কৃষিজাগরন ডেস্কঃ চাহিদার তুলনায় এ রাজ্যে এখনো খাঁটি মধুর জোগান যথেষ্ট কম। খাঁটি মধুর জন্য ছুটতে হয় সুন্দরবন অঞ্চলে। আর এই চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় মৌমাছি পালন যথেষ্ট লাভজনক ব্যবসা। বর্তমানে মধুর বাজার শুধুমাত্র আর এ রাজ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পশ্চিম জার্মানি ও মধ্যপ্রাচ্যে মধু রপ্তানি হয়। মধুর নানা ঔষধি গুণের জন্য আয়ুর্বেদ ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি উৎপাদকের কাছ থেকে মধু কিনে নেয়। বাণিজ্যিকভাবে মধু উৎপাদনের জন্য মৌমাছি ও মৌপালন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার।
১) পাথুরে মৌমাছি বা দৈত্য মৌমাছি, এপিস দোরসাটা
-
সব মৌমাছির মধ্যে সব থেকে বড়
-
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০০ মিটার উচ্চতায় এদের বেশি দেখা যায়
-
এরা লম্বা গাছের উপর, বড় বাড়ির উপর, জলের টাওয়ারের উপর বাসা বাঁধতে পছন্দ করে
-
এরা গরমকালে পাহাড়ে এবং শীতকালে সমতলে পরিযান করে
-
প্রতি বছর প্রতি কলোনি থেকে ৩০-৫০ কেজি মধু উৎপন্ন হয়
-
বিভিন্ন গাছ, ফল, প্রাকৃতিক গাছের পরাগমিলন কারি হিসাবে কাজ করে
আরও পড়ুনঃ গৃহপালিত প্রাণীর পরজীবি ঘটিত রোগ এবং তার প্রতিকার
২) ভারতীয় মৌমাছি, এপিস ইনডিকা
-
এটি মাঝারি মাপের মৌমাছি
-
ভারতে দুটি প্রজাতি পাওয়া যায়- পার্বত্য প্রজাতি বা গান্ধিয়ানা ( কালো এবং বড় ) এবং সমতল প্রজাতি বা ইনডিকা ( ছোট এবং হলুদ)
-
পার্বত্য অঞ্চলে ৩.৬- ৪.৫ কেজি এবং সমতলে ১.৩- ২.২ কেজি মধু পাওয়া যায়।
৩) ছোট মৌমাছি, এপিস ফ্লরিয়া
-
মৌমাছি প্রজাতির মধ্যে সব থেকে ছোট
-
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২০০ মিটার উচ্চতায় এদের বেশি দেখা যায়
-
এরা ছোট গাছের ডালে ছোট বাসা বাঁধে
-
গড়ে প্রতি কলোনি থেকে ১ কেজি মধু উৎপন্ন হয়
আরও পড়ুনঃ পুকুরে মাছ চাষের জন্য জৈব সার তৈরি করবেন যেভাবে
গৃহপালিত প্রাণীর পরজীবি ঘটিত রোগ এবং তার প্রতিকার
৪) ইউরোপিয়ান মৌমাছি ,এপিস মেলিফেরা
-
কেবলমাত্র এই মৌমাছিটি পৃথিবীর বেশিরভাগ যায়গায় ব্যবসায়িক কাজে পালন করা হয়
-
এটি ইতালি তে তৈরি হয়েছে এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে
-
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায় এদের বেশি দেখা যায়
-
এরা অনেকগুলি সমান্তরাল বাসা বাঁধে
-
একটি সুস্থ বসতিতে ৬০,০০০-৭০,০০০ মৌমাছি থাকে
-
প্রতি বছর প্রতি কলোনি থেকে ৩৫ কেজি মধু উৎপন্ন হয়
-
এরা একটি যাত্রায় মৌচাক থেকে ৫ কিমি যাত্রা করে নেকটার, পলেন, জল, প্রপলিস সংগ্রহ করে
-
এরা রোগ পোকার প্রতি সংবেদনশীল
মৌমাছির বসতির শ্রেণী
মৌমাছি হল সামাজিক পতঙ্গ যারা ১০,০০০-৬০,০০০ পর্যন্ত একটি বসতি তে থাকে। একটি বসতিতে একটি রানি, কয়েক শতক পুরুষ এবং কয়েক হাজার শ্রমিক মৌমাছি থাকে।
১) রানি মৌমাছি
-
রানি মৌমাছি একটি জন্মদায়ক স্ত্রী মৌমাছি। মৌচাকে একটিমাত্র রানি মৌমাছি থাকে এবং তার কাজ হল ডিম পারা ও ফেরমন তৈরি করা। একটি রানি মৌমাছি দিনে ১৫০০-২০০০ ডিম পারে কিন্তু ২ বছর পরে থেকে কিছু মাত্র ডিম পারে। এরা ৩-৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
২) ড্রোন (পুরুষ মৌমাছি)
-
ড্রোন রা হল পুরুষ মৌমাছি এবং এরা শ্রমিক মৌমাছির থেকে বড়। এরা অনিষিক্ত ডিম থেকে তৈরি হয় এবং তাদের মূল কাজ রানির সাথে মিলন করা। এরা হূল বিহিন। এরা ২০০-৫০০ টি একসাথে থাকে মৌচাকে। এরা আয়ু ২ মাসের বেশি হয় না।
৩) শ্রমিক মৌমাছি ( বন্ধ্যা মৌমাছি)
-
মৌচাকে বেশির ভাগ মৌমাছি হল শ্রমিক এবং এরা বন্ধ্যা স্ত্রী মৌমাছি। শ্রমিক মৌমাছির কাজ হল মৌচাক পরিস্কার করা, রানি এবং তার বাচ্চা কে খাওয়ানো ,পলেন, নেকটার, জল, প্রপলিস এর মতন খাবার সংগ্রহ করা। এদের হূল, বিশেষ গ্রন্থি থাকে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। এরা মধু উৎপাদনের জন্য দায়ি। এরা ৭-৮ সপ্তাহ বাঁচে।