গ্রামাঞ্চলে এবং মফঃস্বলে পোলট্রি পালন এক লাভজনক (Profitable Poultry Rearing) ব্যবসা। অনেকেই এই ব্যবসা করে থাকেন। তবে এই ব্যবসাতে কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করলেই ডিম উৎপাদন অনেক বেশী পরিমাণে হয়। কীভাবে পোলট্রি পালন করে বেশী অর্থ উপার্জন করতে পারবেন, আজ আমরা এই নিবন্ধে সেই সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতে চলেছি।
এই ব্যবসাকে অধিক লাভজনক করতে হলে পোলট্রি খামারে মুরগির বিশেষ পরিচর্যা প্রয়োজন। মনে রাখবেন, মুরগির সাথে মোরগের প্রতিপালন কিন্তু সমান গুরুত্বের। পোলট্রি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তার আগে আমরা জেনে নেব মুরগির কিছু উন্নত প্রজাতি সম্পর্কে।
মুরগির প্রজাতি –
দেশী প্রজাতির মধ্যে মালয়, কড়কনাথ, বাসড়া, অ্যাসীল এবং বাইরের প্রজাতির মধ্যে কর্নিস ক্রস, ফ্রিডম র্যাঞ্জার্স, ব্রাউন লেগহর্ন, অর্পিনটন ইত্যাদি উচ্চ ডিম এবং মাংসের জন্য প্রতিপালন করা হয়।
পোলট্রি ফার্ম পরিচর্যা পদ্ধতি (Poultry Farm Management) -
-
ওজন ১৪০০ - ১৫০০ গ্রাম হলে মুরগি ডিম পাড়তে শুরু করে। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে মুরগির দেহের ওজন কোনভাবে ২৫ – ৫০ গ্রামের বেশি না বাড়ে। দেহে ফ্যাট বেশী জমলে পরবর্তীকালে ডিমের পরিমাণ কমে যেতে থাকে।
-
মুরগি ও মোরগের অনুপাত ৫ : ১ রাখতে হয়।
-
ঘরের মেঝে থেকে ৮ – ১০ ইঞ্চি উপরে প্রতি ৫ – ৬ টি পাখি প্রতি একটি করে ডিম পাড়ার বাক্স রাখতে হবে। ডিম পাড়ার বাক্সে ৩ – ৪ ইঞ্চি পুরু লিটার ব্যবহার করতে হবে যাতে ডিম ভেঙে না যায়। নির্দিষ্ট সময় অন্তর লিটার পরিবর্তন করতে হবে।
-
ডিম পাড়ার সময় প্রাকৃতিক আলো ছাড়াও কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন হয়। প্রাকৃতিক আলো ও কৃত্তিম আলোর মোট সময় প্রায় ১২ ঘন্টা + ৫ ঘন্টা = ১৭ ঘন্টা আলোর প্রয়োজন হয়। ভোর বেলা ও সন্ধ্যের সময় এই কৃত্তিম আলো দিতে হবে।
মুরগি পালনে আবশ্যক (What to do in keeping chickens):
১। খামারের বাচ্চা আনার আগে থেকে শুরু করে নিয়মিত খামার পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এতে খামারে রোগের প্রকোপ কমে যাবে এবং মুরগির দৈহিক বৃদ্ধি দ্রুত হবে।
২। মুরগির খামারে বাচ্চা আসার ৪৫ মিনিট পূর্বে চিকগার্ডের ভেতরে প্রবায়োটিক স্প্রে করে দিতে হবে। বাচ্চা ব্রুডারে ছাড়ার ৩০ মিনিট আগে পানির ড্রিকার দিয়ে দিতে হবে।
৩। খামারে ব্রয়লার পালনের জন্য ১ দিনের বাচ্চার বয়স ৩৬ গ্রাম হতে হবে। বাচ্চা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।
৪। খামারে যাতে সবসময়ই আলো প্রবেশ ও বায়ু চলাচল করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। খামারের লিটার ভালো হলে মুরগি ভালো থাকবে। এজন্য নিয়মিত মুরগির লিটার পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আর প্রয়োজন হলে লিটার পরিবর্তন করে দিতে হবে।
৬। ১৫ দিন বয়সের মধ্যে মুরগি গ্রাডিং শেষ করতে হবে। ১৮ দিন বয়সে গ্রোথ আসার জন্য গুড়ের জল খাওয়াতে হবে। ২০ দিন অতিবাহিত হলে মুরগি ফ্লাসিং করতে হবে। ২৫ দিন পর থেকে মাদি এবং ছোট মুরগি বিক্রি করা যেতে পারে।
৭। ব্রুডিং এ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে এবং দুই ব্যাচের মধ্যে ১৫ দিন বিরতি দিতে হবে।
৮। সোনালীর ক্ষেত্রে ব্রূডিং এর সময় “এস্পারজিলোসিস” হবার অনেক সম্ভবনা থাকে। সেজন্য মুরগির ব্রুডিং কালে লিটারে তুঁতের জল ছিটিয়ে ব্রুডিং করাতে হবে। এতে ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
৯। মুরগি পালনের ক্ষেত্রে অনেক খামারিরা ভ্যাকসিন প্রদান নিয়ে অনেকটা উদাসীনতা দেখায়। সময়মতো মুরগিকে ভ্যাকসিন দিনে না পারলে অনেক সময় খামারিদের লোকসানে পড়তে হয়। আর সেজন্য ভ্যাকসিনসূচী অনুযায়ী ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা (Feed Management) -
মুরগি পালন লাভজনক করতে খাবারের দিকে বিশেষ নজর প্রয়োজন। মুক্তাঙ্গনে ও খামারে পালিত মুরগিকে খাবারের উচ্ছিষ্ট, পোকামাকড়, সবজির খোসা, মুড়ি, চাল, ক্ষুদ - কুঁড়ো, ভাতের মাড় ইত্যাদির সঙ্গে ভিটামিন ও খনিজ লবন মিশিয়ে দিলে ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। মুরগির খাবারে গেঁড়ি গুগলি থাকলে মুরগির প্রাণিজ প্রোটিনের চাহিদা মেটে ও ডিমের খোসা মোটা হয়, সহজে ভাঙে না ।
-
মুরগিকে নিয়মিত সবুজ খাদ্যের সরবরাহ দিলে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয়।
-
খামারের মুরগির সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নিয়মিত ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়োজন।
-
মুরগির খাবারের পাত্র সপ্তাহে একদিন পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ও জলের দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত।
মুরগিকে সবসময় বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করা উচিত। গরমের সময় অবশ্যই ঠান্ডা বিশুদ্ধ পানীয় সরবরাহ করা উচিত। জলের সাথে অনেক সময় জীবাণুনাশক মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। মুরগির জলের জায়গা উলটে মেঝে বা লিটার যাতে ভিজে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
আরও পড়ুন - Shoal Fish farming – স্বল্প বিনিয়োগ করে শোল চাষ থেকে অধিক উপার্জন করুন