিন, এটি খুবই জরুরি। প্রাণীরা যদি পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পায়, তবে তাদের দুধের উত্পাদন ক্ষমতা হ্রাস পাবে। অধিক পরিমাণ দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য খাদ্যেও ভারসাম্য থাকা জরুরি। খাদ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ শস্য রাখা জরুরি, সরিষার খোল ছাড়াও, চিনাবাদামের খোল, বা তুলোবীজের খোল ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন - মুররা প্রজাতির মহিষ পালনে কৃষক হবেন দ্বিগুণ লাভবান (Murrah Breed Buffalo)