শূকর পালনে লাভ বেশি, কারণ - এদের জন্য নগদ খরচের পরিমাণ খুব অল্প। অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীর তুলনায় শূকরই তাড়াতাড়ি সংখ্যায় বাড়ে। ওজনেও তাড়াতাড়ি বাড়ে। এরা অল্প বয়সে বাচ্চা দেয় এবং বছরে ২-৩ বার বাচ্চা দেয়। হিসেব করলে দেখা যায় যে প্রতি কেজি ওজন বাড়ার জন্য এদের প্রয়োজন মাত্র ৩-৪ কেজি সুষম খাদ্য। শূকরের দেহের ওজনের প্রায় ৬০-৮০ ভাগ মাংস পাওয়া যায়, যেখানে ছাগল-ভেড়ার পাওয়া যায় ৫০-৫৫ ভাগ । ৬ মাসের মধ্যেই খুব তাড়াতাড়ি ও ভালো মুনাফায় শূকর বাজারজাত করা যায়। তাই অল্পসময়ে লাভ দেখা যায়। এদের মল-মূত্র মূল্যবান সার। কৃষি কাজে ও মৎস্য চাষে শূকর খামার অন্যতম সহায়ক। শূকরের চামড়া নানারকম হাল্কা চামড়ার জিনিস তৈরিতে কাজে লাগে। তাই শূকর পালন একটি কম পরিশ্রমের লাভজনক ব্যবসা।
- ১) লাজ হোয়াইট ইয়র্কশায়ার
- ২) মিডল হোয়াইট ইয়র্কশায়ার
- ৩) ল্যান্ডেশ
- ৪) হ্যাম্পশায়ার
- ৫) বার্কশায়ার
- ৬) ঘুশরু
শুকরদের কী খাওয়াতে হয় ?
শূকরের জন্য সুষম খাবার দরকার। এরা সিদ্ধ তরিতরকারি, মূল জাতীয় ফসল, কুমড়ো-শাকসবজি খেতে ভালোবাসে। এছাড়া রান্নাঘর বা হোটেল-রেস্তোরার ফেলে দেওয়া জিনিস, মাছ-মাংসের ছাট, চালডাল, আটাকলের উদ্ধৃত্ত খাবার, গুটি পোকার বীজ, সুরা জাতীয় পানীয় কারখানার ফেলে দেওয়া অংশ, দুধ, মাখন, ছানার জল ইত্যাদিও এরা খেয়ে থাকে।
শুকরদের জন্য কী রকম ঘর দরকার ?
এদের জন্য স্বল্প খরচে মজবুত ও আরামদায়ক ঘর তৈরি করতে হবে। ঘরের নীচের ৩ থেকে ৫ ইঞ্চি দেওয়াল দেওয়ার পর বাকিটা জাল দিয়ে ঘিরতে হবে। ছাদে টালি বা খড় দেওয়া যেতে পারে। ঘরের মেঝে যেন শুকনো খটখটে থাকে এবং গর্ত না থাকে। ছাদে টালি বা খড় খড় ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রজননক্ষম শুকরার জন্য ৪০-৫০ বঃ ফুঃ থাকার জায়গা প্রয়োজন। ২ থেকে ৬ মাস বয়সের প্রতিটি বাচ্চার ১০-১৬ বঃ ফুঃ এবং তার উপরের বয়সের জন্য ১৬-২০ বঃ ফুঃ থাকার জায়গা লাগে। অর্থাৎ বাচ্চাসহ প্রসূতির জন্য একটি ৬০-৮০ বঃ ফুঃ ঘরের দরকার হবে। ঘরের বাইরে একই মাপের খোলা শুকনো জায়গা ঘিরে সেখানে এদের রাখা হয়। সকালে-বিকালে চরার জন্য এদের কিছু সময় ছেড়ে দেওয়া ভালো। মল-মূত্রের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকলে ওরা সেখানেই যাবে।
শূকর পালনের উদ্দেশ্যে কিভিবে খামার তৈরি করবেন?
