জলাশয়ের সার্বিক উৎপাদন বাড়াতে কার্প জাতীয় মাছ গুলির পাশাপাশি (Carp Fish) বেশ কিছু মাছ মিশ্র চাষে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। বেশ কিছু প্রগতিশীল মাছ চাষি হাতে কলমে এই সব মাছের চাষ করেছেন। আর্থিকলাভে মাছ চাষিরা হাতে নাতে তার প্রমানও পেয়েছেন। সাথী ফসল হিসেবে লাভজনক কয়েকটি মাছের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এই লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করা হল।
দ্রুত বর্ধনশীল কৈ বা ভিয়েতনাম কই (Vietnam koi) -
খেতে সুস্বাদু হওয়ায় ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ভিয়েতনাম কৈ মাছ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। মাত্র ৪ মাসে ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম ওজন হয়। চাষ পদ্ধতি সহজ ও অন্য মাছ চাষের চেয়ে লাভ বেশি। আমাদের রাজ্যের জলাশয় ও আবহাওয়া এই মাছ চাষে উপযোগী। এই কৈ মাছ একক অথবা দেশি শিং-মাগুর মাছের সঙ্গে মিশ্র চাষ করা যায়।
মাছের নাম - মিল্ক ফিশ -
ফিলিপাইনের জাতীয় মাছ। নাম চ্যানস চ্যানস বা মিল্ক ফিশ। এই মাছ আবার ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ানেও দারুণ জনপ্রিয়। এ দেশের দক্ষিণ ভারতেও মেলে। ‘ডেকান হিলশা’ বা ‘দাক্ষিণাত্যের ইলিশ’ হিসেবেই পরিচিত।
প্রশান্ত মহাসাগরের বাসিন্দা এই চ্যানস চ্যানসের স্বাদের সঙ্গে ইলিশের নাকি আচরণেও মিল আছে। ইলিশের মতো চ্যানস চ্যানসও ঝাঁক বেঁধে ঘোরে। ইলিশের মতোই ডিম পাড়ার সময়ে দলবেঁধে মোহনার দিকে বা অপেক্ষাকৃত মিষ্টি জলে চলে আসে চ্যানস চ্যানস। ফলে স্বভাবগত দিক দিয়ে ইলিশের সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে চ্যানস চ্যানস বা মিল্ক ফিশের। তার উপরে ইলিশের মতো চ্যানস চ্যানসেও যথেষ্ট কাঁটা রয়েছে।
এই মাছ মিষ্টি জলেও চাষ করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে এর আকার একটু ছোট হয়। আঁশ এবং কাঁটাযুক্ত এই মাছের খাদ্যগুণও অনেকটাই বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
মিল্ক ফিশ শাকাহারী মাছ। জলাশয়ের তলদেশে জন্মানো শৈবাল, ল্যাব-ল্যাব খেয়ে এরা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। নোনাজলে লবণের পরিমাণ কমবেশি হলে তা সহজেই সহ্য করে নিতে পারে এই প্রজাতির মাছ। সেই কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশে এই মাছের বেঁচে থাকার হারও বেশি। চাষের পুকুরে কম প্রোটিনযুক্ত খাবার দানা খাদ্য গ্রহন করে। ছয় মাসের চাষে বাজারজাত করণের উপযুক্ত ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন লাভ করে। ইলিশের মতোই দেখতে ও দেহে কাঁটার বিন্যাস থাকার জন্য এদের “দাক্ষিণাত্যের ইলিশ” হিসাবে গণ্য করা হয়।
১-২ সেন্টিমিটারের ধানীপোনা প্রতি বর্গ মিটারে ২০-৩০ পিস হিসাবে মজুত করা হয়। পুকুরের তলদেশে জন্মানো শৈবাল, ল্যাব ল্যাব এরা খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে। এই ধানীপোনা ৪-৬ সপ্তাহে ৫-৮ সেমি আকারের আঙুলে পোনায় পরিণত হয়, যেগুলি চাষের পুকুরে ছাড়ার উপযুক্ত।
৪-৬ মাসে , এই মাছ ৪০০-৫০০গ্রাম ওজন হয় ও ৪-৪.৫ টন/হেক্টর উৎপাদন পাওয়া যায়। টানা জাল বা ফাঁস জালের দ্বারা মিল্ক ফিশ ধরা যায়।
মাছের নাম - পেংবা মাছ
ভারতের মনিপুর রাজ্যের স্টেটফিশ হল “পেংবা” ।
সারা পৃথিবীতে কেবল চীনের ইউনান প্রদেশ, মায়নামারের (চীন্দুইন নদী) এবং ভারতের একমাত্র রাজ্য মনিপুর (ইম্ফল নদী ও লোকতাল লেক) এর নদনদী হ্রদে প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া যায় এই “পেংবা মাছ”।
যদিও অনেক কারণে মনিপুরের অত্যন্ত সুস্বাদু “পেংবা মাছ” হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু আশার আলো এই “পেংবা” মাছের চাষ শুরু হল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়া ব্লকে। আগামীতে এই মাছ বড় হলে পেংবা মাছের কৃত্তিম প্রজনন করে আরো মাছের ডিমপোনা তৈরি করা যাবে। তাই এই মাছ আগামী বছরে বাঙালি মাছ চাষিরা বিভিন্ন হ্যাচারি থেকে সহজে পেয়ে যাবেন। ভারতের মনিপুর রাজ্যের স্টেট ফিশ হল “পেংবা”।
আরও পড়ুন - জানুন চৌবাচ্চায় বাগদা চিংড়ি মাছ চাষের কৌশল
রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প , কমন কার্প এর সাথে মিশ্রচাষ করা যাবে , তবে পুকুরে গ্রাসকার্প না থাকলে ভালো। স্বাভাবিক পুকুরে জৈব সার ও পরিপূরক খাবার দিয়ে পেংবা মাছের আশানুরূপ বৃদ্ধি পাওয়া যাবে। এক বছরে ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজন হয়। তবে ৩০০ গ্রামের ওপর থেকেই বাজারজাত করা যায়।
আরও পড়ুন - রাজ্যের বেকার যুবকদের কম মূলধন বিনয়োগ করে অধিক লাভজনক মাছ চাষের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন