ভেড়া পালন মানব সভ্যতা শুরুর সময় থেকেই ভারতবর্ষে প্রচলিত ছিল। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতায় ভেড় পালনের নিদর্শন পাওয়া গেছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গে ভেড়া পালন ছাগল পালনের মত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। ভেড়াকে মাংস ও পশমের জন্য পালন করা হয়। রাজস্থান, গুজরাট, জম্মু ও কাশ্মীর, তামিলনাড়ু কর্নাটক রাজ্যে সব থেকে বেশী ভেড়া পালন করা হয়। বর্তমানে ভারত ভেড়ার সংখ্যায় (৪.৫ কোটি) পৃথিবীতে যষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে।
ভেড়া পালনের সুবিধা
-
ছাগলের মত ভেড়া পালনের জন্য কোন নির্দিষ্ট রকমের ঘরের দরকার নেই।
-
এদের জন্য আলাদা খাবার লাগে না যদি পর্যাপ্ত চষে বেড়ানোর জায়গা দেওয়া যায়।
-
ভেড়া থেকে মাংস ছাড়াও পশম ও দুধ পাওয়া যায়।
-
ভেড়ার পশম থেকে বিভিন্ন রকম শীতবস্ত্র, কার্পেট ও শৌখিন দ্রব্য তৈরী করে প্রচুর মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে।
সাহাবাদি ভেড়া
সাহাবাদি ভেড়ার আদি বাসস্থান বিহারের পাটনা, গয়া, এবং সাহাবাদ জেলা। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের অনেক জেলাতেও সাহাবাদি ভেড়া পালন করা হচ্ছে, বিশেষত দক্ষিণবঙ্গে।
বৈশিষ্ট্য
মাঝারি চেহারা, লম্বা পা ও লেজ, টিকালো রোমান নাক, কান মাঝারি মাপের ও ঝুলন্ত, গায়ের রং সাদা বা হালকা বাদামি মাঝে মাঝে কালো ছোপ থাকে। এদের শিং থাকে। পায়ে ও পেটে খুব ছোট ছোট পশম থাকে। পরিণত পুরুষ ভেড়ার ওজন গড়ে ২৫-৩০ কেজি এবং স্ত্রী ভেড়ার ২০-২৫ কেজি। এক এককটি ভেড়া থাকে বছরে ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পশম পাওয়া যায়। এদের দ্বিবিধ উদ্দেশ্যে পালন করা হয়।
আরও পড়ুনঃ মাংস উৎপাদনের জন্য কৃষিজাগরন বেছে নিল সেরা তিনটি জাত, রইল বৈশিষ্ট্য
ছোটনাগপুরি
বিহারের ছোটনাগপুর মালভূমি। বর্তমানে বিহারের ছোটনাগপুর, রাঁচী, হাজারিবাগ, সিংভূম, ধানবাদ, সাঁওতাল পরগনাতে এবং পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলাতে দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য
গায়ের রং হালকা বাদামী থেকে ধূসর। ছোট চেহারা, কান ও লেজ ছোট, শিং বর্তমান। পশম মোটা হয়। পরিণত বয়সে এদের গড় ওজন ১৫-২০ কেজি। এদেরও দ্বিবিধ উদ্দেশ্যে পালন করা হয়।
আরও পড়ুনঃ ছাগল পালনের আগে জানতে হবে ছাগলের খাদ্য, বাসস্থান ব্যবস্থাপনা, রইল বিস্তারিত
গাড়োল
গাড়োল পশ্চিমবাংলার একমাত্র স্বীকৃত ভেড়ার প্রজাতি। প্রধানত উত্তর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় এদের পাওয়া যায় বা আরও সঠিকভাবে বললে সুন্দরবন এলাকায়।
বৈশিষ্ট্য
গাড়োল কথাটি অর্থ হল বোকা, এই নামকরণের কারণ এদের অত্যন্ত ভীতু স্বভাব, বোকা বোকা স্বভাব। ছোট দেহ অবয়ব, শিংযুক্ত, গায়ের রং বিভিন্ন রঙের হয়। সাদা বাদামী, ধূসর, কালো বা উপরোক্ত দুটি রঙের সংমিশ্রণ। গায়ের পশম খুব মোটা, যার বাজার মূল্য নেই বললেই চলে। লেজ খুব ছোট। এদের কান খুব ছোট। গাড়োল একমাত্র ভেড়ার প্রজাতি খরা জলে বা কর্দমাক্ত জমিতে ঘুরে বেড়ায়। এরা প্রতি বিয়ানে গড়ে প্রায় দুটি করে বাচ্চা দেয়। এদের প্রধানত মাংসের জন্য পোষা হয়।