দুগ্ধবতী গাভির বাসস্থান শুধু থাকার জন্য নয় উপরস্তু গাভীটির দোহন, খাদ্যগ্রহন ও তাকে পরিচ্ছন্ন রাখারও স্থান। তাই গাভির ঘরের চারিপাশ ও চরার জায়গাগুলি ভালভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং সকল প্রকার পোকামাকড় ও দূষণ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। খামারের নিকাশি ব্যবস্থাও ভালো থাকতে হবে।
গাভীর বাসস্থান (Cow Habitat) -
-
গাভির কোন রকম স্বভাবগত বা শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করার জন্য ঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। গাভির ঘরের অভিমুখ হবে উত্তর-দক্ষিণমুখী, এতে ঠান্ডা বা গরমের থেকে প্রাণীটি রক্ষা পাবে।
-
গরমের সময় প্রাণীটিকে কাঁচা মাটির মেঝে বা বালির মেঝেতে রাখলে প্রাণীটি আরাম পায়।
-
গরমকালে দুগ্ধবতী গাভির উৎপাদন সঠিক রাখার জন্য এবং তাকে গরমের থেকে রক্ষা
-
করার জন্য ঠান্ডা জলের ছিটে দিতে হবে বা বস্তা জলে ভিজিয়ে গরুর গায়ে দিতে হবে।
-
শীতের সময় গাভির ঘরে শুকনো খড় বা পোয়াল বিছিয়ে দিতে হবে যাতে পালান ও শরীর দুটিই ঠান্ডার থেকে রক্ষা পায়।
মোষ পালনের ক্ষেত্রে (In Case Of Buffalo Rearing) -
-
মোষ পালনের ক্ষেত্রে কাছাকাছি জলাশয় বা বড় চৌবাচ্চা রাখতে হবে যেখানে গ্রীষ্মকালে ডুব দিয়ে তারা গরমের থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে এবং নিজের প্রজনন ও দুধ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে পারে।
-
ম্যাসটাইটিস, গলাফোলা, ক্ষুরাই ইত্যাদি রোগের কারনে দুধ উৎপাদন খুব বেশি ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই সঠিক সময়ে বিভিন্ন রোগের টিকাকরন করানো বা কৃমির ঔষধ খাওয়ানো উচিৎ যার ফলে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
দুগ্ধবতী গাভির পুষ্টি -
-
দুগ্ধকালীন অবস্থায় প্রথম তিনমাস দুগ্ধবর্তী গাভিকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমান শক্তিপ্রদানকারী খাবার খাওয়াতে হবে, কারণ এই সময় কম পরিমাণ খাবার খাওয়ালে দুধের উৎপাদন এবং দুধ দেওয়ার সময় হ্রাস পায়।
-
গরমের সময় গরুটির জন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ত পরিমান খাবার ২-৩ বারে ভাগ করে খাওয়ালে দুধ উৎপাদনের পরিমান বৃদ্ধি পায়।
-
গরমের সময় অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ খাওয়ার জলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। খাওয়ার জল অবশ্যই পরিস্কার ও নোংরামুক্ত রাখতে হবে।
-
দুধ উৎপাদন শুরুর ৪ মাসের থেকে গাভিকে তার চাহিদা অনুযায়ী সবুজ বা শুকনো গোখাদ্য এবং দানাখাদ্য খাওয়াতে হবে।
-
একটি ২৫০-৩০০ কেজির গরু যে প্রতিদিন ৮-১০ কেজি দুধ দেয় তাকে ১৫-২০ কেজি সবুজ গোখাদ্য, ১-২ কেজি দানাখাদ্য এবং ২-৩ কেজি শুকনো গোখাদ্য (খড় বা পোয়াল) খাওয়াতে হবে। এর সাথে সাথে খনিজ লবনের মিশ্রণ খাওয়ালে গরুটির স্বাস্থ্যও ভালো থাকে ও দুধের পরিমাণও বাড়ে।
-
গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরম ও আর্দ্রতায় গরুর খাবারে তন্তুজাতীয় খাদ্যের পরিমাণ কম দিতে হবে, কারণ এইধরনের খাবার হজমের সময় তাপ উৎপাদিত হয় যা গরুটির অস্বস্তি বাড়িয়ে তোলে ও দুধ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে।
শীতের সময় লুসার্ন বা বারসীম (বরবটি জাতীয়) গোখাদ্য যথেষ্ট পরিমাণে খাওয়াতে হবে, যাতে গরুটি গরম থাকে এবং কম পরিমাণ দুধ উৎপাদন থেকে রক্ষা করা যায়।
আরও পড়ুন - আধুনিক মাছ চাষে মাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োগ করুন ভাসা খাবার (Modern Fish Farming)