পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের বিভিন্ন অংশে শূকর উৎপাদনের সুযোগ সুবিধা বিভিন্ন রকমের, উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চলে এটি বিশেষ ভাবে সম্ভাবনাময়। এই অঞ্চলে এবং উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে শূকরের মাংসের চাহিদা প্রচুর। অন্যান্য জাতের শূকরের থেকে এখানকার ঘুঙরু জাতের শূকর উন্নতমানের। একদম সাধারন ব্যবস্থাপনায় এর উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। এই শূকর এর স্বাদ ও অনেক বেশী তাই এর চাহিদা ভীষণ বেশি এবং এখানকার ভূমিহীন শ্রমিক ও প্রান্তিক চাষিদের অতিরিক্ত রোজগারের লক্ষ্যে এটি একটি খুব লাভবান চাষ।
এই শূকর পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal), নেপাল ও ভুটানের হিমালায়ের পাদদেশ অঞ্চলে পাওয়া যায়। এদের গায়ের রং কালো, চওড়া কান এবং দেহ বিশালাকায়। এদের দেহে লোমের পরিমাণ বেশি হয়। শিরদাঁড়ার উপরে লোমগুলি বড় এবং শক্ত প্রকিতির হয়। এদের নাক উপরের দিকে বাঁকানো এবং লেজ অনেকটা লম্বা হয়। ঘুঙরু জাতের শূকর সাধারণত শান্ত স্বভাবের হয় ও এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। সঠিক মাত্রায় খাবার খাওয়ালে ৭ মাসে ওজন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কেজি হতে পারে। এদের প্রজনন ক্ষমতাও বেশি। এদের বাচ্চা দেবার ক্ষমতা অনেকটা সাদা বিদেশী শূকর লার্জ হোয়াইট ইয়র্কশায়ারের মত।
ঘুঙরু, হাঙ্গেরিয়ান, ল্যান্ড্রেস, ইয়র্কশায়ার, ডুরোক, মঙ্গল ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির শূকর পালন করা হয়। তবে এদের মধ্যে বাণিজ্যিক পালনের জন্য ঘুঙরু প্রজাতি সবচেয়ে জনপ্রিয়।
শুকরদের জন্য কী রকম ঘর দরকার (What kind of house needs for Pig Farming) ?
এদের জন্য স্বল্প খরচে মজবুত ও আরামদায়ক ঘর তৈরি করতে হবে। ঘরের নীচের ৩ থেকে ৫ ইঞ্চি দেওয়াল দেওয়ার পর বাকিটা জাল দিয়ে ঘিরতে হবে। ছাদে টালি বা খড় দেওয়া যেতে পারে। ঘরের মেঝে যেন শুকনো খটখটে থাকে এবং গর্ত না থাকে। ছাদে টালি বা খড় খড় ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রজননক্ষম শুকরার জন্য ৪০-৫০ বঃ ফুঃ থাকার জায়গা প্রয়োজন। ২ থেকে ৬ মাস বয়সের প্রতিটি বাচ্চার ১০-১৬ বঃ ফুঃ এবং তার উপরের বয়সের জন্য ১৬-২০ বঃ ফুঃ থাকার জায়গা লাগে। অর্থাৎ বাচ্চাসহ প্রসূতির জন্য একটি ৬০-৮০ বঃ ফুঃ ঘরের দরকার হবে। ঘরের বাইরে একই মাপের খোলা শুকনো জায়গা ঘিরে সেখানে এদের রাখা হয়। সকালে-বিকাউতা৬য়াকলে চরার জন্য এদের কিছু সময় ছেড়ে দেওয়া ভালো। মল-মূত্রের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকলে ওরা সেখানেই যাবে।
শূকর পালনের জন্য আদর্শ খাদ্যের তালিকা (Details of ideal foods for raising Pigs) -
যথাযথ ভাবে বাচ্চা পালন, দুধ উৎপাদন এবং লাভজনক হারে মাংস উৎপাদন করতে হলে যে খাদ্য দরকার তা-ই হল আদর্শ খাদ্য। এরকম একটি আদর্শ খাদ্যের তালিকা দেওয়া হল।ভুট্টা বা গম ভাঙা গম গমের ভুসি এদের প্রতি ১০০ কেজি খাবারের সঙ্গে ৫০০ গ্রাম লবণ, ১ কেজি ধাতব লবণ ও ২৫ গ্রাম ভিটামিন এ.বি.ডি. ৪০৫ গ্রাম, আরোফ্যাক্ট ২ এ বা টি.এম ৫ ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। খাবার পরিবর্তন করেত হলে তা ধীরে ধীরে করতে হবে।
নয় মাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত শূকরীকে প্রজননের কাজে ব্যবহার করা যাবেনা। প্রথম দিকে ২-৩ স অন্তর প্রজননে ব্যবহার করা যাবে। কিছুদিন বাদে সপ্তাহে ১ বার আর বয়স বাড়লে ১ বছরে পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করা চলবে (সপ্তাহে ২ বার)। শূকরী ৩ দিন গরম থাকে। বেশি বাচ্চা পেতে গেলে গরম হওয় পরেই ১বার এবং ১২ থেকে ২৪ দিন বাদে ১ বার শূকর দেখাতে হবে।
গাভিন শূকরীকে প্রসবের ১৫ দিন আগে থেকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে। দেখতে হবে যেন অন্য কোনো শূকর যেন ঐ ঘরে প্রবেশ করতে না পারে। ঘরে বিচালি ও শুকনো ঘাস ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রসবের ২-৩ দিন আগে থেকে শূকরীকে নরম বা ভেজা খাবার এবং অন্তত ২ কেজি নরম ঘাস খেতে দিতে হবে। বের জন্য ২-৮ ঘন্টা সময় লাগবে। শূকর প্রতি ১৫-২০ মিনিট অন্তর এক একটা বাচ্চ প্রসব করে। বের পর প্রতিটি বাচ্চাকে শুকনো কাপড় বা ভালো চট দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে দিতে হয়। প্রসবের ১২ ঘন্টা খাবার দিতে হবে। প্রথম ২-৩ দিন হালকা খাবার দিতে হয়। ৩-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চাদের মায়ের দুধ চলবে।
জন্মের পর বাচ্চাদের ৩-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত দুধ খাওয়াতে হবে। শূকরছানা জন্মাবার কয়েক মিনিটের মধ্যেই দাঁড়াতে পারে ও মায়ের বাটে মুখ দিয়ে গাঁজলা দুধ খেতে পারে। ১৫ দিন বয়স হওয়ার পর থেকে বাচ্চাদের সুষম খাদ্য খাওয়ানো অভ্যাস করতে হবে। প্রথম দিকে দৈনিক ৫-৬ বার ধীরে ধীরে ২-৩ বারে ভাগ করে দিতে হবে । খাবার পাত্রের কাছাকাছি শীতল জলের পাত্র সবসময় থাকবে। মাঝে মাঝে শূকরের ওজন দেখে নিলে খাওয়ানো ঠিক হচ্ছে কিনা বোঝা যাবে।
শূকরের বাচ্চা পাওয়ার জন্য রাষ্ট্ৰীয় শূকর খামার, হরিণঘাটা, নদীয়া-এই ঠিকানায় যোগাযোগ করতে হবে।
শুকরদের শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই স্থানীয় প্রাণী চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। প্রাণী-বন্ধুরও সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন - মুররা প্রজাতির মহিষ পালনে কৃষক হবেন দ্বিগুণ লাভবান (Murrah Breed Buffalo)