আমাদের দেশে প্রাচীনকাল থেকেই ঘরে ঘরে নানাবিধ গবাদি পশু পাখির পালন হয়ে আসছে। গরু-মহিষ পালনের সঙ্গে সঙ্গে দেশে বহুদিন ধরে মুরগিও অতি জনপ্রিয় ডিম উৎপাদক পোষ্য। ডিম এবং মাংসের জন্য মুরগি পালন বা হার্টের অন্যতম এক প্রধান ব্যবসা। অর্থনৈতিক দিক থেকেও মুরগি পালন অত্যন্ত লাভের এক ব্যবসা। গ্রামে-গঞ্জে একচেটিয়া ভাবে এখনও মুরগি পালন হয়ে আসছে। আমাদের বাংলাতে বহু ঘরে এখনও মুরগি পালন হয়।
মুরগি পালন পদ্ধতি: (Hen Breeding)
মুরগি পালন পরিবারের অর্থনৈতিক আয় বাড়াতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুরগির পালন-শুনতে অত্যন্ত সহজ মনে হলেও, এই পালন অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে করতে হয়। মুরগি পালন করে লাভ করতে হলে, সবচেয়ে যেই বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে তা হল, চাষের পেছনে সময় দান এবং ধৈর্য্য।
মুরগি পালন করতে হলে একসঙ্গে ১০ থেকে ১২ টি মুরগিকে করতে হবে। এর থেকে বেশি মুরগি পালনের জন্য ব্যবহার উচিত নয়।
মুরগির যাতে কৃমি না হয় তার জন্য কৃমিনাশক ওষুধ দেওয়া উচিত। মুরগির উকুন হলে তা নিকাশ করতে হবে। প্রত্যেক মুরগিকে রোজ নিয়ম করে ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম ভালো মানের খাবার দিতে হবে।
সবসময় লক্ষ্য রাখা উচিত মুরগি ঘর তৈরির সময় সেখানে যেন যথেষ্ট আলো এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকে। শান্ত পরিবেশের মুরগির ঘর বানাতে হবে। ঘর বানানোর ঘরের মেঝেতে ইট দিতে হবে। তাহলে ঘরটি দীর্ঘস্থায়ী হবে।
মুরগি পালন মূলত দুই ভাবে করা হয়: (Hen Breeding Parts)
১) বাচ্চা মুরগি পালন ২) বয়স্ক মুরগি পালন
বাচ্চা মুরগি পালনকে আবার দুই ভাবে ভাগ করা যায়
ক) ব্রুডিং পর্ব খ) গ্রোয়িং পর্ব
ক) ব্রুডিং পর্ব : ব্রুডিং পর্ব একটি মুরগির বাচ্চার জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্বে মুরগির বাচ্চার ঠিকঠাক যত্ন করলে পরবর্তীতে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মোটামুটি এই পর্ব একমাস স্থায়ী হয়।
খ) গ্রোয়িং বা বৃদ্ধি পর্ব : মুরগির এই বৃদ্ধি পর্বে ঠিকঠাক যত্ন নেওয়া ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্বে এদের বৃদ্ধি ও পরবর্তীকালের উৎপাদন অনেকটা নির্ভর করে। মোটামুটি এই পর্ব ৩০ থেকে ৭০ দিন জারি থাকে।
প্রাপ্তবয়স্ক মুরগির পালন:
অল্প জায়গায় মুরগি পালন করতে হলে এই উপায় সবথেকে ভালো। ৭০ থেকে ১.৫ বছর অবধি এই পর্বের সময়সীমা থাকে।
মা মুরগিকে গরম আবহাওয়ায় ৩-৪ দিনের এবং শীতকালে ১০ -১২ দিনের জন্য শিশুর সাথে থাকতে দেওয়া উচিত। মুরগি এরপরে নিজেই বাচ্চাকে ওম দেবে। এটির জন্য কৃত্রিম কোনও সাহায্যের দরকার পড়বে না। মা মুরগিকে এই সময় সুষম খাবার খেতে দেওয়া উচিত। মা মুরগির সঙ্গে মুরগি ছানাকে একসঙ্গে খেতে দেওয়া উচিত তাহলে ছানাগুলো মায়ের সঙ্গে খোয়া শিখে ফেলবে।
নির্দিষ্ট সময়ের পর মুরগীকে মুরগির বাচ্চা থেকে আলাদা করে নিতে হবে। এই অবস্থায় শিশুকে কৃত্রিম ব্রুডিং এবং খাবার দেওয়া উচিত। তার পর থেকে শিশু লালন-পালনের ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। মা মুরগিকে আলাদা ভাবে খাওয়ার দেওয়া সবসময় উচিত।
মুরগী এবং ছানাগুলিকে এমন ভাবে আলাদা করতে হবে যাতে তারা একে অন্যের চোখের নজর থেকে আলাদা থাকে। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে মুরগি ছানার আওয়াজও মা মুরগি শুনতে না পারে।
আরও পড়ুন: Brinjal Farming: বেগুন চাষ পদ্ধতি ও বর্ষায় রোগবালাইয়ের প্রতিকার
প্রয়োজনীয় খাদ্য (Food)
মুরগি অনুযায়ী প্রত্যেককে ৮০ থেকে ৯০ গ্রাম সুষম খাবার এইসময় দিতে হবে। একই সঙ্গে মুরগিকে বেশ কিছুক্ষণ বাইরে ছেড়ে রাখতে হবে। যাতে সে চড়তে পারে। কৃমির ওষুধ প্রতি ৩ থেকে ৪ মাস এবং প্রতি ৪ থেকে ৫ মাস পরপর মনে করে দিতে হবে। কম করে একটি মুরগি ডিম দিতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় নেয়। ২১ দিন সময় লাগে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে। পূর্ণাঙ্গ মুরগি হতে একটি মুরগি বাচ্চার সময় লাগে কম করে ১২০ থেকে ১৫০ দিন।
মুরগির পরিচর্যা: (Caring)
১) মুরগি পালতে গেলে নিয়মিত ভাবে বর্জ্য পরিষ্কার করতে হবে
২) মুরগিকে অতিরিক্ত খাবার কখনোই দেওয়া উচিত নয়
৩) মুরগির রোগ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে
৪) মুরগির মলত্যাগ তরল হলে তা ভালো বিষয় নয়। সেইক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ওষুধ দিতে হবে।
৫) মুরগির গায়ে উকুন হলে সেই উকুন বেছে দিতে হবে।
আরও পড়ুন: Sericulture In India: ভারতে রেশম চাষের বৃত্তান্ত