দেশের জলাশয়গুলোকে ভালো ভাবে কাজে লাগাতে হলে মিশ্র মাছের চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। জলাশয়ের প্রাকৃতিক খাবার, আলো, তাপ ও জলবায়ু ভালো ভাবে মাছের উৎপাদনের জন্য কাজে লাগবে এই মিশ্র চাষের ফলে। মিশ্র মাছ চাষের ফলে দেশে মাছের চাষ অনেক বেড়ে যাবে তার ফলে মাছের জোগান বেড়ে যাবে। রুই, কাতলা, মৃগেল ইত্যাদি মাছের চাষ দেশে প্রচলিত আছে। এর সঙ্গে উন্নত ধরনের কয়েকটি বিদেশি মাছ যেমন- সিলভার কার্প, কমন কার্প , গ্লাস কার্প মাছ মিশিয়ে মিশ্র চাষ করে সুফল পাওয়া গেছে।
মিশ্র মাছ চাষ শুরু করার আগে কিছু পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। প্রথমে পুকুরকে সংস্কার করতে হবে। চারা মাছ পুকুরে ছাড়ার আগে অবাঞ্ছিত জলজ উদ্ভিদ ও আগাছা সরিয়ে নিতে হবে। পুকুরে পাক থাকলে তা সরিয়ে নিতে হবে। দীর্ঘ আয়তাকার পুকুর গোলাকার ও বর্গাকার পুকুরের থেকে ভালো এই চাষের জন্য। বৃষ্টি বা বন্যার জলে পুকুর যাতে ভেসে না যায় তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিছু কিছু মৎসভুক মাছ যেমন - শোল, বোয়াল চারাপোনাগুলো খেয়ে নেয় তাই এদেরকে মেরে ফেলতে হবে। এর পর পুকুরে সার দিতে হবে। সার দেওয়ার আগে চুন দিতে হবে। চুন দেওয়ার ৭-১০ দিন পরে জৈব সার দিতে হবে তার ১৫ দিন পরে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। গোবর, ইউরিয়া,অ্যামোনিয়া সালফেট সার ব্যবহার করতে হবে।
সার থেকেই পুকুরে মাছের খাদ্য হয়, এদেরকে বলা হয় প্লাংকটন। এটা দুধরনের হয়, উদ্ধিদকণা ও প্রানীকণা যা খেয়ে মাছেরা বেঁচে থাকে। মাছেদের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য তাদেরকে পরিপূরক খাবার দিতে হবে। সরষে আর বাদামের খোলের গুঁড়ো আর চালের গুড়োর মিশ্রণ ভালো পরিপূরক খাদ্য। হেক্টর প্রতি ৫০০০-৭৫০০ চারা মাছ পুকুরে ছাড়া যেতে পারে। কাতলা ১০০০, রুই ১০০০, মৃগেল ১০০০, সিলভার কার্প ৭৫০ গ্লাস কার্প ১০০০ এই ভাবে পুকুরে চারা মাছ ছাড়া যেতে পারে। আগে যেখানে পুকুরে হেক্টর প্রতি ৬০০ কেজি মাছ উৎপন্ন হত সেখানে এখন এই ভাবে মাছ চাষ করে হেক্টর প্রতি ৩০০০-৬০০০ কেজি মাছ হচ্ছে। ১০-১২ মাস পরেই মাছ বাজারে বিক্রি করার জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে।
- দেবাশীষ চক্রবর্তী