মৌরলা মাছ মিষ্টি জলের মাছ এটি পুকুর, বিল, নদী ইত্যাদি জায়গায় পাওয়া যায়। এ ছাড়া মাঠের কম জলেও মৌরলা মাছ জন্মায়। এই মাছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ও ভিটামিন থাকে। বড় মাছের তুলনায় এই মাছে ভিটামিনের পরিমাণ বেশী।
মৌরলা মাছ সর্বোচ্চ ৪ থেকে ১০ গ্রাম ওজনের হয় এবং লম্বায় ৭ থেকে ৮ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ছোট ছোট শ্যাওলা মৌরলা মাছের প্রধান খাদ্য। এ ছাড়াও পচা উদ্ভিদ, ছোট প্রাণীকণা, চালের কুঁড়ো বা গমের ভূষি দেওয়া যায়। প্রাকৃতিক পরিবেশে মৌরলা মাছ পুকুরে, নালায়, খালে, বিলে ও নদীতে মে থেকে জুন মাস পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার লম্বা হলে মৌরলা মাছের প্রজনন হয় । প্রজননের সময় জলের পরিবেশ যেন দূষিত না হয়। প্রয়োজনে কীটনাশক ওষুধ সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। স্ত্রী মাছ পুরুষ মাছের চেয়ে একটু চওড়া হয়। গ্রীষ্মের শুরুতেই পুকুরে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ কেজি চুন ছড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে এবং যাতে রোদ লাগে তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বৃষ্টির জমা জলে জাল ফেলে অবাঞ্ছিত মাছ ও পোকামাকড় তুলে ফেলতে হবে। মাছের সঠিক বৃদ্ধির জন্য পরিপূরক খাদ্য হিসাবে মিহি চালের কুঁড়ো , গমের ভূষি বা বাদামের খইল ১ : ১ অনুপাতে দেহের ওজন অনুযায়ী ৩% হারে প্রতি দিন খেতে দেওয়া যেতে পারে। রোজ চার বার ১০০ গ্রাম করে প্রথম ১৫ দিন, ১৫০ গ্রাম করে তার পরের ১৫ দিন, ২৫০ গ্রাম করে তার পরের ৩০ দিন এবং ২৫০ গ্রাম করে তার পরের ৬০ দিন রোজ পরিপূরক খাদ্য দেওয়া দরকার। জলে বেশি পরিমাণে উদ্ভিদকণা এবং প্রাণীকণা থাকলে পরিপূরক খাবার দেওয়ার দরকার নেই। ৭ থেকে ৮ মাসে মৌরলা মাছ চাষে বিঘা প্রতি ৮০ থেকে ১০০ কেজি মাছ পাওয়া যেতে পারে। পুকুরে বিঘা প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ কোজি পচা গোবর সার অথবা ১০০ থেকে ১২৫ কেজি পচা পোলট্রির বর্জ্য দিতে হবে সার হিসেবে। এই মাছ বাঙ্গালীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। এই মাছের চাহিদা বাজারে খুব ভালো, তাই এই মাছ চাষ করে মুনাফা অর্জন করা যেতে পারে।
- দেবাশীষ চক্রবর্তী