মাত্র ৮০ টি গরু দিয়ে নিজের খামার বানিয়েছিলেন আইনজীবী শিহাব। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। এখন প্রতিবছর ২০০ গরু বিক্রি করেন তিনি। তার সফলতা দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন গ্রামের নতুন খামারিরা।
শিহাব উদ্দিন পুরো খামারটিতে রেখেছেন আধুনিকতার ছোঁয়া। শেডের ভেতরে প্রতিটি গরুর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়েছে আলাদা আলাদা চৌবাচ্চা। রয়েছে গরুর গোসল, চিকিৎসা ও প্রজননের জন্য আলাদা ব্যবস্থা।
দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই গরুর খামার এটি। ভেতরে নজর কাড়ার মতো সাজানো গোছানো। সারিবদ্ধ গাভী ও ষাঁড় খাবার খাচ্ছে। তিনটি শেডে এবছর গরু রয়েছে দুই শতাধিক। এসব গরুর লালন পালন এবং যত্নে কাজ করছে সাত জন শ্রমিক। খামারে ঢুকেই প্রথম শেডে রয়েছে গাভী। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শেডে রয়েছে মোটাতাজা করণ গরু।
কর্মরত শ্রমিক বাংলাদেশের এক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আমরা সাতজন কর্মচারী গরুগুলোর যত্ন নেই। সপ্তাহে দুই দিন ব্লিসিং পাউডার ও চুন দিয়ে খামার পরিষ্কার করে রাখি। শুধু গরু কেনার জন্য নয়, অনেকেই শখ করে খামার দেখতে আসেন। মশা-মাছি কোনো রকমের দুর্গন্ধ নেই খামারে। সুন্দর পরিবেশ আর আধুনিক উপায়ে গরু পালন করি আমরা।
আরও পড়ুনঃ সৌদির খেজুর চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন বাংলাদেশের হানিফা
শাহিনের খামারে প্রতিদিন একবার বা দুবার গরুগুলোকে স্নান করানো হয়। দুর্গন্ধমুক্ত রাখা হয়। এখানে ঘাসের চাষ করেছেন তিনি, যা দিয়ে গরুগুলোর ঘাসের চাহিদা পূরণ হয়। পাশাপাশি খড়, ভুসি, পোলট্রি ফিড ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের এক সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন , আমি ৮০টা গরু দিয়ে শুরু করেছিলাম। এর মধ্যে ১২টি দুধের গরু ছিল। বর্তমানে ২৫০টি গরু রয়েছে। আমার বাবার জমি হওয়ায় কোনো ভাড়া দিতে হয় না। শেড নির্মাণসহ তখন প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা দামের পর্যন্ত গরু রয়েছে। বর্তমানে গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের সামগ্রিক খরচ বেড়ে গেছে।
সরকার খামারিদের উদ্বুদ্ধ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত কয়েক বছর প্রতিবেশী দেশ থেকে গরু আনা হয় না। এতে আমাদের খামারিরা উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এটা সরকারের অসাধারণ সিদ্ধান্ত। অল্প কয়েক বছরের মধ্যে আমার স্বয়ংসম্পূর্ণ হব। এতে নতুন খামারি বাড়ছে। সরকার প্রণোদনা দিলে আমরা দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে গরু রপ্তানি করতে পারব।
প্রাণি সম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বৃহত্তর নোয়াখালীর তিন জেলা ও বৃহত্তর কুমিল্লার তিন জেলার মধ্যে শাহিনের খামারটি সবচেয়ে বড়। তার খামারে সারা বছর গরু বেচাকেনা হয়ে থাকে। তিনি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গরুর ছবি ভিডিও প্রকাশ করেন। এতে মানুষ আশ্বস্ত হয় গরু কিনতে।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌতম চন্দ্র দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই আমি এই আধুনিক গরুর খামারের নানা দিক নিয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছি। গরুর খাদ্য, স্বাস্থ্যচিকিৎসা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে খামারির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। গরুর খুরারোগের ভ্যাকসিনসহ সব ভ্যাকসিন যথাসময়ে দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাজী রফিকুজ্জামান সংবাদ মাধ্যমকে জানান , নোয়াখালীতে কোরবানির জন্য এ বছর ১ লাখ গবাদিপশু লালনপালন করা হচ্ছে, যা আমাদের চাহিদার থেকে ১০ হাজার বেশি। যা আমরা অন্য জেলায় পাঠাতে পারব। ঈদুল আজহা সামনে রেখে ক্রেতা-বিক্রেতা যেন অবাধে তাদের পশু ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে, সে জন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মিটিং করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশে প্রবল বন্যায় আউশ ধানের ব্য়পক ক্ষয়ক্ষতি
রাস্তাঘাট ও পশুরহাট গুলোতে কঠোর নিরাপত্তা থাকবে। প্রতি হাটে একজন করে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম থাকবে। যেহেতু ডিজিটাল বাংলাদেশ, তাই ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য অনলাইনে একাধিক প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। এখান থেকেও তারা উপকার পাবেন বলেও আশা করেন এ কর্মকর্তা।