“গাড়ল”(ভারতীয় জাতের ভেড়া) পালন খুবই লাভজনক। এতে খরচ কম অথচ লাভ অনেক বেশি। দেশে গাড়ল পালনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বেশি হওয়ায় এর মাংসের গাড়ল পালন একদিকে বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এই গাড়ল পালন এবং এর চাহিদাও ব্যাপক।
গাড়ল নির্বাচন পদ্ধতি:
পালনের জন্য ৭ থেকে ১২ মাস বয়সের সুস্থ গাড়ল নির্বাচন করা উচিত।
১. চোখ, নাক, মুখ উজ্জল ও পরিস্কার হবে।
২.লোম ও চামড়া মসৃন ও পরিস্কার থাকবে।
৩.মুখের উপরে মাজেলে (কালো জায়গায়) বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাবে।
৪. ঠিকমত জাবর কাটবে।
৫.চলাফেরা স্বাভাবিক থাকবে।
৬. কান ও লেজ নাড়াচাড়া করবে।
৭. খাবারের প্রতি আগ্রহ থাকবে।
৮. শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।
বাসস্থান:
১.গাড়লের ঘর উচু ও খোলামেলা জায়গায় হতে হবে।
২.পানি নিস্কাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৩.আরামদায়ক হতে হবে।
৪.ঘরের দক্ষিণ ও পূর্ব দিক হতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৫.বর্জ্য নিস্কাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকবে।
৬.সহজলভ্য ও সস্তা নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।
৭.ঘরের মাঝে বেড়া বা পার্টিশন দিয়ে গর্ভবতী গাড়ল বা ছোট বাচ্চা কে আলাদা রাখার ব্যবস্থা থাকবে। যাতে করে প্রসব পূর্ব ও প্রসব পরবর্তী যত্ন ও সেবা দেয়া যায়।
আরও পড়ুন -Boal fish farming process: বানিজ্যিক উদ্যোগে বোয়াল মাছ চাষ পদ্ধতি
খাদ্য:
১. গাড়ল চরে খেতে পছন্দ করে। তবে আবদ্ধ অবস্থায়ও বাহির থেকে (ঘাস/দানাদার) খাদ্য সরবরাহ করে পালন করা যায়।
২. ছাগলের মতোই লতা ও গুল্ম জাতীয় গাছের পাতা এরা খুব পছন্দ করে।
৩. শুকনো ও সংরক্ষিত ঘাস এবং দানাদার খাদ্য এরা খেয়ে থাকে।
৪. এমনকি খাদ্যের অভাব দেখা দিলে গাড়ল খড় ও নাড়া খেয়ে থাকতে পারে।
৫. পাঠা গাড়ল কে পর্যাপ্ত পরিমান কাচা ঘাস দিতে হবে।
৬. প্রজননের জন্য ব্যবহৃত পাঠাকে দৈনিক ১০ গ্রাম অঙ্কুরিত ছোলা দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৭. কাচা ঘাসের পরিমান কম হলে বছরে অন্তত ২ বার ভিটামিন এ.ডি.ই. ইনজেকশন ২ থেকে ৩ মি.লি. করে দিতে হবে।
৮. পাঠাকে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য দেয়া যাবে না।
প্রজনন:
গাড়ল পালনের ক্ষেত্রে প্রজননকালীন ব্যবস্থাপনাকে সর্বাধিক গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। যে বিষয় গুলকে গুরুত্ব দিবেন |
১. গাড়ল সাধারনত ১৮০ দিন বয়সের মধ্যে প্রথম বাচ্চা ধারণ করে।
২. গাড়লের হৃতুচক্র ১৩-১৯ দিন বা গড়ে ১৭ দিনে সম্পন্ন হয়।
৩. গাড়লের গরমকাল বা হিট প্রিয়ড ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টা পর্যন্তু স্থায়ী হয়।
৪. গর্ভধারণ কাল ১৪৫ থেকে ১৫০ দিন।
বাচ্চার যত্ন:
বাচ্চা প্রসবের সময় গাড়ল কে শুকনো, পরিচ্ছন্ন ও আলোবাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রাখতে হবে। বাচ্চার শরীর যাতে মা-গাড়ল চেটে পরিস্কার করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এতে বাচ্চার শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত চালুর জন্য সহায়ক হয়। মার যদি দুর্বলতা বা অন্য কোনো কারণে বাচ্চার শরীর চাটতে না পারে, তাহলে পরিস্কার নরম সুতি কাপড় দিয়ে বাচ্চার নাক-মুখ মুছিয়ে দিতে হবে না হলে শ্বাস রুদ্ধ হবার ঝুকি থাকে। আর যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েই যায়, সেক্ষেত্রে বাচ্চার বুকের পাজরে আস্তে আস্তে কিছুক্ষণ পর পর চাপ প্রয়োগ করলে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসবে। প্রয়োজনে নাকে-মুখে ফু দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে কৃত্তিম শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চার জন্মের পর গোসল করানো যাবেনা, এতে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হতে পারে।
রোগ ও প্রতিকার:
খামারের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, রোগ প্রতিরোধের প্রথম শর্ত। তাই খামারে সকল সময় পরিচ্ছন্ন, খোলামেলা ও পর্যাপ্ত আল-বাতাসের ব্যাবস্থা রাখতে হবে। গাড়লের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো। তবে বানিজ্যিক খামারে নিয়মিত টীকা প্রদান জরুরী। মোটামুটি নিয়মানুযায়ী ৩ টি টীকা প্রদান করলে, রোগ-বালাই থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকা সম্ভব।
টীকার নাম——————–পরিমান———প্রয়োগ পদ্ধতি
পিপিআর———————- ১ মিলি———চামড়ার নিচে ইনজেকশন
ক্ষুরা রোগ——————— ২ মিলি——— চামড়ার নিচে ইনজেকশন
এন্থ্রাক্স———————— ১ মিলি——— চামড়ার নিচে ইনজেকশন
আরও পড়ুন -Azolla cultivation guide: বেকার সমস্যা দূরীকরণে অ্যাজোলা চাষে লাভ করুন দ্বিগুন