শূকর পালনে ছাগলের চেয়েও অধিক লাভ পাওয়া যায় | কারণ, এদের জন্য নগদ খরচের পরিমান খুবই অল্প | সর্বোপরি, ১০টি শুকরী ও ১ টি শূকর পালন করলে বছরে প্রায় ১৬০টি বাচ্চা পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে, শূকরের চাহিদাও খুব ভালো |
অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীর তুলনায় শূকরই তাড়াতাড়ি সংখ্যায় বাড়ে। ওজনেও তাড়াতাড়ি বাড়ে। এরা অল্প বয়সে বাচ্চা দেয় এবং বছরে ২-৩ বার বাচ্চা দেয়। হিসেব করলে দেখা যায় যে প্রতি কেজি ওজন বাড়ার জন্য এদের প্রয়োজন মাত্র ৩-৪ কেজি সুষম খাদ্য। শূকরের দেহের ওজনের প্রায় ৬০-৮০ ভাগ মাংস পাওয়া যায়, যেখানে ছাগলের পাওয়া যায় ৫০-৫৫ ভাগ | তাই, শূকর প্রতিপালনে কৃষকরা খুব লাভবান হয়ে থাকেন | এদের মল-মূত্র মূল্যবান সার যা কৃষি কাজে ও মৎস্য চাষে ব্যবহার করা হয় । তাই শূকর পালন (Pig cultivation) একটি কম পরিশ্রমের লাভজনক ব্যবসা। ভারতীয় অঞ্চলগুলোতে ঘুঙরু জাতের শূকর উন্নতমানের, পশ্চিমবঙ্গ, নেপাল, ভুটান ও হিমালয়ের পাদদেশে এই জাতের শূকর মেলে |
শূকরদের কি খাওয়াতে হয় (Feed for pig):
শূকরের জন্য সুষম খাবার দরকার। এরা সিদ্ধ তরিতরকারি, মূল জাতীয় ফসল, কুমড়ো-শাকসবজি খেতে ভালোবাসে। এছাড়া রান্নাঘর বা হোটেল-রেস্তোরার ফেলে দেওয়া জিনিস, মাছ-মাংসের উচ্ছিষ্ট , চালডাল, গুটি পোকার বীজ, দুধ, মাখন, ছানার জল ইত্যাদিও এরা খেয়ে থাকে।
শূকরদের কিরকম ঘর প্রয়োজন (Pigs house):
এদের জন্য স্বল্প খরচে মজবুত ও আরামদায়ক ঘর তৈরি করতে হয়। ঘরের নীচের ৩ থেকে ৫ ইঞ্চি দেওয়াল দেওয়ার পর বাকিটা জাল দিয়ে ঘিরতে হবে। ছাদে টালি বা খড় দিতে হবে। ঘরের মেঝে যেন শুকনো থাকে এবং গর্ত না থাকে। প্রজননক্ষম শুকরের জন্য ৪০-৫০ বর্গ ফুট থাকার জায়গা প্রয়োজন। ২ থেকে ৬ মাস বয়সের প্রতিটি বাচ্চার ১০-১৬ বর্গ ফুট এবং তার উপরের বয়সের জন্য ১৬-২০ বর্গ ফুট থাকার জায়গা লাগে। অর্থাৎ বাচ্চাসহ প্রসূতির জন্য একটি ৬০-৮০ বর্গ ফুট ঘরের দরকার । সকালে-বিকালে চরার জন্য এদের কিছু সময় ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন।
খাবার ও জলের পরিমান:
৪০ কেজি ওজনের প্রতিটি শূকরের জন্য দৈনিক ২-৬ লিটার জলের দরকার হয়। খাবার দেবার পাত্র মজবুত করে তৈরি করতে হবে। এজন্য সিমেন্ট দিয়ে পাত্র তৈরি করা যেতে পারে। বড়োদের জন্য মেঝে থেকে খাদ্যপাত্রের উচ্চতা থাকবে ৯ ইঞ্চি, প্রস্থ ১৫ ইঞ্চি। কম বয়সিদের জন্য উচ্চতা কম হবে।
বাচ্চাদের খাদ্য:
জন্মের পর বাচ্চাদের ৩-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত দুধ খাওয়াতে হবে। ১৫ দিন বয়স হওয়ার পর থেকে বাচ্চাদের সুষম খাদ্য খাওয়ানো অভ্যাস করতে হবে। প্রথম দিকে দৈনিক ৫-৬ বার ধীরে ধীরে ২-৩ বারে ভাগ করে দিতে হবে । খাবার পাত্রের কাছাকাছি শীতল জলের পাত্র সবসময় থাকবে। মাঝে মাঝে শূকরের ওজন দেখে নিলে খাওয়ানো ঠিক হচ্ছে কিনা বোঝা যাবে।
আরও পড়ুন - মুরগির চেয়েও বেশি লাভজনক! ক্যাম্পবেল হাঁস পালনের পদ্ধতি
গাভিন শূকরীর যত্ন:
গাভিন শূকরীকে প্রসবের ১৫ দিন আগে থেকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে। দেখতে হবে যেন অন্য কোনো শূকর যেন ঐ ঘরে প্রবেশ করতে না পারে। ঘরে বিচালি ও শুকনো ঘাস ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রসবের ২-৩ দিন আগে থেকে শূকরীকে নরম বা ভেজা খাবার এবং অন্তত ২ কেজি নরম ঘাস খেতে দিতে হবে। বাচ্চা বের হওয়ার জন্য ২-৮ ঘন্টা সময় লাগবে। শূকর প্রতি ১৫-২০ মিনিট অন্তর এক একটা বাচ্চ প্রসব করে। বাচ্চা হওয়ার পর প্রতিটি বাচ্চাকে শুকনো কাপড় বা ভালো চট দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে দিতে হয়। প্রসবের ১২ ঘন্টা খাবার দিতে হবে। প্রথম ২-৩ দিন হালকা খাবার দিতে হয়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Fish farming: আপনি কি মাছ চাষে আগ্রহী? মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষে পাবেন দ্বিগুন লাভ