পুকুর বা অনুরুপ কোনো জলাশয়ে যেখানে মাছ বাঁচবে এবং বাড়বে-অর্খাৎ জলজ পরিবেশ উদ্ভিদ ও প্রাণীর পক্ষে অনুকূল হবে সেখানে প্রথমেই নিশ্চিত করা হয় যে দ্রবীভূত অক্সিজেন জলে সারা দিনমানে যথেষ্ট থাকে এবং উদ্ভিদ কণা ও প্রানীকণা যা জলজ প্রানীর প্রাথমিক খাবার হিসাবে অন্যতম পরিগনিত হয় তাদের উপস্থিতি ও ভারসাম্য যেন ততই বজায় থাকে। এই প্রাকৃতিক খাদ্য সম্ভারের মাত্রা বাজায় রাখতে সহায়তা করে বিভিন্ন ধরনের সার আর তাই সেই সার সঠিক মাত্রায় ও পরিমানে প্রয়োগ অতি জরুরী সার মূলত দুধরনের-যেমন জৈব এবং অজৈব।কৃষিকাজে অজৈব সার বলতে আমরা জানি-এন,পি.কে, জলকৃষি বা মাছ চাষে কে অর্থাৎ পটাসিয়াম তেমন গুরুত্বপূর্ন না হলেও এন এবং পি-এর প্রয়োজন মূলত নাইট্রোজেন বা এন লাগবেই মাছ চাষের শুরুর ঠিক আগেই (পুকুর প্রস্তুতির সময়ে) নাইট্রোজেন সার লাগবেই-তা সে যত কম পরিমানেই হোক না কেন। আজকাল ইউরিয়া নিমের আস্তরনেই পাওয়া যায় যা কিছুটা ধীরে লয়ে দ্রবীভূত হয় এবং অনেকটা সময় ধরে জলে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে। এর ফলে উদ্ভিদকনা বেঁচে থাকার রসদ পায় সূর্য্য কিরনের উপস্থিতিতে।
ইউরিয়া প্রয়োগের সাথে মাঝেমাঝে ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট বা ডি.এ.পি ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে এবং সেটিকে আগের দিন রাত্রে জলে ভিজিয়ে রেখে প্রয়োগ করা হয় সচরাচর রৌদ্রজ্বল দিনে। এগুলি উদ্ভিদকনা বা অনুশৈবাল তৈরীতে সহায়ক হয়। এই উদ্ভিদকনা খেয়ে বেঁচে থাকে বিভিন্ন প্রানীকনা বা zooplankton এই প্রানীকনাই হলো সমস্ত ডিমপোনার প্রিয় খাদ্য আর তার প্রথম সোপান-ই ইলো জৈব সার প্রয়োগ। যেহেতু প্রানীকনা মূলত, উদ্ভিদ কনা খেয়েই বেঁচে থাকে তাই জৈব সার সত্যই অজৈব সারের পরে প্রয়োগ করা হয়।
সরনীতে বেশ কিছু প্রচলিত জৈব সারের উল্লেখ করা হলো। এবং সেই সঙ্গে দেওয়া হলো নাইট্রোজেন ,ফসফরাস ও পটাসিয়ামের শতকরা পরিমান। জৈব সার প্রয়োগের আগে তাকে কিছুটা পচিয়ে নেওয়া দরকার নতুন জলের পিএইচ কিচুটা কম হয়ে যেতে পারে এবং পিএইচ কে ৭.৫-এর কাছাকাছি আনতে আবার চুন প্রয়োগ জরুরী হতে পারে। পুকুরে উদ্ভিদ কনা ও প্রানীকনার পরিমান সঠিক মাত্রায়
