গরুর জার্সি জাতের উৎপত্তি ইংলিশ চ্যানেলের জার্সি নামক ব্রিটিশ দ্বীপ থেকে । এই জাতটি এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায় । সবচেয়ে বেশী পরিমানে পাওয়া যায় ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় | জার্সি জাতের গরু বিভিন্ন শেড যুক্ত (হাল্কা থেকে গাঢ় কালো মিশ্রিত) বাদামি রঙের হয়ে থাকে। বিশেষ করে মুখের দিকেএকটি ঢালাও রঙের উপর সাদা সাদা দাগ যুক্ত থাকে। সাদা দাগ গুলো খুব কমও হতে পারে আবার খুব বেশীও হতে পারে । খুব বেশী হলে সারা শরীর অনেকটা সাদা রং ধারণ করে ।
প্রাপ্ত বয়স্ক জার্সি জাতের গাভীর ওজন ৪০০ কেজি থেকে ৫০০ কেজি (৮৮০ থেকে ১১০০ পাউন্ড) হয় । প্রাপ্ত বয়স্ক ষাঁড় ৫৪০ থেকে ৮২০কেজি (১১৯০ থেকে ১৮১০ পাউন্ড) হয়ে থাকে । জন্মের পর বাছুরের ওজন প্রায় ২৫ থেকে ২৭ কেজি পর্যন্ত হয় । গাভী এবং ষাঁড় উভয়েই অন্যান্য জাতের গরু থেকে ছোট আকারের হয়ে থাকে ।
ঘর তৈরী(House):
সুস্বাস্থ্য, আরাম এবং খারাপ আবহাওয়া থেকে সুরক্ষার জন্য পশুর জন্য উপযুক্ত আবাসন গুরুত্বপূর্ণ। যদিও, নির্বাচিত স্থানটি বাড়ির আশেপাশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে উঁচু হবে, যাতে বৃষ্টির জল অপসারিত হয়। নির্বাচিত স্থানের মাটি বালি দ্বারা উর্বর এবং সমৃদ্ধ হবে এবং সবসময় শুকনো থাকতে হবে। ঘরের ভেতরের আলো নিশ্চিত করুন এবং পর্যাপ্ত বাতাস প্রবেশ করলে ঘর শুকিয়ে যায়। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অবশ্যই সচল থাকতে হবে | খামারের মেশিন চালনার জন্য ও গবাদি পশুদের থাকার ঘরে বিদ্যুৎ থাকা প্রয়োজনীয় |
আরও পড়ুন -Magur Fish Farming: দেশি মাগুর মাছ চষে বিপুল অর্থ উপার্জন করুন
দৈনিক সুষম খাদ্য-তালিকা(Food):
সাধারণত, একটি জার্সি গরু প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে ২.৫ পাউন্ড খড় খাবে। চালের গুঁড়া ২৫০; গমের ভুসি ২৫০; খৈল ২৫০; ডালের ভুসি ২৫০; চিটাগুড় ২০০; লবণ/খনিজ; মিশ্রণ ভিটামিনসহ ৫০ গ্রাম। এছাড়াও দৈনিক অন্তত ৩ কেজি খড় অথবা ৯-১২ কেজি কাঁচা ঘাস ও প্রচুর পরিমাণে ঠাণ্ডা পরিষ্কার জল খাওয়াতে হবে।
বাছুরের পরিচর্যা:
চালের গুঁড়া ৩০০ গ্রাম; গমের ভুসি ৩০০ গ্রাম; খৈল ২৫০ গ্রাম; চিটাগুড় ১৫০ গ্রাম; লবণ ও ভিটামিন ৫০ গ্রাম। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে খড়, কাঁচাঘাস ও বিশুদ্ধ ঠাণ্ডা জল খাওয়াতে হবে। ৬ মাস বয়সে বাছুরকে সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে। বাছুরকে কৃমির ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ মতে দিতে হবে। স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে সুষম খাদ্য দিতে হবে।
প্রাথমিক প্রয়োজন:
যে কোনো কিছু গড়তে সবার আগে প্রয়োজন প্রাথমিক প্রস্তুতি। এ প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করে যে কোনো কাজের সফলতার ও ব্যর্থতা। ডেইরি ফার্ম গড়ে তুলতে প্রয়োজন আর্থিক সঙ্গতি, অভিজ্ঞতা ও গরুর নিরাপদ আশ্রয়। প্রথমেই বিশাল ফার্ম তৈরিতে হাত না দিয়ে ছোট পরিসরে কাজে হাত দেয়া ভালো। ৫ থেকে ৬টি গরু নিয়ে যাত্রা করে আস্তে আস্তে ফার্মকে সম্প্রসারণ করাই উত্তম। ২টি গরুর জন্য একজন দক্ষ লোক নিয়োগ করা গেলে ভালো। তবে খেয়াল রাখতে হবে লোকটির গরুর যত্ন নেয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে কিনা।
অন্য প্রকারের প্রধান জাতের সাথে তুলনা করলে, জার্সি কম খরচে এক পাউন্ড দুধের উপাদান তৈরি করে। এটি আরো উর্বর, একটি ছোট calving চক্র আছে, এবং দ্রুত পরিপক্ক। জার্সি হল দুগ্ধজাত প্রজাতি যা অন্য যেকোনো প্রাণীর চেয়ে বেশি সময় ধরে পালের মধ্যে থাকে। বেশিরভাগ গবাদি পশু ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যে বেঁচে থাকে; এবং জার্সির ২৫ বছর বা তার বেশি সময় বেঁচে থাকা অস্বাভাবিক নয়। এই গরুগুলি অন্যান্য দুগ্ধ জাতের তুলনায় আগে উৎপাদনশীল বয়সে পৌঁছায়।
সাধারণত, দুধ পাওয়া যায় ৩০ থেকে ৩৫ লিটার। ভারতে, এই প্রজাতিটি মূলত গরম এবং আর্দ্র এলাকায় ভালভাবে গ্রহণ করেছে। জার্সি গবাদি পশুর জন্য কিছু ক্লিনিকাল লক্ষণের মধ্যে রয়েছে অলসতা, জন্ডিস, অ্যানোরেক্সিয়া, কনজাংটিভাইটিস এবং আলোক সংবেদনশীল ডার্মাটাইটিস। জার্সির দুধ অন্যান্য প্রধান দুগ্ধ প্রজাতির তুলনায় বেশি দামি। জার্সির দুধে বাটারফ্যাটের পরিমাণ বেশি, যা একটি ভাল-স্বাদযুক্ত পণ্য সরবরাহ করে। এছাড়াও, এটি পনির এবং মাখন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। জার্সিতে ১৫ থেকে ২০% বেশি প্রোটিন, ১৫ থেকে ১৮% বেশি ক্যালসিয়াম, এবং ১০ থেকে ১২% বেশি ফসফরাস, ভিটামিন বি 12 এর উচ্চ পরিমাণে গড় গ্লাস দুধ রয়েছে। জার্সি দুধ বিভিন্ন উপায়ে অনন্য। জার্সি গরুর দুধের অন্যান্য অনেক দুগ্ধ প্রজাতির তুলনায় পুষ্টিগুণ রয়েছে।
আরও পড়ুন - Milkfish Farming: বাড়ছে মিল্কফিশ চাষ, জেনে নিন এর সহজ চাষ পদ্ধতি