বর্তমানে কিছু কৃষক কৃষিকাজের পাশাপাশি পশুপালনের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন। পশুপালনের মধ্যে গো পালন যথেষ্ট লাভজনক। সংকর বা ক্রসবিড গরুতে যে ধরনের রোগগুলি বেশি দেখা যায়, তা হল এঁষো বা ক্ষুরাই, গলাফোলা, তড়কা, কৃমি জাতীয় রোগ, ডায়ারিয়া, ঠুনকো রোগ ইত্যাদি।
গরুটির রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন লক্ষণগুলি হল –
১) গরুটি সঠিক পরিমাণে খাবে না।
২) গরুটির মুখের উপরের কালো অংশটি শুকনো হয়ে যাবে যা সাধারনতঃ আর্দ্র থাকা উচিত।
৩) গোবরে কোন প্রকারের অস্বাভাবিকতা যেমন - পাতলা হয়ে যাওয়া, বা খুব কঠিন হয়ে যাওয়া, গোবরের মধ্যে রক্ত বা পুঁজের উপস্থিতি ইত্যাদি।
৪) দুধের কোনরকম অস্বাভাবিকতা, যেমন রঙের পরিবর্তন বা চাকলা চাকলা দুধ আসা ইত্যাদি।
৫) দেহের ঔজ্জ্বল্য চলে যাওয়া, লোম ঝড়ে পড়া, গরুর চোখ দিয়ে জল পড়া।
৬) গরুর দেহ শীর্ণকায় হয়ে পড়া বা পেট ফুলে যাওয়া।
৭) গরুর চামড়ায় কোনরকম অস্বাভাবিক পরিবর্তন হওয়া।
কোন রোগ কিভাবে বুঝব?
১) গরুটির মুখ দিয়ে লালা ঝরা, জিভের ওপরে ফুসকুড়ি ও পরে ঘা-তে পরিণত হলে, পায়ে অর্থাৎ দুই ক্ষুরের মাঝে তলার দিকে ঘা হলে তা খুরিয়া বা এঁষো হতে পারে।
২) গবাদি পশুর থুতনি ফুললে ও ফোলা অংশ নরম ও থলথলে হলে শরীর কৃমির সংক্রমণ হতে পারে।
৩) গরুর যদি প্রচণ্ড জ্বর হয় ও তার সাথে গলার থলথলে অংশে ফোলা দেখা যায়, তবে তা গলাফোলা রোগের লক্ষণ।
৪) গরু যদি খুব পাতলা পায়খানা করে তবে তা কৃমির সংক্রমন হতে পারে।
৫) গরুটির পালান ও বাট যদি ফুলে যায় ও লাল হয়, দুধ যদি কম হতে শুরু করে এবং দুধ ছানা কাটার মতো দেখতে হয় বা দুধে রক্ত মিশ্রিত হয়ে আসে তাহলে তা ঠুনকো রোগের সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করে। এই রোগে গরুর বেশ জ্বর হয়।
৬) গরুটির যদি পেট ফুলে যায় বা গরু কিছু খেতে না পারে এবং ক্রমাগতঃ কাশতে থাকে, তবে গরুটির গলায় কিছু আটকে থাকতে পারে বা গরুটি কাচা ঘাস বা ধনি বেশী খেয়ে ফেলে থাকতে পারে।
৭) গরুর খুব জ্বর হলে, যদি গরুটি কাঁপতে কাঁপতে পড়ে যায় এবং সাথে শ্বাসকষ্ট ও রক্ত পায়খানা হতে থাকে, তবে তা তড়কা রোগের লক্ষণ। এতে গরু খুব শীঘ্র মারা যায়।
৮) ৬-৭ মাস বয়সের বাছুরের যদি খুব জ্বর হয়, দাবনা ও পায়ের পিছনের পেশী ফুলে ওঠে ও ব্যাথা হয়, তাহলে তা বাদলা বা বজবজে রোগের লক্ষণ।
গরুর টীকাকরনের সময়সূচী নিচে বর্ণনা করা হল –
রোগের নাম | টীকার নাম | দেওয়ার বয়স |
এঁষো বা খুরিয়া | এফ.এম.ডি, ভ্যাকসিন | দেড় মাস বয়সে প্রথম চার মাস বয়সে বুস্টার তারপর বছরে দুবার |
তড়কা বা অ্যানথ্রাক্স | অ্যানথ্রাক্স স্পোর ভ্যাকসিন | ৮ মাস বয়সে প্রথম পরে বছরে একবার করে |
গলাফোলা | এইচ.এস, অয়েল অ্যাডজুভেন্ট ভ্যাকসিন | ৬ মাস বয়সে প্রথম টীকা পরে বছরে একবার করে। |
বাদলা বা বজবজে | বি.কিউ পলিভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন | ৬-৯ মাস বয়সে প্রথম টীকা পরে বছরে একবার করে। |
ব্রুসেল্লোসিস(শুধুমাত্র গরুকে) | ব্রুসেল্লা অ্যাবোরটাস কটন স্ট্রেন ভ্যাকসিন | ৬-৯ মাস বয়সে |
রোগ নিরাময়ের জন্য আগাম সতর্কতা :-
গরুকে বিভিন্ন জীবাণু ঘটিত রোগের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য পালককে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। টিকাকরণ এক্ষেত্রে সবথেকে কার্যকরী।