মুরগির চেয়ে খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন অধিক লাভজনক | ডিম-এর উদ্দেশ্যে এ জাতের হাঁস পালন করা হলেও ডিম পাড়ার পর স্ত্রী হাঁস এবং হাঁসাকে মাংস হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এ হাঁসের মাংসও মুরগির মতোই পুষ্টিকর। এই হাঁস কেবল খাবার ও গলা ডোবানোর জন্য প্রয়োজনীয় পানি পেলেই সহজ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে। তাই পুকুর বা অন্যান্য জলাশয় ছাড়াই এ হাঁস পালন (Khaki Campbell Duck rearing) সম্ভব। এটি মূলত ইংল্যান্ডের হাঁস | খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস সাড়ে ৪ মাস বয়স থেকেই ডিম দিতে শুরু করে এবং বছরে গড়ে প্রায় ২৫০- ৩০০টি পর্যন্ত ডিম দেয়। এ জাত টানা ১-৩ বছর পর্যন্ত একই হারে ডিম পাড়ে।
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের বাসস্থান(House):
পুকুর, ডোবা বা জলাশয়ে হাঁস পালন করলে শুধু রাতের ঘরের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে হাঁস প্রতি ৭৫ বর্গ সেন্টিমিটার (প্রায় ২.৫ বর্গফুট) জায়গা হলেই চলবে। সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় মেঝেতে হাঁস-পালন করলে প্রতি হাঁসের জন্য ১২০ বৰ্গ সেন্টিমিটার (প্রায় ৪ বৰ্গফুট) জায়গার প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া হাঁসের চরবার জন্য ঘরে সঙ্গে কিছু ঘেরা জায়গা রাখলে ভালো হয়। হাঁসের ঘরের উচ্চতা ১৫০ সেন্টিমিটার (৫ ফুট) করলেই চলবে। মেঝে স্যাতসেঁতে হলে ঠান্ডা লেগে হাঁসের অসুখ হতে পারে। ঘরের মেঝে পাকা হওয়া ভালো, তবে মাটিরও করা যায়। মেঝে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন রাখতে হবে। ঘরে যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে, তা লক্ষ রাখতে। ৩০০ বর্গফুট স্থানের জন্য ১টি ৬০ ওয়াটের বাল্ব দরকার।
খাদ্য(Food):
যদি পুকুর, ডোবা বা জলাশয়ে হাঁস পালন করা যায় তবে হাঁস নিজেদের খাবারের অনেকটাই নিজেরাই সংগ্রহ করে নিতে পারে। সাধারণত এরা বাগান ও জলাশয় থেকে ঘাস,লতা-পাতা, পোকা-মাকড়, কেঁচো, শামুক, গুগলি এবং উদ্ভিদকণা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। শামুক ও গুগলি হাঁসের প্রিয় খাদ্য, যা আমিষ জাতীয় খাদ্যের চাহিদা অনেকটাই পুরণ করে থাকে।
আরও পড়ুন -Hilsa Fish Farming: ইলিশ মাছ চাষ পদ্ধতির কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য
এগুলো অল্প খরচে সংগ্রহ করে সামান্য থেঁতলে পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে হাঁসকে অনায়াসেই সরবরাহ করা যায়। আবদ্ধ অবস্থায় খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন করতে হলে সুষম খাদ্যের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
হাঁসকে নির্দিষ্ট পাত্রে খাবার দিতে হবে। জল মিশিয়ে খাদ্য বা নরম করে দিলে হাঁস তা সহজে খেতে পারে । খাবার মুখে নিয়েই হাস জলে মুখ দেয় বলেই খাবার পাত্রের কাছে সব সময় জলের পাত্র রাখতে হবে। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসকে দৈনিক খাবার দেওয়ার হার,
০-৪ সপ্তাহ – দৈনিক ৪ বার।
৪-৮ সপ্তাহ – দৈনিক ৩ বার।
৮ সপ্তাহের উপর – দৈনিক ২ বার।
বাচ্চা উৎপাদন(Breeding):
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস ডিমে সাধারণত তা দিতে চায় না। ফলে কুরচি মুরগির সাহায্যে ডিম ফোটানো হয়। একটি কুরচি মুরগি ৮-১০টি হাঁসের ডিমে একবারে তা দিতে পারে। তবে ব্যবসার জন্য বেশি পরিমাণে বাচ্চা উৎপাদন করতে হলে কৃত্রিম উপায়ে ডিম ফোটানোর যন্ত্র বা ইনকিউবেটরের সাহায্যে মুরগির ডিমের মতোই হাঁসের ডিমও ফোটানো সম্ভব।
বাচ্চার পরিচর্যা:
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের বাচ্চার ১ দিন থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি যত্নের প্রয়োজন। এ সময়ে উপযুক্ত যত্ন ও পরিচর্যার অভাব হলে বাচ্চার মৃত্যুর হার অনেক বেশি হয়। প্রথম ৩ সপ্তাহকাল হাঁসের বাচ্চাকে তারের জালের মেঝেতে অথবা মাটি বা সিমেন্টের মেঝেতে কাঠের গুড়ো বিছিয়ে তার উপর রাখা ভালো। কাঠের গুড়োর উপর বাচ্চা রাখলে মেঝেকে সব সময় শুকনো রাখতে হবে; সেজন্য গুড়া গুলোকে প্রতিদিনই একবার করে উল্টে দিতে হবে। ৩ বা ৪ সপ্তাহ পর বাচ্চার অবস্থা অনুযায়ী তাদের সাধারণ মেঝেতে বা পুকুরে ছাড়া যেতে পারে।
২১ দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত হাঁসের বাচ্চাদের তাপ দিয়ে রাখতে হয়, যাকে ব্রুডিং বলা হয়। প্রথম সপ্তাহে ঘরের তাপমাত্রা ৩০° সেন্টিগ্রেড হওয়া দরকার। এরপর প্রতি সপ্তাহে ৩° সে. করে কমিয়ে ২৪° সে. পর্যন্ত নামিয়ে আনতে হয়। গরমকালে এমনিতেই তাপমাত্রা বেশি থাকে বলে বাচ্চাদের অসুবিধা হয় না। তবে শীতকালে প্রয়োজনীয় তাপ না দিলে বাচ্চার মৃত্যুও হতে পারে। সদ্যজাত বাচ্চাকে প্রথম ২৪ ঘণ্টা কিছু খেতে দেবার প্রয়োজন হয় না। এরপর ২৩ দিন খাদ্যকে জলের সাথে মিশিয়ে নরম ও পাতলা করে খাওয়াতে হয়। এরপর সাধারণ খাবার অল্প জলে মিশিয়ে খেতে দিতে হয়।
রোগ দমন(Disease management):
হাঁসের মারাত্নক দুটি রোগ ডাক-প্লেগ ও ডাক-কলেরার অবশ্যই টিকা দিতে হবে। ৩ সপ্তাহ বয়সে বুকের মাংসে ১ সষ ডাক প্লেগ টিকা দিতে হয়। ১৫ দিন পর পুনরায় বুকের মাংসে ডাক প্লেগ টিকা দিতে হবে। ৭০ দিন বয়সে কলেরার টিকা দিতে হবে | ১৩০ দিন বয়সে আবার কলেরার টিকা দিতে হবে।
আরও পড়ুন -Quail Rearing: অধিক উপার্জনে কোয়েল পালনে হন লাভবান