একটি ছোটো খামার তৈরি করতে হলে অন্তত ১০ টি শূকরীর জন্য ১ টি নানা বয়সী শূকরের জন্য খাবারের জায়গায় মাপ শূকর রাখতে হবে। তাদের উপযুক্ত দুধ ছেড়ে দেওয়া প্রতিটি ছানার জন্য ৯-১২ বঃ ইঞ্চি। বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা এবং লাভজনক ৪ থেকে ৬ মাস বয়সের প্রতিটির জন্য ১২-১৫ বঃ ইঞ্চি। বিপণনের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশি ৬ মাসের বেশি বয়সের প্রতিটির জন্য ১৫-১৮ বঃ ইঞ্চি। শূকরীর সঙ্গে উন্নত জাতের বিদেশী 2 শূকরের সংমিশ্রণে ভালো জাতের বাচ্চা পাওয়া যাবে। প্রজননের পর ৯ মাস বয়সের শূকর পালনের মোট ব্যয়ের ৭০ ভাগ ব্যয় হয় খাদ্যে। ৬ মাস পর্যন্ত বাচ্চারা মায়ের সঙ্গে থাকে। এই ৬ মাসে বাচ্চার আনুমানিক ওজন দাঁড়ায় ৬০ কেজি। তখনই এদের বিক্রি করলে লাভ পাওয়া যাবে।জননক্ষম প্রতিটি শূকরের জন্য ২০-৩০ বঃ ইঞ্চি।
শূকরদের জন্য খাবার আর পানীয় জলের ব্যবস্থা
৪০ কেজি ওজনের প্রতিটি শূকরের জন্য দৈনিক ২-৬ লিটার জলের দরকার হয়। খাবার দেবার পাত্র মজবুত করে তৈরি করতে হবে। এজন্য সিমেন্ট দিয়ে পাত্র তৈরি করা যেতে পারে। বড়োদের জন্য মেঝে থেকে খাদ্যপাত্রের উচ্চতা থাকবে ৯ ইঞ্চি, প্রস্থ ১৫ ইঞ্চি। কম বয়সিদের জন্য উচ্চতা কম হবে।
শূকর পালনের জন্য আদর্শ খাদ্যের তালিকা
- যথাযথ ভাবে বাচ্চা পালন, দুধ উৎপাদন এবং লাভজনক হারে মাংস উৎপাদন করতে হলে যে খাদ্য দরকার তা-ই হল আদর্শ খাদ্য। এরকম একটি আদর্শ খাদ্যের তালিকা দেওয়া হল।ভুট্টা বা গম ভাঙা গম গমের ভুসি এদের প্রতি ১০০ কেজি খাবারের সঙ্গে ৫০০ গ্রাম লবণ, ১ কেজি ধাতব লবণ ও ২৫ গ্রাম ভিটামিন এ.বি.ডি. ৪০৫ গ্রাম, আরোফ্যাক্ট ২ এ বা টি.এম ৫ ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। খাবার পরিবর্তন করেত হলে তা ধীরে ধীরে করতে হবে।
- নয় মাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত শূকরীকে প্রজননের কাজে ব্যবহার করা যাবেনা। প্রথম দিকে ২-৩ স অন্তর প্রজননে ব্যবহার করা যাবে। কিছুদিন বাদে সপ্তাহে ১ বার আর বয়স বাড়লে ১ বছরে পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করা চলবে (সপ্তাহে ২ বার)। শূকরী ৩ দিন গরম থাকে। বেশি বাচ্চা পেতে গেলে গরম হওয় পরেই ১বার এবং ১২ থেকে ২৪ দিন বাদে ১ বার শূকর দেখাতে হবে।
- গাভিন শূকরীকে প্রসবের ১৫ দিন আগে থেকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে। দেখতে হবে যেন অন্য কোনো শূকর যেন ঐ ঘরে প্রবেশ করতে না পারে। ঘরে বিচালি ও শুকনো ঘাস ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রসবের ২-৩ দিন আগে থেকে শূকরীকে নরম বা ভেজা খাবার এবং অন্তত ২ কেজি নরম ঘাস খেতে দিতে হবে। বের জন্য ২-৮ ঘন্টা সময় লাগবে। শূকর প্রতি ১৫-২০ মিনিট অন্তর এক একটা বাচ্চ প্রসব করে। বের পর প্রতিটি বাচ্চাকে শুকনো কাপড় বা ভালো চট দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে দিতে হয়। প্রসবের ১২ ঘন্টা খাবার দিতে হবে। প্রথম ২-৩ দিন হালকা খাবার দিতে হয়। ৩-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চাদের মায়ের দুধ চলবে।
- জন্মের পর বাচ্চাদের ৩-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত দুধ খাওয়াতে হবে। শূকরছানা জন্মাবার কয়েক মিনিটের মধ্যেই দাঁড়াতে পারে ও মায়ের বাটে মুখ দিয়ে গাঁজলা দুধ খেতে পারে। ১৫ দিন বয়স হওয়ার পর থেকে বাচ্চাদের সুষম খাদ্য খাওয়ানো অভ্যাস করতে হবে। প্রথম দিকে দৈনিক ৫-৬ বার ধীরে ধীরে ২-৩ বারে ভাগ করে দিতে হবে । খাবার পাত্রের কাছাকাছি শীতল জলের পাত্র সবসময় থাকবে। মাঝে মাঝে শূকরের ওজন দেখে নিলে খাওয়ানো ঠিক হচ্ছে কিনা বোঝা যাবে।
- শূকরের বাচ্চা পাওয়ার জন্য রাষ্ট্ৰীয় শূকর খামার, হরিণঘাটা, নদীয়া-এই ঠিকানায় যোগাযোগ করতে হবে।
- শুকরদের শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই স্থানীয় প্রাণী চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। প্রাণী-বন্ধুরও সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
সু্ত্র: পঞ্চায়েত এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, গভর্নমেন্ট অফ ওয়েস্টবেঙ্গল
রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)