অনেকেই শখের বশে পায়রা পালন করেন। এছাড়া আমাদের দেশে এখন বাণিজ্যিকভাবেও পাখি পালন করছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে বেকারত্ব দূর করতে পায়রা পালন ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। পায়রা পালন করতে বেশি জায়গারও প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে কম খরচে অল্প সময়ে বাচ্চা পাওয়া যায়, বাজারে দামও বেশি। তাই খুব সহজেই পায়রা পালন করে আয় করা সম্ভব।
লাভজনক এই পাখি পালনের জন্য বাড়তি জ্ঞান ও শিক্ষার প্রয়োজনও হয় না। শুধু সামান্য নজরদারি আর সতর্ক হলেই পাখি পালন করে বেকারত্ব দূর করা যায়। পায়রা প্রতি মাসে দুটি করে বাচ্চা দেয়। বাচ্চার বয়স ২১ দিন হলেই বিক্রির উপযোগী হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো অন্যান্য পাখির মতো পায়রা খাদ্যের অপচয় বেশি করে না। বরং বলা যায় অপচয়রোধী পাখি পায়রা।
জাত:
পায়রার বিভিন্ন জাত রয়েছে। বলা হয় পৃথিবীতে ৬০০ জাতের পায়রা রয়েছে। ‘জালালি পায়রা’ উন্নত জাতের দেশি পায়রা। এ ছাড়াও মাংস উৎপাদনের জন্য হোয়াইট কিং, টেক্সেনা, সিলভার কিং, হামকাচ্চা, কাউরা, হোমার, গোলা, ডাউকা, লক্ষ্যা ও পক্কা উল্লেখযাগ্য পায়রার জাত। আমাদের দেশে শখের বশে সিরাজী, ময়ুরপঙ্খী, লাহোরি, ফ্যানটেইল, জেকোভিন, মুখি, গিরিবাজ, টাম্পলার, লোটন প্রভৃতি কবুতর বেশি চাষ করা হয়।
ঘর তৈরী(Home):
পায়রার জন্য ঘর তৈরি পদ্ধতি আগে জেনে নিতে হবে। ক্ষতিকর প্রাণী ও পাখি যাতে পায়রাকে খেয়ে ফেলতে না পারে সে জন্য প্রয়োজন উঁচু ও শক্ত ঘর তৈরি করতে হবে। হালকা কাঠ, বাঁশ ও বাঁশের চাটাই, শন, পলিথিন, খড় ইত্যাদি সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে পায়রার ঘর বানানো যায় সহজেই।
প্রতি জোড়া (একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী) পায়রার জন্য ১ বর্গফুট করে ঘর হলেই চলে। একই সঙ্গে একই জায়গায় পায়রার ঘর কয়েক তলা করা যেতে পারে। এতে খরচও বাঁচে। ১ বর্গফুট মাপের ঘরের সামনে ৫ থেকে ৬ ইঞ্চির বারান্দা অবশ্যই রাখতে হবে, যাতে পায়রা সহজে দূর থেকে উড়ে এসে আশ্রয় নিতে পারে আবার খাবারও খেতে পারে। প্রতি ঘরের দরজা রাখতে হবে ৪ ইঞ্চি বাই ৪ ইঞ্চি।
আরও পড়ুন -Boal fish farming process: বানিজ্যিক উদ্যোগে বোয়াল মাছ চাষ পদ্ধতি
ঘর সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রতি মাসে ১ বার করে ঘর পরিষ্কার করে দিতে হবে। ডিম পাড়ার সময় যাতে সহজেই খড় সংগ্রহ করতে পারে সে জন্য পায়রার ঘরের আশপাশে খড় রেখে দিতে হয়। ঘর রাখতে হবে সবসময় শুকনো
খাদ্য(Food):
পায়রা সাধারণত জোয়ার, ভুট্টা, ধান, চাল, কলাই, কাউন, মটর, খেসারি, সরিষা, গম পায়রার পছন্দনীয় খাবার। এসব খাদ্য প্রতিদিন প্রত্যেকটি পায়রার জন্য ৩৫ থেকে ৬০ গ্রাম খাদ্য প্রয়োজন।
এছাড়া বাজারেও কিনতে পাওয়া যায় পায়রার খাবার। তবে সেসব খাদ্যে ১৫% থেকে ১৬ % আমিষের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। প্রতি ঘরের সামনে নিয়ম করে খাবার রেখে দিতে হবে সকাল ও বিকালে, সেই সঙ্গে দিতে হবে পর্যাপ্ত জলের জোগানও। ঘরে পায়রার সুষম খাদ্য তৈরি করা যায়।
পায়রার জন্য প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যে ভুট্টা ভাঙা ৩৫ গ্রাম, গম ভাঙা ২০ গ্রাম, সরিষা দানা ১৫ গ্রাম, ছোলা ভাঙা ২০ গ্রাম, সয়াবিন ভাঙা ৫ গ্রাম, চালের কুঁড়া ৪.৫ গ্রাম, লবণ ০.৫ গ্রাম।
রোগ ও প্রতিকার(Disease management system):
পায়রার খুব বেশি রোগের প্রকোপ দেখা যায় না। তবে যেসব রোগ হয় সেগুলোর মধ্যে বসন্ত, কলেরা, রক্ত আমাশয় যাকে বলা হয়ে থাকে ককসিডিওসিস, আরও আক্রমণ করতে পারে কৃমি। পায়রার বসন্ত রোগে পালকবিহীন স্থানে ফোস্কা পড়ে। গলার ভেতর ঘা হয়, খেতে পারে না। রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত পায়রার গুটিতে টিংচার আয়োডিন বা স্যাভলন লাগানো যেতে পারে। পায়রার বয়স যখন চার সপ্তাহ তখন পিজিয়ন পক্স টিকা বুকে ও পায়ের পালক তুলে সিরিঞ্জ দিয়ে দিলে বসন্ত রোগ হয় না।
কলেরা রোগ হলে অস্বাভাবিকভবে পায়রার দেহের তাপমাত্রা বাড়ে। শ্বাসকষ্ট হয়, পিপাসা বাড়ে, সবুজ বা হলুদ রঙের ঘন ঘন পায়খানা হতে পারে, পায়রার ওজন কমে যায়। শেষে পায়রা হঠাৎই মারা যায়। কলেরা রোগে আক্রন্ত পায়রাকে রোগ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টেরামাইসিন ক্যাপসুল বা ইনজেকশন বা কসুমিক্স প্লাস দেয়া যেতে পারে। রক্ত আমাশয় বা ককসিডিওসিস রোগে রক্ত পায়খানা হয়। খাবার প্রতি অরুচি বাড়ে ও শরীরে দুর্বলতা দেখা যায়। শেষে পালক ঝুলে পড়ে।
রোগ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গ বা রোগের আশঙ্কা করলে জলে মিশিয়ে ই.এস.বি-৩ আ এমবাজিন জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে প্যাকেটের নির্দেশনা মতো। কৃমি হলে পায়রা দুর্বল হয়ে পড়ে ও ডায়রিয়া হয়। জলের পিপাসা বাড়ে। রক্তশূন্যতা দেখা যায়। ঠিকমতো পায়রার যত্ন নিলে এটি পালন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায়।
আরও পড়ুন -Azolla cultivation guide: বেকার সমস্যা দূরীকরণে অ্যাজোলা চাষে লাভ করুন দ্বিগুন