বাড়ছে জলসংকট আর আগামীর জলসংকটের মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে কৃষিতে ধীরে ধীরে বিন্দু সেচের ব্যবহারে বাড়ছে। ফুড অ্যান্ড এগ্রি অর্গানাইজেশনের মতে আগামি ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের ১৮ মিলিয়ন মানুষ তীব্র জলসংকটে পড়বে।
ভারতের মিষ্টি জলের ৮৩% ব্যবহার হয় কৃষি কাজে। কাজেই জলাভাব দেখা দিলে তার প্রভাব কৃষিকাজে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে চাষের প্রয়োজনের জল সাশ্রয় করানোর বিষয়ে কৃষি বিজ্ঞানীরা চিন্তিত। কৃষিকাজে কিভাবে কম জল ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে নানারকম পদ্ধতি অবলম্বন করা শুরু করা হয়েছে।
ড্রিপ সেচ কি (Drip Irrigation) ?
একগুচ্ছ বদ্ধ প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যমে সুষমভাবে আর নির্দিষ্ট পরিমানে গাছের শিকড়ে সরাসরি সেচ পৌঁছে দেওয়াকে ড্রিপ সেচ বলে।
ড্রিপ সেচের সুবিধা কি (Benefits) ?
১. এতে ৩০-৭০% জল ও ৫০% বিদ্যুত্ সাশ্রয় হয়।
২. উঁচু নিচু জমিতেও সেচ সম্ভব।
৩. লবণাক্ত জলও এব্যবস্থায় ব্যবহার করা চলে।
৪. সারের প্রয়োজন ৫০% কমায়।
৫. আগাছার জন্ম রোধ করে।
৬. ভূমিক্ষয় রোধ করে।
৭. ফসলের মাধ্যমিক পরিচর্যা সুবিধার হয়।
৮. দক্ষ সেচ-মজুরের অভাব থাকলেও এই সেচে অসুবিধা নেই।
৯. জৈব কৃষিতে দারুন উপযোগী।
১০. সর্বোপরি ৩০-৭০% ফলন বৃদ্ধি করে।
ড্রিপ সেচের অংশগুলি -
১. ফিল্টার ইউনিট ,
২. ফার্টিলাইজার ট্যাঙ্ক ,
৩. প্লাস্টিক পাইপ (মেন, সাবমেন ও ল্যাটারাল)
৪. মাইক্রোটিউব ,
৫. ড্রিপার বা এমিটার।
ড্রিপ-সেচ কিভাবে কাজ করে?
পাম্পের সাহায্যে পুকুর, নালা, কুয়ো অথবা গভীর/অগভীর নলকূপ থেকে জল তোলা হয়। এরপর সেই জল ফিল্টারের মধ্যে দিয়ে বালি, মাটি, লবণ ইত্যাদি পরিষ্কার করে মেন লাইন দিয়ে সাবমেন ও শেষে ল্যাটারাল দিয়ে বাহিত হয়। ল্যাটারাল-এর গায়ে গাছের দূরত্ব অনুযায়ী ড্রিপার বা এমিটার বা ফলের ক্ষেত্রে মাইক্রোটিউব দিয়ে ড্রিপার লাগানো থাকে যা দিয়ে ফোঁটা-ফোঁটা করে জল গাছের গোঁড়ায় পড়ে। যে ফসলের যতটা জল দরকার সেই সময় ও পরিমানেই জল একেবারে root-zone এ পৌঁছায়।
ধান চাষে যেমন শ্রী পদ্ধতির প্রচলন করা হয়েছে তেমনই ফল, ফুল, সবজি ও পান চাষে কৃষী বিজ্ঞানীরা ড্রিপ বা বিন্দু সেচের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করছেন। ড্রিপ পদ্ধতিতে পাইপের মাধ্যমে জল একেবারে গাছের গোড়ায় গিয়ে পড়ে। এর ফলে জল গড়িয়ে গিয়ে নষ্ট হয়না। এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট পরিমান জল একেবারে গাছের গোড়ায় গিয়ে পড়ে । আবার নির্দিষ্ট পাত্রে সার বা ওষুধ গুলে রাখলে তা পাইপের মাধ্যমে জলের সাথে গাছের গোড়ায় গিয়ে পড়ে ফলে ওষুধ বা সারের অপচয় কম হয়।
আরও পড়ুন - Modern Agri Machinery – কম সময়ে কৃষিতে দ্বিগুণ লাভ পেতে ব্যবহার করুন এই মেশিন
এছাড়া স্প্রিঙ্কলার সেচের মাধ্যমে জল সারা গাছে ছিটিয়ে বা স্প্রে করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় । স্প্রিঙ্কলার সেচের ও বিন্দু সেচের মাধ্যমে জল সঞ্চয়ের পাশাপাশি ফলন বাড়বে, আগাছা কমবে, সার ও ওষুধের খরচ কমবে, শ্রমিকের খরচ কমবে। তাছাড়া মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় এই পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকরী।