২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের কন্যা সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে অগ্রগতির উদ্দেশ্যে সরকারি প্রকল্প ‘কন্যাশ্রী’ প্রচলন করেন। মেয়েদের জন্য এটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় সরকার স্কুল ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করে থাকে। এই প্রকল্পের আওতায় নারী শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে নারীর অধিকারও সুরক্ষিত রয়েছে। কন্যাশ্রী প্রকল্প যোজনা পশ্চিমবঙ্গ সরকার মেয়েদের অবস্থার উন্নতি এবং তাদের কল্যাণার্থে বিশেষত আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলির জন্য প্রচলন করেছে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা (Kanyashree Prakalpa) -
কন্যাশ্রী প্রকল্প ২০১৩ সালে ৮ ই মার্চ সমাজে মহিলাদের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রচলন করা হয়। যে সকল ছাত্রীর বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছর তারা কন্যাশ্রী K1-এর জন্য আবেদন করতে পারবে এবং প্রতি বছর ৭৫০ টাকা করে পাবে। যে সমস্ত ছাত্রীর বয়স ১৮ থেকে ১৯ বছর এবং কলেজ পড়ুয়া, তারা কন্যাশ্রী K2-এর আবেদন করতে পারবে এবং এককালীন ২৫,০০০ টাকা সরকারি অনুদান পাবে। যে সকল পড়ুয়া কোন কলেজ অথবা ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন (PG) কোর্স করছে তারাও কন্যাশ্রী K3 স্কিমের জন্য আবেদন করতে পারে। কন্যাশ্রী K3 স্কিমের আওতায় বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্রীরা প্রতি মাসে ২,৫০০ টাকা এবং কলা ও বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রীরা প্রতি মাসে ২,০০০ টাকা করে স্কলারশিপ পাবে।
আবেদনের যোগ্যতা (Eligibility) -
১. আবেদনকারীকে অবশ্যই একজন পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
২. কন্যাশ্রী K3 স্কলারশিপের আবেদনের জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই কোন কলেজ অথবা ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট গ্রাজুয়েশন (MA/M.Sc/M.Com) কোর্সে ভর্তি হতে হবে।
৩) কন্যাশ্রী K3 স্কলারশিপের আবেদনের জন্য প্রার্থীর অবশ্যই কন্যাশ্রী K2 আইডি থাকতে হবে। K2 আইডি না থাকলে কন্যাশ্রী K3 স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যাবে না।
৪. আবেদনকারীর অবশ্যই গ্রাজুয়েশনে ৪৫% নাম্বার থাকতে হবে, তবেই সে কন্যাশ্রী K3 স্কলারশিপের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবে।
প্রয়োজনীয় নথি (Documents to be submitted) -
১) আবেদনকারীর বার্থ সার্টিফিকেট।
২) আপনি যে অবিবাহিতা, সেটি জানিয়ে আপনার বাবা বা মা অথবা অভিভাবকের তরফ থেকে একটি বিবৃতি বা প্রমাণপত্র।
৩) আপনার ব্যাঙ্কের পাসবইয়ের প্রথম পৃষ্ঠার ফটোকপি।
৪. আপনার পারিবারিক আয় যে বছরে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকার বেশী নয়, তার প্রমাণ পত্র অর্থাৎ ইনকাম সার্টিফিকেট।
আবেদন পদ্ধতি (Application Procedure) –
অফলাইন আবেদন প্রক্রিয়া (Offline Application) -
কন্যাশ্রী প্রকল্পে আবেদন করার জন্য আপনাকে ফর্ম নিতে হবে আপনার স্কুল থেকে। মেয়েদের সরকারী স্কুলেই কন্যাশ্রীর জন্য ফর্ম পাওয়া যায়।
ফর্ম ফিল আপ করার পাশাপাশি আপনাকে ব্যাঙ্কে একটি অ্যাকাউন্ট অবশ্যই খুলে রাখতে হবে। কারণ, রাজ্য সরকার থেকে টাকা সরাসরি আপনার অ্যাকাউন্টে প্রেরণ করা হবে।
অনলাইনে আবেদন পদ্ধতি (Online Application) -
১) কন্যাশ্রী প্রকল্প ওয়েব পোর্টালের হোম পেজে যান।
২) ট্র্যাক অ্যাপ্লিকেশন অপশনে ক্লিক করুন।
৩) ড্রপ-ডাউন মেনু থেকে বছর এবং স্কিমের ধরণটি নির্বাচন করুন।
৪) এর পরে আপনার জন্ম তারিখ এবং অ্যাপ্লিকেশন আইডি এবং ক্যাপচা কোড এন্টার করুন।
৫) শেষে সাবমিট অপশনে ক্লিক করুন, আপনার আবেদনের স্ট্যাটাসটি প্রদর্শিত হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য -
সরকারী নিয়মে পারিবারিক আয়ের এই বাধ্যবাধকতা থাকে না যদি আবেদনকারী ৪০ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধী হন, অথবা যদি তার অভিভাবক না থাকেন, সে ক্ষেত্রে আপনাকে ইনকাম সার্টিফিকেটের পরিবর্তে যে ফটোকপিগুলি দাখিল করতে হবে সেগুলি হল-
১. আবেদনকারী যদি শারীরিক প্রতিবন্ধী হন, তার সার্টিফিকেট।
২. আপনি যদি পিতা মাতাকে হারিয়ে থাকেন, তাহলে আবেদনকারীর পিতা-মাতা জীবিত না থাকলে তাদের মৃত্যুর প্রমাণপত্রসহ আপনার আইনত অভিভাবকের এই বিষয়টি জানিয়ে একটি বিবৃতি।
আরও পড়ুন - এখন আমাদের কৃষকরা আয় করবেন আরও বেশী সরকারের এই প্রকল্পে পিএম কুসুম যোজনা (PM KUSUM YOJANA)