রাজ্যের মোট মৎস্য উৎপাদনের ৭৫% পশ্চিমবঙ্গ থেকেই আসে। বিগত দশ বছরেরও অধিক সময় ধরে আমাদের রাজ্য তথা পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য- উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে আসছে। কিন্তু তার পাশাপাশি আমাদের রাজ্যের জনসংখ্যার চাপও পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। তাই মৎস্য উৎপাদন বাড়ানোর চাহিদা রয়েই যাচ্ছে। শুধু মাত্র মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে নয়, আমাদের রাজ্য মাছের চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছে।
মাছ উৎপাদনে বাঁধাসমূহ (Obstacles to fish production) -
-
ভারতবর্ষ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ। তাই আমাদের রাজ্যে গরীব চাষিদের সংখ্যা খুবই বেশী।
-
দীর্ঘদিন মূলধন আটকে থাকায়, বড় মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে জলাশয়ের উৎপাদনশীলতা বাড়ে না।
-
প্রাকৃতিক দুর্যোগ-সমূহ যেমন বন্যা, খরা এবং চুরি, পুকুরে বিষপ্রয়োগ ইত্যাদিও বড় মাছ উৎপাদনের পথে অপর বাঁধা।
মাছচাষ ও গ্রামীণ অর্থনীতি (Fisheries and rural economy) -
গ্রামীণ-অর্থনীতির সাথে মাছ চাষের একটা গভীর সম্পর্ক আছে। সম্পর্কগুলিকে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হল -
-
মাছ চাষের জন্য একটি প্রধান ধাপ পুকুর কাটা ও তৈরী, যা করতে প্রচুর লোক প্রয়োজন হয়, ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়।
-
মাছের চারা উৎপাদনের জন্যেও কর্ম-সংস্থানের আধিক্য দেখা দেয়।
-
চারা বাজারজাত করার জন্যেও প্রয়োজন অধিক সংখ্যক লোক।
-
মাছের সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্যেও প্রচুর লোক নিযুক্ত করা হয়, ফলত কাজের ব্যবস্থা হয়।
-
বিদেশে রপ্তানী করার জন্যেও দরকার হয় লোকের, স্বাভাবিকভাবেই মেলে লোকের কাজের সুযোগ।
-
মাছ থেকে উপজাত দ্রব্য তৈরিতেও কর্ম-সংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি হয়।
যেহেতু গ্রামীণ অর্থনীতির সাথে মাছের উৎপাদনের গভীর সম্বন্ধ আছে, তাই মাছের উৎপাদনকে বহুগুণ বাড়িয়ে নিতে,
চাষিদের মাছ চাষের খুঁটি-নাটি বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা দরকার। যেমন -
-
পুকুরের জল ও মাটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা দরকার।
-
চাষের মাছগুলোর খাদ্য ও বাসস্থান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজনীয়।
-
পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দরকার।
-
পুকুরে পরিপূরক খাদ্যের সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দরকার।
-
চুনের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা।
-
পুকুরে সারের ব্যবহার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা।
-
মাছের পুকুর প্রস্তুতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা।
-
মাছের সাধারণ রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা দরকার।
আরও পড়ুন – Chital Fish Farming - চিতল পোনা উৎপাদন ও চাষের লাভজনক পদ্ধতি
পরিশেষে বলা যায়, মাছ বাঙালীদের জন্য শুধুমাত্র খাদ্যবস্তু নয়, এর সাথে বাঙালীদের অনেক আবেগও জড়িয়ে রয়েছে। আজকে আমাদের অনেক দেশীয় মাছ, বিদেশী মাছগুলির সাথে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে না পেরে বিলুপ্ত হতে চলেছে।
এই প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের লোকাচার, সংস্কৃতি ও দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এই অতি প্রয়োজনীয় সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন আমাদের নিজস্ব চাহিদার জন্যই করতে হবে।
আরও পড়ুন - Ginger Farming – জেনে নিন স্থায়ী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আদার চাষ পদ্ধতি