রোজ বদলাচ্ছে আকাশের মেজাজ: দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গের আবহাওয়ার আপডেট (Weather Update of Bengal) সরাসরি বাজারে নয়, FPO-র মাধ্যমে বেশি দাম পেতে কী করবেন? পশ্চিমবঙ্গের ছোট শিল্প: হ্যান্ডলুম থেকে টেরাকোটা
Updated on: 17 July, 2020 3:01 PM IST

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে চাষীদের উপার্জন বৃদ্ধি বিষয়ে জোরালো আওয়াজ তুলেছেন, যার মধ্যে মৌ-চাষের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গতানুগতিক চাষবাস ছাড়াও কৃষকদের তিনি মৌ-চাষ করার জন্যও অনুরোধ জানিয়েছেন, যা কিনা তাদের উপার্জন দ্বিগুণ করতে পারে। কেরালাতে চাষিরা রাবার চাষের সাথে সাথে মৌ-চাষ করে খুব ভালো উপার্জনের পথ খুঁজে নিয়েছে।

আপাতদৃষ্টিতে রবারচাষের সাথে মৌ পালনের কোনো প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই, কিন্তু ভারতীয় রাবার পর্ষদ বিষয়টাকে একটু অন্যভাবে দেখছেন। তারা কিছু বিত্তবান চাষিকে রাবার চাষের সাথে মৌ-চাষ করার উপদেশ দিয়েছেন, কারণ রাবার শিল্পে কোনো কারণে যদি ভাটা পড়ে বা বাণিজ্যে ঘাটতি পড়ে মৌ-চাষের মাধ্যমে সেই ঘাটতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

২০১৬-১৭ সালে ভারতীয় রাবার উন্নয়ন পর্ষদ মৌ-পালনের উপর একটি সংশিত প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করেছিলেন, প্রথমে অনেকটা উদ্দম না দেখা গেলেও বর্তমানে বহু মানুষ এই শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, কারণ মধুর উত্তরোত্তর চাহিদা বৃদ্ধি ও বর্তমান আকর্ষনীয় বাজার মূল্য মানুষের মধ্যে এই নতুন দ্বৈত চাষ পদ্ধতি বেশ প্রভাব বিস্তার করছে, এবং মীনাচিল ও পালাক্কার অঞ্চলে যে সমস্ত ব্যক্তি এই দ্বৈত চাষে আগ্রহী হয়েছেন তারা অনেকেই অবসৃত প্রবাসী ভারতীয় এবং  গৃহবধূ, তারা এই ধরণের পদ্ধতিকে শখ কিংবা পার্ট-টাইম কাজ হিসেবে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ ও বাণিজ্যিক ভাবেও যুক্ত থাকতে চাইছেন। বিভিন্ন চাষি, রাবার নির্মাতা, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মানুষেরা এই বিষয়টিতে এতটাই আগ্রহী যে পর্ষদ এই বিষয়টিকে অনেকটা বাড়ানোর চেষ্টা করছে যাতে অনেক বেশী সংখ্যক মানুষ এই শিক্ষার সুযোগ পায়। আগামি দিনে তারা দক্ষিণ কেরালার কল্লাম থেকে উত্তর কেরালার কান্নুর পর্যন্ত সুবিস্তৃত করতে চাইছেন।

২০১৬-১৭ সালে যে সংশিত শিক্ষার বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছিলো তা প্রধানত মীনাচিল অঞ্চলের কৃষকদের, রাবার উৎপাদকদের, ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে উৎসাহিত ও শিক্ষিত করার জন্য উপস্থাপিত হয়েছিলো, এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো চাষিদের ও উৎপাদকদের স্বনির্ভর ও উদ্যোগী করে তোলা। সেই কারণে মৌ-চাষের বিবিধ সরঞ্জামের ব্যবস্থাও করা হয়েছিলো পর্ষদের তরফ থেকে।  বর্তমানে কেরালার জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ পর্ষদ চাইছেন যে শুধু উতপাদন-ই নয় চাষিরা উৎপাদিত বস্তুর ও উৎপাদক প্রাণীর দিকেও খানিকটা নজরান্দাজ করুক যাতে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য সুরক্ষিত থাকে, ও পরিবেশের জীব-বৈচিত্র্য বজায় থাকে।

পর্ষদ বিশেষজ্ঞদের মতে কেরালার ৫.৫০ লক্ষ রাবার উৎপাদন এলাকায় মৌ-চাষ করে বিগত বৎসরে ৮০,০০০ টন মধু উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে, যেখানে সারা ভারতে বর্তমানে মাত্র ৫,০০০ টন। মৌ-চাষ হল একপ্রকার দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন যা দেশে কর্ম-সংস্থান তৈরী করতে পারে। এই বিষয়টি চাষবাসের পাশাপাশি একটি লাভজনক উপার্জনের উৎস্য, এমনকি গ্রাম্যজীবিকার ক্ষেত্রে গতানুগতিক চাষের থেকেও অনেকবেশী নির্ভরযোগ্য বিষয়। মধু উৎপাদন শিল্প শুধুমাত্র কেরালা ও কন্যাকুমারী এলাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে আছে, সারা দেশের মোট উৎপাদিত মধুর প্রায় ৪২% এই অঞ্চল থেকেই উৎপাদিত হয়ে থাকে। এর প্রধান কারণ-ই হল দক্ষিণ ভারতীয় উপকূলবর্তী অংশের মনোরম আবহাওয়া, জীব-বৈচিত্র্য অঞ্চল, ও বাহারি ফুলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ।

কেরালা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা গেছে, সারা কেরালাতে প্রায় ৬ লক্ষ মৌ-কলোনি উৎপাদিত হয়েছে মধু সংগ্রহের জন্য। খাদি ও গ্রামোদ্যোগ উন্নয়ন নিগম এর হিসাব অনুসারে প্রতিটি মৌচাক থেকে গড়ে ১০কেজি করে মধু প্রতিবছরে পাওয়া যায়।

খাদি ও গ্রামোদ্যোগ নিগম এর বক্তব্য অনুসারে অভিজ্ঞতার অভাব, বৈজ্ঞানিক মৌ-চাষ প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে বহু মৌচাষী মৌ-চাষে অনীহা প্রকাশ করে। তাই এই অবস্থাকে অনুকুল করতে হলে প্রশিক্ষণ শিবির এর সাথে সাথে অন্যান্য দক্ষতা উন্নয়ন কার্যাবলীতেও তাদের প্রশিক্ষিত করতে হবে যাতে তারা বৈজ্ঞানিক প্রশিক্ষণের সাথে সাথে কারিগরী শিক্ষাতেও পারদর্শী হয়ে উঠতে পারে।

- প্রদীপ পাল

English Summary: honeywithrubber
Published on: 28 June 2018, 03:31 IST