ছাগল আমদের দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের এক অন্যতম প্রধান উৎস। ছাগল পশ্চিমবঙ্গের অতি গুরুত্বপূর্ণ পশু সম্পদ।এর ফলে বহু কৃষক থেকে যুবক তাদের রোজগারের নয়া পন্থা তৈরি হয়েছে। বাড়াতি আয়ের সন্ধানে তাই অনেকেই এখন ছাগল পালনের দিকে ঝুঁকছেন।কিন্তু ছাগল পালনের সঠিক পদ্ধতি না জানলে কিন্তু ক্ষতির সম্ভবনাও থেকে যায়।তাই আজ এই প্রতিবেদনে আমরা ছাগলের প্রজনন,গর্ভবতী ছাগল এবং তার বাচ্চার পরিচর্যা সম্পর্কে আলোচনা করব।
ছাগলের প্রজনন ব্যবস্থাপনা
-
প্রজননের জন্য ছাগলের বয়স ৭-৮ মাস এবং ওজন ১২-১৩ কেজি হওয়া প্রয়োজন।
-
প্রজননের সময় কম বয়সের ছাগলের সঙ্গে কম বয়সের ছাগলের সঙ্গে সঙ্গম করানো ঠিক নয়। তাহলে ছাগলের বাচ্চার মৃত্যুর হার বেশী হবে।
-
ছাগল সাধারণত সঙ্গম করার ১৪২-১৫৮ দিনের মধ্যে বাচ্চা দেয়।
দারিদ্র বিমোচনে ছাগল পালনের ভুমিকা
-
পশ্চিমবঙ্গে ছাগল পালন লাভজনক, বিশেষ করে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল।
-
এদের বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা অধিক এবং দেশীয় জলবায়ুতে বিশেষভাবে উৎপাদন উপযোগী।
-
এ দেশে প্রাপ্ত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল দ্রুত প্রজননশীল। প্রতি বছর এরা দু'বার করে বাচ্চা দেয় এবং প্রতিবারে সাধারণত দু'টি করে বাচ্চা দেয়।
-
দ্রুত প্রজননশীলতা, উন্নত মাংশ ও চামড়ার জন্য ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
-
ছাগলের দুধ সহজে হজম হয় এবং যক্ষা রোগের জীবানু মুক্ত। তা ছাড়া হাঁপানি রোগের ঔষধ হিসাবে ছাগলের দুধ বিবেচিত হয়।
আরও পড়ুনঃ গরুপালনে প্রয়োজন সঠিক উপায়ে স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান নির্মান ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা
দুগ্ধবতী ও গর্ভবতী ছাগীর পরিচর্যা
-
দুগ্ধবতী ছাগল তার ওজনের ৫-৬ শতাংশ হারে শুষ্ক পদার্থ খেয়ে থাকে।
-
একটি তিন বছর বয়স্ক ২য় বার বাচ্চা দেয়া ছাগীর গড় ওজন ৩০ কেজি হারে দৈনিক ১.৫-১.৮ কেজি শুষ্ক পদার্থ খেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ১-১.৫ কেজি পরিমান শুভ পদার্থ ঘাস থেকে (৩-৫ কেজি কাঁচা ঘাস) বাকি ০.৫-০.৮ কেজি শুষ্ক পদার্থ দানাদার খাদ্য থেকে দেয়া উচিত।
-
একটি গর্ভবর্তী/দুগ্ধবতী ছাগলকে প্রতিদিন ২৫০-৪০০ মি.লি টাটকা ভাতের মাড় দিতে হবে। তবে ভাতের মাড় বাসি হলে ছাগলের পেট খারাপ করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ দ্বিগুন লাভ,শুধু বেছে নিতে হবে এই তিনটি বিশেষ জাত
নবজাত ছাগলের বাচ্চার পরিচর্যা
-
প্রসবের পর পরই নবজাত বাচ্চার মুখমণ্ডল হতে পিচ্ছিল জাতীয় পদার্থ বা ময়লা পরিষ্কারকরণ।
-
পায়ের ক্ষুর ও নাভী কাটার পর সেখানে জীবানু নাশক ঔষধ দিয়ে মুছে দেয়া।
-
বাচ্চাকে মায়ের সামনে রাখতে হবে, যাতে মা সহজে বাচ্চাকে চেটে পরিষ্কার রাখতে পারে।
-
নবজাত ছাগলের বাচ্চাকে দ্রুত (জন্মানোর আধ ঘন্টার মধ্যে) শাল দুধ খাওয়াতে হবে।
-
ছাগলের বাচ্চা ঠান্ডায় কাতর, সে জন্য বাচ্চার শীত নিবারণের ব্যবস্থা করতে হবে।
-
ডায়রিয়া বাচ্চা মৃত্যুর অন্যতম কারণ। এজন্য বাচ্চাকে সব সময় পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখতে হবে।
-
একটি দেড় কেজি ওজনের বাচ্চাকে প্রথম মাসে গড়ে দৈনিক ২০০-৩০০ মি.লি, দ্বিতীয় মাসে ৩০০-৪০০মি.লি এবং তৃতীয় মাসে ৪৫০-৬০০ মি.লি দুধের প্রয়োজন, তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন বাচ্চা অতিরিক্ত দুধ না খায়, তাহলে পেট খারাপ করতে পারে।
-
বাচ্চার সংখ্যা বেশী হলে এবং চাহিদার তুলনায় কম দুধ থাকলে প্রয়োজনে অন্য ছাগী থেকে দুধ খাওয়াতে হবে।