গাভীর দুগ্ধ সম্পর্কিত তথ্য -
অনাদিকাল থেকেই পুষ্টিসমৃদ্ধ গাভীর দুগ্ধ একটি আদর্শ পানীয়, যা বিশ্বের প্রায় সকল দেশের মানুষের কাছে বিশেষভাবে সমাদৃত। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ, বৃদ্ধ বয়সেও দুগ্ধ পান করে থাকেন অধিকাংশ মানুষই। কোন দুধে সবচেয়ে বেশী প্রোটিন থাকে বা গাভীর কোন সময়ের দুধে তৈলাক্ততার পরিমাণ বেশী থাকে? কোন প্রজাতির গাভীর দুধের পরিমাণ বেশী? জেনে নেওয়া যাক কিছু বিস্তারিত তথ্য-
দুগ্ধকে স্বয়ং সম্পূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ ও আদর্শ খাদ্য বলা হয় কেন?
- মানবদেহের প্রয়োজনীয় উপাদানে সমৃদ্ধ সুস্বাদু এই পানীয় সহজ পাচ্য এবং সকল বয়সের মানুষের শরীরের ভারসাম্য-রক্ষাকারী সুষম খাদ্য। স্বল্প ব্যয়বহুল, দোহনের পরই বিশেষ কোন প্রস্তুতি ছাড়াই তা সহজে পান করা যায়। দুধ থেকে বহুবিধ উপাদেয় খাদ্য তৈরি করা যায়।
গাভীর দুগ্ধ উৎপাদন কিসের উপর নির্ভরশীল?
- উন্নত জাত, বয়স, বাচ্চা প্রদানের সংখ্যা, খাদ্য, বাসস্থান, গর্ভাবস্থা, ওলানের গঠন, পরিচর্যা, শারিরীক সুস্থতা ও রোগব্যাধি ইত্যাদির উপর গাভীর দুগ্ধ উৎপাদন নির্ভরশীল।
প্রসবের কতদিন পর গাভী সবচেয়ে বেশি দুধ দেয়?
- সাধারণত ৩-৬ সপ্তাহ পরে।
শাল দুধ বলতে কোন ধরণের দুধ বোঝায়?
- বাচ্চা প্রসবের পরই গাভী প্রথম তিন-চার দিন যে দুধ দেয়, তাকে কোলস্ট্রাম বা শাল দুধ বলা হয়।
গাভীর শাল দুধ ও স্বাভাবিক দুধের মধ্যে পার্থক্য কি?
- শাল দুধে জলের পরিমাণ কম, চর্বি ও খনিজ বেশি থাকে, শাল দুধে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান কম মাত্রায় থাকে।
দুধ তৈরির জন্য কোন কোন হরমোন কার্যকরী?
- ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টারোন, সোমাটোট্রাপিন, প্রন্যাকটিন, থাইরোসিন এবং অক্সিকটিকোস্টেরোন হরমোনের প্রয়োজন হয়।
পূর্ণ বয়স্ক ভাল জাতের গাভীর ওলান কত ওজনের হতে পারে?
- চারটি প্রকোষ্ঠযুক্ত গাভীর ওলান ১২-৩০ কেজি ওজনের হতে পারে।
বকনা গাভী কোন নিয়মে দোয়ানো উচিৎ?
- প্রথম ক্ষেত্রে দোহনের ২-৩ মিনিট আগে অক্সিটোসিন ইনজেকশন প্রদান করতে হবে। ২ বা ৩ দিন এভাবে ইনজেকশন দিতে হবে।
কি কি পদ্ধতিতে দুগ্ধ দোহন করা যেতে পারে?
- হাতেরসাহায্যে,স্ট্রিপকাপ পদ্ধতিতে এবং স্ট্রিপিং পদ্ধতিতে। হাতের সাহায্যে সাধারণত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেশী গাভী দোহন করা হয়। অন্যান্য পদ্ধতিতে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দোহনকারী ও আধুনিক যন্ত্রপাতির দরকার হয়।
কোন জাতের গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা বেশি?
- হলস্টেন, ফ্রিজিয়ান, জার্সি- ইত্যাদি জাতের গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা শাহিওয়াল, সিন্ধি, হরিয়ানা, থারপারকার জাতের গাভীর তুলনায় অনেক বেশি।
কি কি ধরণের খাবার খাওয়ালে গাভীর দুধে চর্বির পরিমাণ কমে যায়?
- অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য, বড়ি-জাতীয় খাদ্য, অতিরিক্ত রসালো ঘাস/খাদ্য এবং মিহিভাবে গুঁড়া করা খড়-জাতীয় খাদ্য খাওয়ালে দুধের চর্বির পরিমাণ হ্রাস পায়।
গাভীর দুধে চর্বির পরিমাণ কমে গেলে কি করতে হবে?
- খনিজ ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়াতে হবে। সুষম খাদ্য ছাড়া দুধের আমিষ ও শর্করা উপাদান কমে যায় এবং দুধ উৎপাদন ক্ষমতাও কমে যায়।
দুধ সংরক্ষণ বলতে কি বুঝায়?
- সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দুধকে খাদ্যোপযোগী এবং পচনমুক্ত রাখার প্রক্রিয়াকে দুধ সংরক্ষণ বলে।
দুধ সংরক্ষণ কেন করা হয়?
- সুনির্দিষ্ট দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দুধের গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য, নির্ধারিত ব্যবহারের পর অতিরিক্ত দুধ লাভজনক দামে বিক্রি করার জন্য, পরিবহনের সময় দুধ জীবাণুমুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে এবং দুধের স্বাদ ঠিক রাখার জন্য দুধ সংরক্ষণ করা হয়।
স্বপ্নম সেন(swapnam@krishijagran.com)