কৃষিজাগরন ডেস্কঃ শীতকালে মাছ চাষী ভাইয়েরা বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। সে সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আগেই কিছু প্রতিরোধ মুলক ব্যবস্থা গ্রহন করলে চাষী ভাইয়েরা অনেক ভালো থাকতে পারবেন । পৌষ-মাঘ এই সময়টা শীতকাল, যেটা মাছ চাষীদের জন্য সংকটময় সময়। পৌষ মাসের শুরু থেকেই হালকা শীত পড়তে শুরু করে। এতে মাছের খাদ্য গ্রহণ অনেকটা কমিয়ে দেয়। এর প্রভাবে অতিরিক্ত খাদ্য পচে গিয়ে পুকুরে এ্যামোনিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এবং অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার ফলে জলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং সর্বোপরি মাছের মৃত্যু ঘটে।
মাছ একটি ঠান্ডা রক্তের জলজ প্রাণী হওয়ায় শীতকালে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। ভূপৃষ্ঠের জলের তাপমাত্রা নিচের স্তরের তুলনায় ঠান্ডা হওয়ায় মাছ নিচের অঞ্চলে থাকতে পছন্দ করে। কৃষকদের জলের গভীরতা ৬ ফুট পর্যন্ত রাখতে হবে, যাতে এটি উষ্ণ নীচের অঞ্চলে হাইবারনেট করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পায়। অগভীর জলে, পুরো জলের কলাম ঠান্ডা হয়ে যায়, যা মাছকে প্রভাবিত করে এবং মারাত্মক হতে পারে। শীতকালে দিনের দৈর্ঘ্য এবং আলোর তীব্রতা যেমন কমে যায়, সালোকসংশ্লেষণের কার্যকলাপ হ্রাসের কারণে পুকুরে অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পায়। একটানা মেঘলা দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। পুকুরের পাড়ের উঁচু গাছপালা যথাসম্ভব পরিষ্কার রাখতে হবে। যাতে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে। অতিরিক্ত শেওলা, ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানা, আগাছাসহ সব ক্ষতিকর জলজ উদ্ভিদ পরিষ্কার করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ঠান্ডায় যত্নের অভাবে মারা গেছে ৭০ হাজার মাছের পোনা,কয়েক লক্ষ ক্ষতির মুখে মাছ চাষীরা
কৃষকদের তাদের পুকুরে বিশুদ্ধ জল যোগ করে বা বায়ুচালিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়, বিশেষ করে দিনের প্রথম দিকে, তাপমাত্রা হ্রাসের সাথে সাথে মাছের খাদ্য গ্রহণ হ্রাস পায় কারণ এর পরিপাকতন্ত্র মন্থর হয়ে পড়ে। তাই, তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে খাওয়ানোর হার ৫০থেকে ৫৭ শতাংশ কমানো অপরিহার্য । তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে খাওয়ানো বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয় । অতিরিক্ত খাদ্য অব্যবহৃত থাকে এবং পুকুরের তলদেশে জমা হয়, যা জলের গুণমানকে খারাপ করে ।
কৃষকদের কম প্রোটিনযুক্ত খাবার ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পুকুরে জৈব সার যেমন গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা এবং শূকরের গোবর যোগ করা কম/বন্ধ করাও প্রয়োজন কারণ শীতকালে দুর্বল জীবাণু ক্রিয়াকলাপের কারণে জৈব সারের পচনশীলতার হার কমে যায়। পুকুরের তলদেশে বিষাক্ত গ্যাসের কোনও সন্দেহভাজন জমে থাকা রোধ করার জন্য নীচের মাটি (কাঁটাতারের সাহায্যে) পর্যায়ক্রমিক রেকিং করার পরামর্শ দেওয়া হয় । শীতকালে মাছে বিভিন্ন ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী রোগ যেমন পাখনা পচা, ফুলকা পচা, এবং আরগুলোসিস দেখা দিতে পারে। শীত শুরু হওয়ার ঠিক আগে CIFAX @ 400 মিলি/একর দিয়ে পুকুর শোধন করুন। এছাড়াও পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট 1-2 কেজি/একর বা চুনাপাথর 50-100 কেজি/একর দিয়ে পুকুরের শোধন করুন। লবণ প্রয়োগ 100 কেজি/একর শীতকালে রোগের প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে মাছকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এই সময় সাইপ্রিনাস কার্প, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, আমুর কার্প প্রভৃতি প্রজাতির মাছ চাষের উপযুক্ত সময়। এই সব প্রজাতির মাছ ৪-৫ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও খাবার খেয়ে দ্রুত বাড়তে সক্ষম।
আরও পড়ুনঃ শীতের মরশুমে হাঁস-মুরগি, মাছের যত্ন নেবেন কিভাবে? কি বলছে কৃষি বিশেষজ্ঞ? দেখে নিন
এই সব মাছের ডিম পোনার দামও কম । বাঁচার হারও বেশি। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে অক্টোবর মাসেই চারা পোনা ছাড়ার সময়। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসেও এই মাছের চাষ করা যায়। ৬-৭ মাসের মধ্যে মাছ বিক্রির উপযুক্ত হয়ে পড়ে। শীতে গোটা জলাশয়ের অর্ধেকাংশে চাষ হয়, তাহলে ছোট-বড় সব রকম চাষিরই এসময় একটা লাভ পাবেন। পরে শীত কেটে গেলে ওই মাছ তুলে বাজারে বিক্রি করে রুই, কাতলা-সহ অনান্য মাছ চাষও করতে পারবেন।
সুমন কুমার সাহু, মৎস্যচাষ সম্প্রসারন আধিকারিক, হলদিয়া