আমাদের রাজ্যে তথা সমগ্র দেশে ছাগল পালন একটি লাভজনক ব্যবসা৷ দুধ এবং মাংসের জন্য পশুপালকরা এর ওপর নির্ভর করে থাকেন৷ অনেকে দুধের জন্য, অনেকে মাংসের জন্য এর ব্যবসা করে থাকেন, এবং এর জন্য বিভিন্ন জাতও রয়েছে৷ আকার, বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যেগুলি একটির থেকে অন্যটি অনেকটাই আলাদা৷
জানা যায়, সমগ্র পৃথিবীতে প্রায় ৩০০ জাতের ছাগল রয়েছে৷ কুচি, বারবারি, যমুনাপারি, ব্ল্যাক বেঙ্গল, বিটল এমনই বিভিন্ন জাতের ছাগলের চাহিদা সর্বদাই তুঙ্গে থাকে৷ পশ্চিমবঙ্গে মাংস, চামড়ার জন্য ব্ল্যাক বেঙ্গলের (Black Bengal) চাহিদা থাকলেও অন্যান্য জাতগুলিরও কম-বেশি পালিত হয়ে থাকে৷ এই প্রতিবেদনে বারবারি জাতের ছাগলের বিষয়ে তুলে ধরা হল৷
স্বল্প পুঁজিতে ছাগল পালন -
অল্প পরিশ্রম আর স্বল্প পুঁজিতে (Low Investment) এই জাতের ছাগল পালন খুবই লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এখন বারবারির (Barbari Goat) প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছেন৷ এটি মাঝারি আকারের ছাগল৷ এর মাংস অতি সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদাও প্রচুর৷ এরা তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে৷ এদের কানের আকার ছোট এবং এরা ২৩-৪০ কিলো ওজনের হতে পারে৷ এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অন্যান্যদের থেকে বেশি৷ এই ছাগলের আদি বসবাস আফ্রিকা মহাদেশের সোমালিয়া বলে জানা যায়। তবে ভারতে প্রচুর পরিমাণে এই ছাগল পালন করা হচ্ছে৷
এই জাতের ছাগল বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে৷ এরা খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম৷ এরা ভালো পরিমাণ দুধ দেয়৷ তাই মাংস এবং দুধের জন্য ব্যবসায়িক দিক থেকে এদের মূল্য অনেকটাই বেশি৷ এরা প্রায় সবধরণের স্বাদের খাবার খেতেই অভ্যস্ত৷ তবে মূলত সবজিতেই এরা বেশি অভ্যস্ত৷ এই বারবারি ছাগলের (Barbari Goat) বাচ্চাদের জন্য ভিটামিন এ, ডি. খনিজ পদার্থ খুবই প্রয়োজনীয়৷ তাই তাদের প্রয়োজনীয় খাবারগুলি দেওয়ার দিকে সতর্ক থাকতে হবে৷
দুধ উৎপাদন –
বারবারি জাতের ছাগল মাংস ব্যবসায়ের জন্য বিশেষভাবে লালন করা হয়। আসলে, এই জাতটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় তাই এটি দ্রুত বিক্রি করা যায়। এর সাথে এটি ভাল পরিমাণে দুধও দেয়। গ্রাম, শহর সকল জায়গাতেই সহজেই এর পালন করা যায়। এটি প্রতিদিন এক থেকে দেড় লিটার দুধ দেয়।
মাংসের চাহিদা -
এই জাতের ছাগল উষ্ণ আবহাওয়াও সহ্য করতে পারে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এটি সাত-আট মাসে ৩০ কেজি হয়ে যায়। এক বছর পরে এই প্রজাতির ছাগল ওজনে ১০০ কেজি হয়ে যায়। মাংসের জন্য এর চাহিদা প্রচুর। এই জাতের ছাগল বছরে দুই থেকে তিনটি বাচ্চার জন্ম দেয়। এই জাতের বিশেষত্ব হ'ল যদি চারণ খাওয়ানোরকোনও জায়গা না থাকে, তবে আপনি কেবল শস্য খাওয়ানোর মাধ্যমেও এর পালন করতে এটি পারবেন।
আরও পড়ুন - এই সময়ে দুগ্ধবর্তী গরুর বাসস্থানের গঠন ও তার পরিচর্যা কীভাবে করবেন ?
তবে গর্ভবতী বারবারি ছাগলের পরিচর্যায় অতিরিক্ত যত্নবান হতে হবে৷ এদের যাতে কোনওভাবেই ঠান্ডা না লেগে যায় তা নজরে রাখতে হবে এবং পরিষ্কার, শুকনো জায়গায় এদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে৷ দেড় মাসে আগে থেকেই এদের দুধ নেওয়া বন্ধ করতে হবে৷ সেই সঙ্গে এদের খাবারের বিষয়েও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে৷ এরা ১৮ মাসের মধ্যে ২ বার বাচ্চা প্রসব করতে পারে, তাই খুব সময়েই এরা সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়৷ তাই ছাগল পালকদের কাছে এই জাতের ছাগলের চাহিদা তাই বৃদ্ধি পাচ্ছে৷
আরও পড়ুন - কার্প জাতীয় মাছের কম্পোজিট ফার্মিং এ সরপুঁটি মাছের চাষে বাড়তি লাভ