(ছবিতে দেখানো ছন্দের মতো) থাকলে,জলের রং ঠিক দেখালে জৈব সার দেওয়ার প্রয়োজন নাও হতে পারে। একান্ত দরকার বোধ হলে জৈব জুস প্রয়োগ করা যেতে পারে। জৈব জুস তৈরী করতে লাগবে সর্ষের খোল,বাদাম খোল,কুচোনো বিভিন্ন শাক-সব্জী,জলজ ফার্ন- অ্যাজোলা,সামান্য চালের কুঁড়া,গোবর,ঝোলা গুড় / চিটে গুড়,মাছ ধোয়া জল, কিছুটা লবন-এগুলি পুকুর পাড়ের কাছাকাছি মাটি খুঁড়ে জমা করা হয় এবং রোজ ছোট একটি লাঠি বা দন্ডের সাহায্যে নাড়া চাড়া করে মিশিয়ে দিতে হয়- চার পাঁচ দিনেই এই সমগ্র মিশ্রনটি জৈব সার হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে কিংবা সেখান থেকে খানিকটা তুলে নিয়ে বালতিতে রাখা জলে গুলে দেওয়া হয় এবং খানিকক্ষন অপেক্ষা করে ওপরের তরল অংশটি স্যালাইন বোতল কিংবা প্লাস্টিক বোতলে রেখে ধীর লয়ে বিন্দু বিন্দু করে সারাদিন ধরে পুকুরের জলে মেশানো হয়।
সূর্য কিরনের সহায়তায় তা প্রানীকনা তৈরীতে সহায়ক হয়ে ওঠে। এছাড়া জৈব সারের মধ্যে প্রচলিত ভাবে সবুজ সার যা তৈরী হয় শিম্ব গোত্রীয় ফসল যেমন বরবটি,ও এমনকি পাট ,শন গাছের চাষ করে লাঙল দিয় সেসব পুকুরের মাটিতে মেশানো হয় যাতে পর্যাপ্ত নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ হয় মাটি। এছাড়া ভার্মিকম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরী করা হয় কাঁচা গোবরের সাথে বিভিন্ন ঘাস-পাতা-খড়-লতাপাতা ও রান্নাঘরের সবুজ বর্জ্য মিশিয়ে ব্যবহার করার চল বেশী কিছুদিন ধরে শুরু হয়েছে। নির্দোষ এই সার নিজের খামারে বানিয়ে দিয়ে মাছ চাষ করছেন অনেক মাছ চাষী কেবল জৈব সার প্রয়োগে জল কিছুটা আম্লিক হতে পারে তাই মনে রাখতে হবে জৈব সার প্রয়োগের পর চুন ব্যবহার (সর্বচ্চ কাঠা কিছু এক কেজি হিসাবে)বিশেষ প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ কম খরচে বেশি লাভের জন্য বেছে নিন বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ৭টি গরুর জাত
জলের পিএইচ,স্বচ্ছতা ও দ্রবীভুত অক্সিজেনের মাত্রা প্রত্যেক সপ্তাহে একবার দেখে নিয়ে তাদের মানগুলি সুস্থিত থাকছে কিনা জেনে নেওয়া বাধ্যতামূলক একটি কাজ। জৈব সারের মধ্যে মহুয়া খোলের প্রয়োগ আজকাল কিছুটা কম দেখি। হয়ত বা দাম একটি চিন্তার কারন- বিভিন্ন জলজ জৈব সম্পদ- তা সে গুঁড়ি পানা অ্যাজোলা জলজ ঝাঁঝি ইত্যাদির প্রসার হোক জৈব সার প্রস্তুতিতে-এতে ফলনের উপকার হবে – চাষের খরচ কিছুটা হলেও কমবে ও সেইসাথে জলজ পরিবেশের ভারসাম্য বা মূলত জৈব কার্বন ও নাইট্রোজেনের ভারসাম্য বজায় থাকবে ফলে প্রাথমিক উৎপাদনশীলতা খুব ভালোভাবে বজায় রাখা সম্ভব হবে। এবং ভবিষ্যতে জৈব চাষের ব্যপক প্রসার সম্ভবপর হবে তবে সার যাই হোক কিছু রাসায়নিকের পর – মূলত সোডিয়াম ক্লোরাইড পটাসিয়াম ক্লোরাইড এর মত কিছু একান্ত জরুরী যৌগ ও সর্বোপরি রাসায়নিক বিক্রিয়া উৎপন্ন সিলিন্ডার-জাত অক্সিজেন ব্যতিরেকে আমাদের পক্ষে যে চাষ সম্ভব নয় সেকথা মনে রেখে জৈব চাষে আধুনিকীকরন হোক এবং তা সমাদৃত হোক সর্বত্র।