বাড়ছে লাম্পি ভাইরাসের প্রভাব, ১৬ রাজ্যে জারি করা হল সর্তকতা 'রাক্ষুসে মাছ'-বিপদ কোথায়? 'MFOI, VVIF কিষাণ ভারত যাত্রা' গুজরাটের বিভিন্ন গ্রামে পৌঁছে কৃষকদের সম্মানিত করেছে
Updated on: 19 October, 2022 11:38 AM IST
Fish Farming

মাছে-ভাতে বাঙালি! বাঙালির পাতে মাছ না পড়লে পঞ্চব্যঞ্জনের সমাহারও যেন ফিকে হয়ে পড়ে। বিয়েবাড়ি থেকে পৈতে বাড়ি আমিষের পদে মাছের জায়গা এক আলাদা উচ্চতায়। অর্থনীতির দিক থেকে প্রধানত আমিষের চাহিদা পূরণ করার জন্য মৎস্য সম্পদের ভূমিকা বলাই বাহুল্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে। এখনকার এগিয়ে চলা পৃথিবী পুরোপুরি ভাবে প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আধুনিক কলাকৌশল ও প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রাণী জগতে মনুষ্য সম্প্রদায়ের অবদান বিপুল। গোটা বিশ্বের উৎপাদন কৌশল বর্তমানে বাণিজ্যের উপর দাঁড়িয়ে। অল্প শ্রম ও পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে বেশি পরিমাণে মুনাফা অর্জন এর প্রধান উদ্দেশ্য। মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও এর অনথ্য নয়। বিশ্ব জুড়ে সব দেশে বৈজ্ঞানিক কৌশলে উন্নত জাতের মাছের চাষ হয়ে চলেছে। জায়গায় জায়গায় মৎস্য খামার গড়ে ওঠা এর প্রধান দিক।

আমাদের রাজ্যে কৃত্রিম উপায়ে মৎস্য চাষের (pisciculture) জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প লক্ষ্য করা যায়। সরকারের সঙ্গে জনগণকেও এই শিল্পে উন্নতি ঘটানোয় উদ্যোগ নিতে হবে। বেশি সংখ্যক মৎস্য খামার গড়ে উঠলে পুষ্টির চাহিদা অনেকাংশে মিটবে। ‘পতিত পুকুরে মৎস্য চাষ’ যা দেশের দারিদ্র্য ঘোচাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রযুক্তি অত্যন্ত সহজ। সমাজের দরিদ্র শ্রেণী এই বিকল্প চাষের মাধ্যমে লাভেরও মুখ দেখছেন। বেশিরভাগ কৃষিজীবী মানুষ গ্রামে বাস করেন। কৃত্রিম উপায়ে মাছের চাষ গ্রামীণ মানুষের অর্থনীতি সম্প্রসারণে এক বিশেষ ভূমিকা নেয়। বাড়ির পাশে থাকা পতিত পুকুরেই কৃত্রিম উপায়ে মৎস্য চাষ করা যায়। পরিকল্পিত ভাবে মৎস্য চাষে করলে এইসব দরিদ্র মানুষেরা ভীষণভাবে উপকৃত হবেন একথা অস্বীকারের কোনো জায়গাই নেয়।

মৎস্য চাষ প্রযুক্তি খুবই সহজ এক পদ্ধতি। এই চাষ শিখে ফেললে আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকার ও নিরক্ষর লোকজন অর্থের মুখ দেখবেন। এই বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাছ চাষের জন্য প্রয়োজন উন্নত জাতের পোনা, যা দ্রুত বেড়ে চলতে পারে। নিয়ম অনুসরণ করলেই মাছের পোনা কয়েক মাসের মধ্যে দ্রুত বাড়তে পারে।

পুকুরে রাক্ষুসে মাছ থাকলে মাছের চাষ ভালো হয় না। রাক্ষুসে মাছের উদাহরণ স্বরূপ বলা চলে শোল, গজার, টাকি প্রভৃতি মাছের কথা। এরা মাছের বাচ্চা খেয়ে ফেলে। তাই মাছ চাষের শুরু করার আগে পুকুরের সব জল শুকিয়ে ফেলে রাক্ষুসে মাছ সরাতে হবে। বড় আকারের গাছের ছায়া পুকুরে পড়লে ডালপালা ছেঁটে দেওয়া উচিত। প্রথম অবস্থায় পুকুরে চুন দিতে হবে। পাত্রে চুন ফুটিয়ে নিয়ে জলে মেশানো চুন পুকুরে ছিটিয়ে দেওয়া উচিত। চুনের মাত্রা প্রতি শতাংশে এক কেজি হলে ভালো। পুকুরে চুন দেওয়া হয়ে গেলে, পাঁচ দিন পর সার দিতে হবে। জৈব ও রাসায়নিক দুই ধরণের সারই পুকুরে দেওয়া প্রয়োজন। গোবর ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা জৈব সার হিসাবে উত্তম বলে ধরা হয়। প্রতি শতাংশে এসব সারের মাত্রা ইউরিয়া ১২৫ গ্রাম, টিএসপি ৬৫ গ্রাম এবং এমপি ২০ গ্রাম। জৈব ও রাসায়নিক দুই ধরনের সারই একসঙ্গে নিয়ে একটি পাত্রে জল দিয়ে ভালোভাবে গুলে নিতে হবে। তারপর এই মিশ্রিত সার পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। পুকুর তৈরি হয়ে গেলে, ১০-১৫ দিন পর ১০-১৫ সেন্টিমিটার সাইজের ভালো প্রজাতির পোনা ছাড়তে হবে। বেশি উৎপাদনেই জন্য পুকুরে একসঙ্গে ৭-৮ ধরনের মাছ ছাড়তে হবে। বিভিন্ন ধরনের পোনা ছাড়া হলেও সেগুলির আকার সমান হলে ভালো। পোনা ছাড়ার পর দিন থেকে খাবার দেওয়া উচিত। মাছের মোট ওজনের শতকরা ২ ভাগ হারে প্রতিদিন খাবার দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ পুকুরে বিভিন্ন মাছের মোট ওজন যদি ১০০ কেজি হয় তবে প্রতিদিন মাছের খাবার দিতে হবে ২ কেজি। খাবারের অর্ধেক হবে কুঁড়া এবং বাকি অর্ধেক হবে সরিষার খৈল ও চালের কুঁড়া যা হাঁড়িতে রাতের বেলা ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকাল হলে খৈল ও কুঁড়া দিয়ে গোল বল বানিয়ে নিতে হবে। খাবার দেওয়ার আগে পুকুরের চার কোণায় মুখ বড় দেখে চারটি হাঁড়ি বসাতে হবে।

