কৃষিজাগরন ডেস্কঃ মানুষ যেমন এক স্থান থেকে অন্যত্র যায় খাদ্য সংস্থান বা আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ঠিক তেমনি মাছেরাও পর্যাপ্ত ও পছন্দের খাবারের খোঁজে প্রায়ই তাদের শৈশবের বেশ অনেকটা সময় অতিবাহিত করতে মোহনাকেই আদর্শ স্থান হিসাবে বেছে নেয়। এর প্রধান কারণই হল কিছু বিশেষ ধরনের ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ যাদের পাতাগুলো জলের মধ্যে ঝড়ে পরে, পচে, এক পুষ্টিকর খাদ্যের (ডেট্রিটাস) সৃষ্টি করে – যা মাছেদের পক্ষে উপযুক্ত।
শুধু মাছই নয় – চিংড়ি (গলদা ও বাগদা) দুই প্রজাতিই তাদের জুভেনাইল থেকে সাব-আডাল্ট – এই পর্যায়টি কাটিয়ে ওঠে এই একই স্থানে এবং পরবর্তীকালে আবার ফিরে যায় তাদের নিজস্ব ঠিকানায় – বাগদার ক্ষেত্রে সামুদ্রিক জল বা গভীর সমুদ্র।
আরও পড়ুুনঃ বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ পালন,এই জাতগুলি দিতে পারে লাভজনক ফল
ভারতবর্ষে মোহনায় মাছ চাষের সাফল্য
ভারতবর্ষে তথা পশ্চিমবঙ্গের আঞ্চলিক বাজারে এই সমস্ত লোনা জলের মাছের মধ্যে পারশে (Lisa parsia), ধূসর মালেট (Mugil cephalus), ভাঙ্গন (Lisa tade), ভেটকি ইত্যাদি মাছগুলি খুবই বিখ্যাত। কিন্তু তবুও, বেশ কয়েক বছর ধরে মোহনায় মাছ চাষ বা লোনা জলের (ওরফে ব্র্যাকিশওয়াটার) মাছ চাষের তালিকায় প্রভাব ফেলেছে চিংড়ি চাষ যার বাণিজ্যিক – বাজার ও রপ্তানির – দুটোরই খুব উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে আগামী ভবিষ্যতে। এমনকি এই সবের সাথে সাথে এর সুপ্রতিষ্ঠিত সহযোগী সমর্থনকারী সিস্টেম যেমন ফিড এবং অন্যান্য পণ্য ও পরিষেবাগুলিই অবশ্যই এটিকে জলজ চাষের ফসল হিসাবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। ভারতবর্ষে যদিও বহু চিংড়ি প্রজাতির কথা জানা আছে তবে তাদেরই মধ্যে অনেকটাই পাওয়া যায় জলজ চাষের মধ্যমে।
চিরাচরিত ধর্মানুসারে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে আমরা শুধুমাত্র আবদ্ধ ছিলাম মূলত বাগদা চিংড়ি চাষে, কিন্তু সম্প্রতি কিছু সংক্রামক ও প্রাণঘাতী প্যাথোজেনদের প্রভাবের ফলে এক বহিরাগত প্রজাতির চিংড়ি, ভেন্নামেই চিংড়ি দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই তা অনেকটা এগিয়ে বাকি দুই প্রজাতির চাষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দীতায়।
আরও পড়ুনঃ নন্দীগ্রাম-১ ব্লক মৎস্য বিভাগের অভিনব উদ্যোগ –মৎস্যজীবিদের ডিজিটাল সংযুক্তি
চিংড়ি ছাড়াও মালেট (পারশে, ভাঙ্গন) মাছ চাষেরও এক উজ্বল ভবিষ্যত্ রয়েছে কারণ এর যেমন একাধারে রয়েছে দ্রুত বৃদ্ধির হার, প্রোটিনে প্রাথমিক উত্পাদনশীল দক্ষ রুপান্তরকারী গুণাবলি, ঠিক তেমনি এটি হল পলিকালচারে অনাবিল ভাবে চাষ করার এক আদর্শ উপযোগী যার থেকে লাভের সম্ভাবনা রয়েছে আনুমানিক সাড়ে তিন থেকে চার টন পার হেক্টর।