চিতল মাছ বাঙালীদের এক প্রিয় মাছ, স্বাদে অতুলনীয়। আবার চিতল মাছ বিদেশে কাঁচের অ্যাকোরিয়ামে বাহারী মাছ হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। তাই আধুনিক বাণিজ্যিক মাছ চাষে চিতলের গুরুত্ব বাড়ছে। চিতল মাছের চারাপোনাও তৈরি করছে মাছ চাষীরা।
সাধারণত চিতলের দেখা মেলে হাওড়, বাঁওড় বা বিলে। একসময় প্রায়ই জেলেদের জালে ধরা পড়ত বড় বড় চিতল। সময়ের পরিক্রমায় অন্যান্য দেশীয় মাছের মতোও চিতলেরও দেখা মিলছে না দেশের অধিকাংশ উন্মুক্ত জলাশয়ে। তবে চিতল মাছের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে না জানার কারণে অনেকেই আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও চাষ করতে পারছেন না। নিচে চিতল মাছ চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে দেওয়া হল-
চিতল মাছের দেহ ও মুখ চ্যাপ্টা, পিট বাঁকানো, পেটের দিক ঝোলানো । চিতল মাছের দেহের দু- পাশে পৃষ্ঠদেশের উপর ১২ – ১৫ টি রুপালী দাগ আছে । লেজের নিচের দিকে ৫-৮ ট কালো ফুটা থাকে । এ মাছটির মাথার পেছনে পৃষ্ঠদেশ ধনুকের মত বেঁকে উপরে উঠে-গেছে । চিতল মাছ রাক্ষুসে একটি মাছ। সাধারণত ছোট ছোট মাছ খেয়ে ফেলে । চিতল মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Notopterus chitala. ইংরেজিতে চিতল মাছ কে Feather back বা crown knifefish বলে।
মাছের পোনা উৎপাদন
চিতল মাছের পোনা উৎপাদনের জন্য শুরুতেই পুকুরের জল ভালভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর ১৫ দিন এই অবস্থায় রাখতে হবে। তখন লক্ষ্য করলে দেখা যাবে পুকুরের তলদেশে এক প্রকার ঘাস জন্মায়। এরপর পুকুরে জল দিতে হবে। এভাবে পুকুর প্রাকৃতিকভাবে চিতল চাষের উপযোগী হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে পুকুরে মা মাছ এবং পুরুষ মাছ মজুদ করবেন। মজুদের ঘনত্ব হবে প্রতি শতাংশে সর্বোচ্চ ৩-৪টি।
আরও পড়ুনঃ মাছের মড়ক থেকে পুকুরকে বাঁচানোর উপায় জানুন
চিতল মাছের খাদ্য
চিতলের লাভজনক মিশ্র চাষ করা যায়। তবে চিতল একটি রাক্ষুসে স্বভাবের মাছ। জীবন্ত ছোট মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। তাই বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। তেলাপিয়ার সঙ্গে চিতল মাছের চাষ করলে এই সমস্যা মেটানো যায়। কারণ, তেলাপিয়া মাছ প্রলিফিক ব্রিডার। অজস্র বাচ্চা দেয়, যা চিতল মাছের খাবার হিসেবে কাজ করে। তেলাপিয়ার সঙ্গে চিতল চাষ করলে চিতলের যেমন খাবার কম পড়ে না, তেমনই তেলাপিয়ারও অসুবিধা হয় না। আবার চিতলের বাচ্চার চেয়ে বড় সাইজের রুই, কাতলা কার্প জাতীয় মাছকে একসাথেই চাষ করা যায়। রাক্ষুসে চিতলের পেট তেলাপিয়ার ছোট বাচ্চায় ভরে যায়। তাই সহজেই রুই, কাতলা মাছের সাথে চিতল মাছ চাষ করা যায়। একটি চিতল এর বিপরীতে ছয় থেকে সাতটি তেলাপিয়া মাছের ব্রুড ছাড়তে হয়। প্রতি ডেসিম্যালে ৫-৬ টি চিতল মাছ ছাড়লে এর জন্য পয়ত্রিশ থেকে চল্লিশটি তেলাপিয়া মাছের ব্রুড ছাড়তে হয়। তেলাপিয়া মাছে বাচ্চা দেবে আর চিতল মাছ সেই গুলো খাবে।
নার্সারি পুকুর প্রস্তুতি
চিতল মাছ চাষের জন্য সর্বদাই বড় পুকুর নির্বাচন করা উচিত। কারণ, যত বড় জলাশয় হবে চিতল চাষে তত লাভ হবে । বড় জায়গাতে চিতল মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং লাভ বেশি হয় । বড় জায়গাতে একটি চিতল মাছ ১ বছরে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ কেজি ওজনের হয়।
আরও পড়ুনঃ দেশিমাগুর মাছ চাষের পদ্ধতি
চিতল মাছ চাষে আয়
চিতল মাছ চাষের জন্য সর্বদায় বড় পুকুর বা ঘের বা বিল নির্বাচন করা উচিত কারন যত বড় জায়গা হবে চিতল চাষে তত লাভ হবে । বড় জায়গাতে চিতল মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং লাভ বেশি হয়। বড় জায়গাতে একটি চিতল মাছ ১ বছরে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ কেজি ওজন হয়। ধরে নিলাম আপনি ১০০০ শতাংশ (১০ একর) একটি জলাশয়ে কাপ জাতীয় মাছের সাথে চিতল মাছ চাষ করবেন তাহলে প্রতি শতাংশে ৬ টি করে চিতলের পোনা ছাড়ছেন মোট ৬০০০ টি । ৬ হাজার টি মাছ ছাড়লে ১ বছর পরে ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টি চিতল মাছ পাওয়া যাবে । যদি ৫০০০ টি চিতল মাছ পাওয়া যায় এবং প্রতিটির ওজন ২ কেজি প্লাস । প্রতি কেজি ৫০০ টাকা হারে চিতল মাছ বিক্রয় করা যায় বড় মাছ হলে আর বেশি বিক্রয় করা যায় । তাহলে প্রতিটি মাছের বিক্রয়মূল্য হবে ১০০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা । মোট বিক্রয় হবে (৫০০০× ৮০০) = ৪০,০০,০০০ (৪০ লক্ষ টাকা)। শুধু চিতল চাষ করেই এই পরিমাণ টাকা আয় করা যাবে ।