পতিত পুকুরে মাছ চাষের পদ্ধতি: (Methods of fish farming in fallow ponds)

১. পেন তৈরির মধ্যে দিয়ে : বড় জলাশয়ের কিছু এলাকা নিয়ে বাঁশ, গাছের ডাল প্রভৃতি দিয়ে মাছের নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরী করে তার চারপাশে বেড়া বা জাল দিয়ে পেন তৈরি করা হয়। রাক্ষুসে মাছ সরানো হয়ে গেলে ৫/৮ ইঞ্চি পরিমাপের পোনা প্রতি শতাংশে ২২০টি ছাড়া যায়। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য পোনার দেহের মোট ওজনের ৩ ভাগ হারে খৈল, ভুষি, কুঁড়া প্রভৃতির সমন্বয়ে খাবার নিয়ম করে রোজ জলে দিতে হবে।

২. খাঁচা তৈরির মধ্যে দিয়ে : প্লাবিত জলাশয়ের গভীর অঞ্চলে খাঁচা তৈরি করে নিয়ে মাছ উৎপাদন করা যায় তবে এ পদ্ধতিতে তেলাপিয়া বা নাইলোনাটিকার চাষ করলে কম টাকায় বেশি উৎপাদন করা যায়।

৩. কাঠা বা কমর তৈরি করে : এই পদ্ধতির চাষে কাঠা বা কমর বানিয়ে গাছপালার ডাল দিয়ে মাছের বাসস্থান তৈরি করতে হবে। জীবজন্তুর নাড়ি-ভুঁড়ি এবং বর্জ্য দিয়ে কাঠা দিলে মাছগুলো আশ্রয় ও খাদ্যের জন্য একত্রিত হয়। গাছপালার ঝাঁক থেকে তৈরী হওয়া শ্যাওলা খেয়ে মাছ বড় হতে থাকে। প্রতি তিন মাস বাদে ঝাঁক তুলে বড় মাছ বাজারে পাঠালে অর্থনৈতিক ভাবে লাভের মুখ দেখবেন চাষিরা।

৪. ধানক্ষেতে মাছ চাষ : নিচু জমির পাড় দিয়ে জমিতে জল ঢোকানোর পর পাড় মেরামত করে ধানি জমিতে মাছ চাষের পদ্ধতিও বহুল ভাবে জনপ্রিয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রতি শতাংশ জলাশয়ের জন্য ৩০টি সরপুঁটি, ২০টি কমন কার্প হিসেবে পোনা ছাড়তে হবে। মাছের মল সার হিসেবে একপ্রকারে জমির ধানের ফলন বৃদ্ধি করে।

Farming

মাছ তোলার উপযুক্ত সময় : নিয়ম মেনে মাছ চাষের পর ৩-৪ মাস হলেই বড় মাছগুলো তুলে নিতে হবে। সাধারণত ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের মাছ তুলে নিয়ে নতুন ভাবে বেশি করে পোনা ছাড়তে হয়। এই নিয়ম মেনে চললে আর্থিক লাভের পরিমান চাষি ভাইদের দ্বিগুন হয়ে উঠবে।

English Summary: Pisciculture in easiest way
Published on: 05 July 2021, 10:26 IST

எங்களுக்கு ஆதரவளியுங்கள்!

প্রিয় অনুগ্রাহক, আমাদের পাঠক হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকরা আমাদের কৃষি সাংবাদিকতা অগ্রগমনের অনুপ্রেরণা। গ্রামীণ ভারতের প্রতিটি কোণে কৃষক এবং অন্যান্য সকলের কাছে মানসম্পন্ন কৃষি সংবাদ বিতরণের জন্যে আমাদের আপনার সমর্থন দরকার। আপনার প্রতিটি অবদান আমাদের ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান।

এখনই অবদান রাখুন (Contribute Now)