বাছাই ও ছাঁটাই হলো এক ধরনের প্রক্রিয়া। খামারে বাছাই ও ছাঁটাই প্রক্রিয়া একইসাথে সংঘটিত হয়। অর্থাৎ যেখানে ছাঁটাই হয় সেখানে বাছাই কাজও সম্পন্ন হয়ে থাকে। ছাঁটাই বলতে খামার থেকে ঐ ধরনের মুরগি অপসারণ করাকে বুঝায় যারা রোগাক্রান্ত, দুর্বল, যাদের গঠনে ত্রুটি রয়েছে, যাদের বৃদ্ধি দ্রুত হয় না এবং যাদের মধ্যে অন্য কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা রয়েছে। খামারের মুরগিগুলোকে পরীক্ষা করে সুস্থ, সবল, ভালো গঠনের অধিক উৎপাদনশীল ও সক্রিয়গুলোকে নির্বাচন করে খামারে রেখে দেয়াকে বাছাই বলে।
খামারে সুস্থ পাখির লক্ষণ
সুস্থ মুরগিতে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যাবে।
-
এরা সক্রিয় হবে।
-
সতেজ ও সবল হবে।
-
এদের গঠন সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
-
চোখ উজ্জ্বল হবে।
-
দাঁড়ানোর ভঙ্গিমা আকর্ষণীয় হবে।
-
এরা ডাকাডাকি করবে।
-
সক্রিয়ভাবে খাবার ও জল গ্রহণ করবে।
-
বিছানা আঁচড়ানোর স্বভাব থাকবে।
আরও পড়ুনঃ হাঁস পালনের আগে জেনে নিন এই দুটি লাভজনক পদ্ধতি
খামারে অসুস্থ পাখির লক্ষণ
অসুস্থ পাখির মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়।
-
এরা নিষ্ক্রিয় থাকে, বেশি সময় নিয়ে বসে থাকে
-
ঝিমায়, ধীরগতিসম্পন্ন হয়, স্বভাব হাবাগোবার মতো হয়।
-
তাছাড়া যে কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে খাবার ও জল খাওয়া কমে যায়।
-
মলদ্বারে ঠেস দিয়ে বসে, চোখ বুজে থাকে, পালক খাড়া হয়ে যায় এবং ডানা ও লেজ ভেঙে যায়।
-
অস্থির, ভীত, দুর্বলতা ইত্যাদি স্বভাব দেখা যায়।
-
নিজ মলদ্বারে ঠোকরানো, ঠোকরাঠুকরি স্বভাব, মাথা ঝাঁকানো, নিজ পালক উঠিয়ে ফেলা, শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত অস্বাভাবিকতা দেখা যায়।
-
তাপমাত্রাজনিত কারণে ডানা মেলে থাকে, ঠোঁট ফাক করে হা করে শ্বাস নয়।
-
বিকৃত মানসিকতা দেখা যায়। পালক, মল, বিছানা ইত্যাদি খাওয়ার স্বভাব দেখা যায়।
আরও পড়ুনঃ দ্বিগুন লাভ,শুধু বেছে নিতে হবে এই তিনটি বিশেষ জাত
বাছাই ও ছাঁটাইয়ের পদ্ধতি
খামারে দুভাবে মুরগি বাছাই বা ছাঁটাই করা যায়।
১. পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেঃ এক্ষেত্রে মুরগিকে চোখে দেখে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বাছাই ও ছাঁটাই করতে হয়।
২. হাতে ধরে পরীক্ষার মাধ্যমেঃ এক্ষেত্রে মুরগিগুলোকে পাহারা দিয়ে একস্থানে জড়ো করতে হয়। এরপর হাত দিয়ে ধরে পরীক্ষা করে বাছাই ও ছাঁটাই করতে হয়।
বাছাই ও ছাঁটাইয়ের সময়
খামারে চারটি পর্যায়ে বাছাই ও ছাঁটাই করা হয়ে থাকে।
১. প্রথম বাছাই ও ছাঁটাই: ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার পর অসুস্থ, দুর্বল, ছোট, খোঁড়া, গঠনে ত্রুটি রয়েছে এমন বাচ্চাগুলোকে ছাঁটাই করে ভালোগুলোকে বাছাইয়ের মাধ্যমে ব্রডার ঘরে পাঠাতে হয়। এছাড়া যদি ডিম উৎপাদনের উদ্দেশ্যে মুরগি পালন করা হয়ে থাকে তবে এ সময়ই স্ত্রী-পুরুষ নির্ণয় (sexing) করতে হবে অর্থাৎ স্ত্রী বাচ্চাগুলো বাছাই করে পুরুষ বাচ্চাগুলো ছাঁটাই করতে হবে।
২. দ্বিতীয় বাছাই ও ছাঁটাইঃ ব্রডার ঘর থেকে বৃদ্ধির ঘরে নিয়ে যাওয়ার সময় আরেকবার বাছাই ও ছাঁটাই করতে হয়। এ সময়ও দুর্বল, ত্রুটিপূর্ণ, ছোট, খোঁড়া প্রভৃতি পাখিগুলোকে ছাঁটাই করতে হয়।
৩. তৃতীয় বাছাই ও ছাঁটাইঃ বৃদ্ধির ঘর থেকে ডিমপাড়া ঘরে নেয়ার সময় তৃতীয়বারের মতো বাছাই ও ছাঁটাই করতে হয়। এসময় দেখতে হয় মুরগিগুলো তাদের নির্দিষ্ট জাত বা উপজাতের বৈশিষ্ট্য পেয়েছে কি-না, মুরগিগুলোর মধ্যে ভালো ডিম দেয়া মুরগির বৈশিষ্ট্য রয়েছে কি-না ইত্যাদি। এছাড়া ডিমপাড়াকালীন সময়েও যেসব মুরগি কম ডিম পাড়ে বা মোটেই ডিম দেয় না তাদেরকে ছাঁটাই করতে হয়।
৪. চতুর্থ বাছাই ও ছাঁটাই: মুরগি সাধারণত যখন থেকে ডিম পাড়া শুরু করে তখন থেকে প্রায় এক বছর পর্যন্ত ভালো ডিম দেয়। এরপর ধীরে ধীরে এদের উৎপাদন ক্ষমতা কমতে থাকতে। খামারে যেসব মুরগির উৎপাদন শতকরা ৫০ ভাগের নিচে নেমে আসে তাদেরকে ছাঁটাই করতে হয়।