ভূমিহীন শ্রমিক ও প্রান্তিক চাষিদের অতিরিক্ত রোজগারের লক্ষ্যে ভারতবর্ষের আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে শূকর উৎপাদনের এক বিশেষ ভূমিকা আছে। অত্যাধিক জনসংখ্যার চাপ, কর্মহীনতা ও তদজনিত সমস্যা মোকাবিলায় শূকর একটি অর্থকরী চাষ। বৈজ্ঞানিক প্রথায় শূকর উৎপাদন করে সংসার প্রতিপালনের উপযোগী অর্থ আয় আজ আর অস্মভব নয়। আমাদের অপুষ্টি বিশেষ ভাবে প্রোটিন বা আমিষজাতীয় খাদ্যের অপুষ্টি বেরেই চলেছে। এই চাহিদা মেটাতে চেষ্টা চলছে নানাভাবে। দেশে শূকর উৎপাদন বৃদ্ধি হলে এই সমস্যার অনেকাংশে সমাধান ঘটবে। এক্ষেত্রে শূকর মাংসের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে লক্ষ্যনীয়ভাবে।
পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের বিভিন্ন অংশে শূকর উৎপাদনের সুযোগ সুবিধা বিভিন্ন রকমের, উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চলে এটি বিশেষ ভাবে সম্ভাবনাময়। এই অঞ্চলে এবং উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে শূকরের মাংসের চাহিদা প্রচুর। অন্যান্য জাতের শূকরের থেকে এখানকার ঘুঙরু জাতের শূকর উন্নতমানের। একদম সাধারন ব্যবস্থাপনায় এর উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। এই শূকর এর স্বাদ ও অনেক বেশী তাই এর চাহিদা ভীষণ বেশি এবং এখানকার ভূমিহীন শ্রমিক ও প্রান্তিক চাষিদের অতিরিক্ত রোজগারের লক্ষ্যে এটি একটি খুব লাভবান চাষ।
এই শূকর পশ্চিমবঙ্গ, নেপাল ও ভুটানের হিমালায়ের পাদদেশ অঞ্চলে পাওয়া যায়। এদের গায়ের রং কালো, চওড়া কান এবং দেহ বিশালাকায়। এদের দেহে লোমের পরিমাণ বেশি হয়। শিরদাঁড়ার উপরে লোমগুলি বড় এবং শক্ত প্রকিতির হয়। এদের নাক উপরের দিকে বাঁকানো এবং লেজ অনেকটা লম্বা হয়। ঘুঙরু জাতের শূকর সাধারণত শান্ত স্বভাবের হয় ও এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। সঠিক মাত্রায় খাবার খাওয়ালে ৭ মাসে ওজন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কেজি হতে পারে। এদের প্রজনন ক্ষমতাও বেশি। এদের বাচ্চা দেবার ক্ষমতা অনেকটা সাদা বিদেশী শূকর লার্জ হোয়াইট ইয়র্কশায়ারের মত।
-
শূকরের নিম্নমানের খাদ্যকে উৎকৃষ্ট মানের মাংসে পরিণত করার ক্ষমতা অনন্য, এরা সাধারণত ১কেজি মাংস রূপান্তরিত করে তিন কেজি খাবার খেয়ে।
-
শূকরের বৃদ্ধির হার খুব বেশি ৬-৭ মাসে ঘুঙরু জাতের শূকর ওজন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কেজি হতে পারে।
-
একটি ঘুঙরু জাতের শূকরীর থেকে একবারে গড়ে ১২-১৫ টি বচ্চা পাওয়া যেতে পারে। শূকর সাধারণত বছরে দুই বার বাচ্চা দেয়। অতয়েব একটি শূকরীর থেকে সাড়া বছরে গড়ে ২৪-৩০ টি বচ্চা পাওয়া যেতে পারে।
-
শূকরের মাংসে হারের পরিমাণ কম থাকে, তাই মাংসের পরিমাণ বেশি হয়। প্রায় ৬০-৭০ ভাগ দেহের ওজনের সমান মাংস পাওয়া যায়।
-
এই প্রজাতির শূকর সুষম খাদ্য ছারাও রান্নাঘর বাঁ হোটেলের ফেলে দেওয়া সকল প্রকার উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে ওজন বারাতে পারে ফলে এর খাবারের খরচ অনেক কমে যায়।
-
শূকর পালনে পরিশ্রম কম লাগে এবং অল্প সময়েই ভালো লাভ পাওয়া যায়।
শূকর উৎপাদন ব্যবসায় যথাযথ শূকর খামারের ঘরবাড়ী নির্মাণ বিশেষভাবে জরুরী। সংক্ষিপ্ত ভাবে, শূকর খামারের ঘরবাড়ী প্রয়োজনীয়তা গুলির নিম্নরূপ-
-
শূকরদের চরম জলবায়ু থেকে রক্ষা করা।
-
শূকরদের আরামে রাখলে উৎপাদন বারে, রোগ জ্বালা কম হয়।
-
দৈনন্দিন খামার পরিচালনা অনেক সুষ্টভাবে হয়।
-
খামারের পশুদের অন্যান্য জীব জন্তুদের আক্রমণ ও চুরির হাত থেকে রক্ষা করা যায়।
শূকর খামারের চারিদিকে প্রচুর গাছপালা থাকলে ভালো হয়। তবে প্রয়জনীয় সূর্যয়ের আলো / রোদ, বাতাস খামারের ভিতরে প্রবেশ করা ভালো। নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ সবসময়ই কাম্য। ঘরের মাঝে সবসময় শুঁকনো থাকবে ও কোন গর্ত থাকবে না। প্রচণ্ড গরম এবং অত্যধিক বর্ষা শূকরের পক্ষে কষ্টদায়ক। শূকরের মলমুত্র থেকে ‘বায়োগ্যাস’ ও উৎকৃষ্ট সার তৈরি করা যেতে পারে।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শূকরের বাসস্থান তৈরিতে নিম্নলিখিত বিসয়ের উপর বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন-
-
শূকরের খামার লোকালয় থেকে অন্তত পক্ষে ২০০ মিটার দূরে এবং একটু উঁচু যায়গা দেখে করতে হবে।
-
খামারেরে কাছাকাছি যাতায়াত ও নিকাশী ব্যবস্থা ভালো রাখা দরকার।
-
শূকর বেশি আবহাওয়া তারতম্য সহ্য করতে পারে না, তাই ছায়াযুক্ত যায়গায় খামার ঘর করতে হয়।
-
বাসস্থানের ভিতর কোন পোকামাকড় বাঁ ইঁদুর যাতে ঢুকতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার।
-
শূকরের খামারের কাছাকাছি হাঁস, মুরগি বা গরুর খামার যাতে না থাকে খেয়াল রাখতে হবে।
-
বাসস্থানের ভিতর যথেষ্ট আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
-
বিভিন্ন বয়স এবং উৎপাদন অবস্থায় শূকরগুলিকে আলাদা ভাবে রাখতে হবে।
তথ্য সহযোগিতায় ডঃ মানস কুমার দাস
- অভ্রদীপ দত্ত