আধুনিক কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কৃষি যন্ত্রের (Agri Equipment) সাহায্যে চাষে শ্রম কম হয় এবং ফসলের ফলনও বাড়ে। তবে কিছু কৃষক নিম্ন অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে ব্যয়বহুল কৃষি সরঞ্জাম ক্রয় করতে ব্যর্থ হন। এই বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে, দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের আধুনিক কৃষিজমির সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার দেশে ৪২ হাজার কাস্টম নিয়োগ কেন্দ্র স্থাপন করেছে।
লক্ষণীয় বিষয়, ভারত সরকার এখন কৃষকদের সমস্যা সমাধানের জন্য বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, কিছু পশ্চাৎপদ রাজ্যে, সরকার খামার সম্পর্কিত মেশিন (Farm Equipment) নেওয়ার জন্য ভর্তুকিও সরবরাহ করে থাকে।
বেশ কয়েকটি কৃষি যন্ত্র রয়েছে যার সহায়তায় ধান চাষে (Paddy Cultivation) বাম্পার ফলনও পাওয়া যায় আর এতে কৃষকেরও লাভ হয়। এমনই একটি কৃষি যন্ত্র হল ড্রাম সিডার। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
ড্রাম সিডার কি (About Drum Seeder Machine)?
ড্রাম সিডার প্লাস্টিকের তৈরি ছয়টি ড্রাম বিশিষ্ট একটি আধুনিক ধান বপণ যন্ত্র। প্লাস্টিকের তৈরি ড্রামগুলো ২.৩ মিটার প্রশস্ত লোহার দন্ডে পরপর সাজানো থাকে। লোহার দন্ডের দুপ্রান্তে প্লাস্টিকের তৈরি দুটি চাকা এবং যন্ত্রটি টানার জন্য একটি হাতল যুক্ত থকে। প্রতিটি ড্রামের দৈর্ঘ্য ২৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যাস ৫৫ সেন্টিমিটার এবং এর দু’প্রান্তে ২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে দুসারি ছিদ্র আছে। প্রয়োজনে রাবারের তৈরি সংযুক্ত বেল্টের সাহায্যে এক সারি ছিদ্র বন্ধ রাখা যায়।
জলাভূমিতে ধান বপন করতে এই যন্ত্র বিশেষ সহায়ক। খুব কম সময়ে এই যন্ত্রের সাহায্যে বীজ বপন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়।
ড্রাম সিডারের সুবিধা (Benefits of Drum Seeder):
এ যন্ত্রের সাহায্যে কাদা মাটিতে অঙ্কুরিত বীজ সারি করে সরাসরি বপণ করা যায়। ফলে আলাদা করে আর বীজতলা তৈরি, চারা উত্তোলন ও রোপণ করতে হয় না | যার ফলে শ্রম ও উৎপাদন ব্যয় অনেকটা কমে যায় | এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ধান ও অন্যান্য সব্জি চাষ (vegetables cultivation) সহজে করা যায় | এই যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের বীজ বপণ করলে বীজের পরিমাণ ৩০ শতাংশ কম লাগে। সারিবদ্ধ ও সার্বিক ঘনত্ব অনুযায়ী বীজ বপণের কারণে জমিতে নিড়ানিসহ অন্যান্য পরিচর্যা অনেক সহজ হয় এবং রোগপোকার উপদ্রপ কম হওয়ায় ফসলের ফলন গড়ে ২০- ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সর্বোপরি, এই যন্ত্র হালকা হওয়ায় সহজেই বহনযোগ্য | ১ জন লোক ঘণ্টায় অন্তত ১ বিঘা জমিতে বীজ বপণ করতে পারে।
ড্রাম সিডারের সাহায্যে কীভাবে বীজ বপণ করবেন (Seed Sowing Method By Using Drum Seeder) :
প্রথমত, ড্রামের ড্রামের দুই-তৃতীয়াংশ অঙ্কুরিত বীজ দ্বারা ভর্তি করতে হবে | এরপর অঙ্কুরিত বীজগুলিকে ছায়াযুক্ত জায়গায় প্রায় ২ ঘন্টা শুকিয়ে নিতে হবে | ছয়টি ড্রামে বীজ ভরে ড্রামসিডার যন্ত্রটি দিয়ে একসঙ্গে ১২ লাইনে বীজ বপণ করা যায়। অঙ্কুর খুব ছোট হলে অতিরিক্ত বীজ পড়ে যাবে, আবার অঙ্কুর বেশী লম্বা হলে ড্রামের ছিদ্র দিয়ে পড়বে না। সাধারণত অঙ্কুরের দৈর্ঘ্য ৪-৫ মিলিমিটার, অর্থাৎ একটি ধানের সমান লম্বা হলেই ভালো হয়। অঙ্কুরিত বীজ ড্রামে ভরার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ড্রামের এক তৃতীয়াংশ অবশ্যই খালি থাকে। ড্রামের গায়ে আঁকা ত্রিভূজাকৃতি চিহ্ন যেন সবসময় সামনের দিকে থাকে। সাধারণত একক ঘন সারিতে বীজ বপন করা বেশ ভালো এবং এতে বিঘা প্রতি ৩.৫-৪.০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।
ড্রাম সিডার মূলত প্রাক-অঙ্কুরিত ধানের বীজ বপনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ধরণের রোপণ পদ্ধতিতে বীজ রোপণের ২৪ ঘন্টা আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়।
সার প্রয়োগ:
বীজ বপণের প্রথম ৪ থেকে ৫ দিন জল দেওয়ার দরকার থাকেনা | পরে গাছের বৃদ্ধির সাথে প্রয়োজনমতো জলের পরিমান বাড়াতে, কমাতে হবে | ইউরিয়া সারের কার্যকারিতা জমিতে কম সময় থাকে বলে কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। ১ম কিস্তি জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে, ২য় কিস্তি ধানের গোছায় (Paddy cultivation) ৪-৫ টি কুশি অবস্থায় ও ৩য় কিস্তি কাইচথোড় আসার ৫-৭ দিন আগে দিতে হবে।
পরিচর্যা (Crop Care) :
ইউরিয়া উপরি-প্রয়োগের সময় ক্ষেতে ২-৩ সেন্টিমিটার জল থাকতে হবে। ইউরিয়া প্রয়োগের সাথে সাথে আগাছা পরিস্কার করতে হবে। ইউরিয়া সার প্রয়োগের পরেও ধান গাছ যদি হলদে থাকে এবং বাড়বাড়তি কম হয় তাহলে গন্ধকের অভাব হয়েছে ধরে নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে সাথে সাথে জমি থেকে জল সরিয়ে দিতে হবে । এরপর হেক্টর প্রতি ৬০ কেজি বা বিঘা প্রতি ৮ কেজি জিপসাম সার উপরি-প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন - Modern Agri Machinery – কম সময়ে কৃষিতে দ্বিগুণ লাভ পেতে ব্যবহার করুন এই মেশিন
ড্রাম সিডারের মূল্য -
ড্রাম সিডার বিভিন্ন মূল্যের রয়েছে। ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০,০০০ অথবা তার উপরেও এটি উপলব্ধ। কার্যক্ষমতার উপর নির্ভর করে এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন - Drip Irrigation - ড্রিপ সেচের সুবিধা কি? কেন এই পদ্ধতির অনুসরণ করবেন কৃষকরা