মাগুর, সিঙ্গি, কই, শাল, শোল ইত্যাদি জিওল মাছ নামে পরিচিত। জিওল মাছ খুবই পুষ্টিকর এবং বাজারে এই মাছের চাহিদা এবং দাম বেশি। হাজা, মজা বিলে জিওল মাছ নিজের থেকে জন্মায় এবং বড় হয়। এসব মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র আছে, বাতাস থেকে শ্বাস নিতে পারে। জলে কম অক্সিজেনে এবং বেশি কার্বন ডাই অক্সাইডে বাচঁতে পারে। বিশেষ করে যেসব পুকুর কোন কাজে আসে না, সেই সমস্ত পুকুরে জিওল মাছ চাষ করে উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে। নার্সারী বা আতুঁড় পুকুর বর্ষাকালের পর শীতকালে খালি পরে থাকে। ঐ সমস্ত পুকুরে জিওল মাছ চাষ করা যায়। ময়লা জলের পুকুরে জিওল মাছ চাষ করা যায়, মাছ তাড়াতাড়ি বাড়ে।
ছোট বড় সব পুকুরেই জিওল মাছ চাষ করা যায়। গরমের সময় ১.৫ হতে ২ ফুট জল থাকলে ভাল হয়। পুকুরের উপরিভাগের জলজ উদ্ভিদ পরিষ্কার করে দেওয়া ভাল।
পুকুরে মাছের সংখ্যা- প্রতি হেক্টরে ৫০০০০ সংখ্যক মাগুর চাষ করা যায়, যার প্রতিটির ওজন ৮ গ্রাম থেকে ১০ গ্রাম এবং সাইজ ৮ সেমি থেকে ১২ সেমি পর্যন্ত। সিঙ্গি মাছের চারা ছাড়া যায়- ৭০০০০ হতে ১০০০০০ / হেক্টর, যার প্রতিটির ওজন ৬ গ্রাম থেকে ৮ গ্রাম এবং সাইজ ৭ সেমি থেকে ১০ সেমি পর্যন্ত হয়।
২ ভাগ ফিশ-মিল বা শুকনো মাছের গুঁড়ো এবং ১ ভাগ ধানের কুড়ো মিশিয়ে দিনে ২ বার খাবার দিতে হয়। পুকুরে যত চারাপোনা ছাড়া হয় তার ওজনের শতকরা ৪ ভাগ হতে ৫ ভাগ খাবার দিতে হয়। মাছ বাড়ার সাথে সাথে খাবার বাড়াতে হয়। টুকরো কেঁচো, গেঁড়ির মাংস জিওল মাছের খাদ্য। মাগুর মাছ গোবর ভাল খায়, পুকুরের কোনায় ৭০০ কেজি হতে ৮০০ কেজি গোবর/ হেক্টর মাসে ১০-১৫ দিন দিলে তা ভালো হবে।
মাছ চাষের সময়কাল -
জিওল মাছ চাষ করা হয় ৫-৬ মাস। শেষের মাসে খাবার বাড়াবার দরকার নেই। গরমে মাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। ৫ মাসে মাগুর মাছ প্রতিটি ১৫০ গ্রাম হতে ২০০ গ্রাম হয়। মাগুর মাছ চাষে ক্ষতি কম হয়। শতকরা ৮০ ভাগ মাছ পাওয়া যায়। কই ও সিঙ্গি মাছ চাষ পদ্ধতি মাগুরের মত। কই মাছ চাষকালীন সময় ৭-৮ মাস। কই মাছ বৃষ্টির সময় উপরে উঠে আসে। এই মাছ বর্ষার আগে পুকুর থেকে ধরে নিলে ভাল হয়।
জিওল মাছ চাষ করার উপকারিতাঃ
১। জিওল মাছে অনেক বেশি পরিমাণ প্রোটিন এবং আয়রণ থাকে এবং খুব কম পরিমাণ ফ্যাট থাকে। তাই এই মাছ খুব পুষ্টিকর খাবার। তাই এই মাছের চাহিদাও বেশি।
২। যেহেতু এই মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র আছে, তাই পরিত্যক্ত পুকুরে, খুব কম জলেই এই মাছ চাষ করা যায়। তাছাড়াও, এই মাছ খুবই বলিষ্ঠ হয়, তাই যেকোনো পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।
৩। জিওল মাছ খুব কম সময়ে অনেক দ্রুত বেড়ে ওঠে।
৪। এই মাছের চাষে ঝুঁকি খুব কম এবং খুব সহজেই পরিচালনা করা যায়।
৫। কম সময়ে উৎপাদন বেশি, তাই লাভের পরিমানও বেশি।
তথ্যসূত্র - সৌমিলি দাস (পি এইচ ডি স্কলার, মৎস্য সম্প্রসারণ বিভাগ), পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়
অনুবাদ - স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)