কৃষিজাগরন ডেস্কঃ কাঁকড়া চাষের আধুনিক লাভজনক এই পদ্ধতির নাম “বক্স ক্রাব টেকনোলজি” বা বাক্স-পদ্ধতি, এই পদ্ধতি অবলম্বনে চাষ করছেন এলাকার কাঁকড়া চাষিরা। এতে পুকুরে মাছ চাষের সঙ্গে সঙ্গে পুকুরে ভাসমান বাক্সতে কাঁকড়া চাষ করা যায়। ঈষদ নোনা জলের পুকুরে মাছের সঙ্গে সঙ্গে বাক্সতে কাঁকড়া চাষ ভালো করা যায়। অভিনব ‘বক্স-ক্রাব টেকনোলজি’তে (ভাসমান বাক্সে কাঁকড়ার চাষ) কাঁকড়া চাষের প্রসার বাড়ছে রাজ্যে।
হলদিয়া, নন্দীগ্রাম, নয়াচরে হলদি নদীর তীরবর্তী এলাকায় কাঁকাড়ার চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।কাঁকড়ার বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে কাদা কাঁকড়া বা গ্রীন ক্রাব বা ম্যানগ্রোভ ক্রাব বানিজ্যিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। বক্স ক্রাব টেকনোলজিতে কাঁকড়ার এই চাষ অত্যন্ত লাভ জনক। এর কারন ও আছে অনেক, প্রথমত একি পুকুরে মাছ চাষের সাথে সাথে ভাসমান বাক্সে কাঁকড়ারচাষে লাভ দ্বিগুন হচ্ছে।
আসলে বাক্সে কাঁকড়ার ফ্যাটেনিং করা হয় আর জলে অন্যন্য মাছ চাষ করা যায়। এছাড়া বাক্সে রাখা কাঁকড়ার গোনাডের পরিপক্কতা সহজে পরীক্ষা করা যায়। বাঁচার হার ও সঠিক ভাবে বোঝা যায়।প্রতিটি বাক্সে একটি করে কাঁকড়া থাকায় একে অপরকে আক্রমন করতে পারেনা।প্রত্যেকটি কাঁকড়াকে সমান ভাবে খাবার দেওয়া যায়, খাবারের অপচয় কম হয়।এই চাষের পদ্ধতি নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
কুড়ি ফুট মাপের দুটি পাইপের মধ্যে পনেরোটি বাক্স ভাসিয়ে রাখা যাবে। এক ডেসিমেল একটা পুকুরে ছয়টি পাইপে ৪৫-৫০টি বাক্স ভাসিয়ে রাখা যাবে। প্রতি পাইপের দাম আটশো টাকা ও বাক্সের দাম তিনশো টাকা ধরে ভাসমান বাক্স প্রতিস্থাপন করতে প্রায় হাজার পনেরো টাকা পড়ে। কুড়ি গ্রাম করে শুঁটকি মাছ দৈনিক প্রতি বাক্সে কাঁকড়াকে খাবার দিতে হবে।পঞ্চাশটি বাক্সের কাঁকড়ার জন্য মোট ১কেজি শুঁটকী মাছ খাবার প্রতিদিন প্রয়োজন।মোটামোটি একশো টাকা কেজি প্রতি শুঁটকী মাছ পাওয়া যায়, তবে দাম কমে বাড়ে।প্রতি কেজি পাঁচশো টাকা হিসেবে দুইশো গ্রাম ওজনের ওপরের স্ত্রী কাঁকড়া মজুদ করতে হবে।কমপক্ষে আটশো টাকা প্রতি কেজি কাঁকড়া বিক্রি করা যাবে।
প্রথমে পুকুরের উপর বাঁশ দিয়ে সাঁকোর মত কাঠামো করতে হবে। মাঝে মাঝে কিছুটা ফাঁক রাখতে হবে। যাতে ওই ফাঁকের মধ্যে মাঝারি মাপের প্লাস্টিকের বাক্স ঝুলিয়ে রাখা যায়। তারপর বড় গর্ত দেওয়া বিশেষ ধরনের প্লাস্টিকের বাক্সের মধ্যে কাঁকড়া-চারা ভরে ওই সাঁকোয় ঝুলিয়ে দিতে হবে। বাক্সগুলি এমনভাবে ঝোলানো থাকবে যাতে পুকুরের জলের মধ্যে ডুবে থাকে। কাঁকড়ার খাবার হিসাবে প্রতিদিন সকালে ও বিকালে মোট দুটি বড় মাপের শুঁটকি মাছ দিতে হবে।
এরপর ওই বাক্সের মধ্যেই স্বল্প সময়ে কাঁকড়াগুলি বাজারজাত হয়ে উঠবে।তবে প্লাস্টিকের বাক্স কিনে এনে ব্যবহার করলে ভাল।আবার প্লাস্টিকের বাক্স না পাওয়া গেলেও কম খরচে দেশিয় পদ্ধতিতেও এই বাক্স বানানো যায়।বাঁশেরও বানানো যায়। আরও লাগবে প্লাস্টিক ড্রাম ও সুতা।অপরিপক্ক ডিম্বাশয়যুক্ত সুস্থ্য সবল সকল দাঁড়া যুক্ত স্ত্রী কাঁকড়া প্রতিটি বাক্সে মজুদ করতে হয়। মজুদ করার ৮-১০দিন পর পর কাঁকড়ার ডিম্বাশয় পরিপক্ক হয়েছে কিনা তা প্রতিদিন দেখতে হয়।কাঁকড়াকে আলোর বিপরীতে ধরলে যদি কাঁকড়ার দুই পাশের দাঁড়ের গোড়ার মধ্যদিয়ে আলো প্রবেশ না করে তাহলে বুঝতে হবে ডিম্বাশয় পরিপক্ক হয়েছে।আর এই সময় যদি দেখা যায় পরিপক্ক হয়নি তবে সেইকাঁকড়াকে আবার বাক্সে রেখে দিতে হবে।
সাধারনত ১০-১২দিনের মধ্যে কাঁকড়া পরিপক্ক হয়ে যায় । তারপর কাঁকড়াকে বাক্স থেকে বের করে নাইলন দড়ি বা ফিতে দিয়ে বড় দাঁড় গুলো বেঁধে ফেলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে দাঁড় গুলো ভেঙে না যায়। কারন দাঁড় ভেঙে গেলে বাজার মূল্য কমে যাবে । বাড়ির মহিলারা বা স্বনির্ভর দল অতি সহজেই এক বিঘে পুকুরে পঁচিশ হাজার টাকার মূলধন নিয়ে বাক্স কাঁকড়ার চাষ করে মাত্র এক মাসে কমপক্ষে দ্বিগুন লাভ আনতে পারবেন ।
সুমন কুমার সাহু, মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ আধিকারিক, নন্দীগ্রাম-১ নম্বর ব্লক, পূর্ব মেদিনীপুর