চিরতা বর্ষজীবী উদ্ভিদ।এর উচ্চতা প্রায় দেড় মিটার।পাতা কমবেশি ১০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ। পাতার অগ্ৰভাগ সূঁচালো। ফুল বৃন্তহীন এবং জোড়ায় জোড়ায় বিপরীত মুখী হয়ে ফোটে। চিরতার রসের নানান উপকারিতা রয়েছে।
চিরতার উপকারিতা (Chirata Benefits) -
ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস আক্রান্ত হতে দেয় না:
আমরা জানি তেঁতো খাবার খেলে শরীর ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস থেকে কম আক্রান্ত হয়। তার ফলে শরীর কম অসুস্থ হয়। আর চিরতার স্বাদ অত্যন্ত তেতো। তাই চিরতার জল শরীরকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার হাত থেকে বাঁচায়।
জ্বরের চিকিৎসায় চিরতার ব্যবহার:
জ্বর: আকষ্মিক ঋতু পরিবর্তনে অনেকের জ্বর হয়, সেই সাথে সর্দি-কাশি বেড়ে যায়। এ অবস্থায় হাত-পা চিবোয় বা কামড়ায়।
এ অবস্থা হলে ৫-১০ গ্রাম চিরতা ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে ঠাণ্ডা করতে হবে। পরে তা ছেঁকে সকালে অর্ধেক ও বিকালে অর্ধেক খেতে হবে। কয়েকদিন খেলে জ্বরের এ ভাবটা চলে যাবে।
অ্যালার্জির চিকিৎসায় চিরতার ব্যবহার:
অ্যালার্জির কারণে শরীর চুলকায়, চুলকানোর জায়গা ফুলে লাল হয়ে যায়, ত্বক থাকা থাকা হয়ে ওঠে।
আগের দিন রাতে শুকনো চিরতা ৪-৫ গ্রাম পরিমাণ এক গ্লাস (২৫০ মিলিলিটার) গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন ওটা ছেঁকে দিনের মধ্যে ২-৩ বারে খেতে হবে।
প্রবল হাঁপানিরর চিকিৎসায় চিরতার ব্যবহার:
অনেকের হাঁপানি সমস্যা আছে। অর্শের রক্ত পড়া বন্ধ হওয়ায় তা বেড়ে যায়। অল্প ঠাণ্ডা লাগলে বা ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি-কাশি হয়ে হাঁপানির টান বেড়ে যায়।
আধা গ্রাম চিরতার গুঁড়ো ৩ ঘণ্টা অন্তর মধুসহ চেটে খেতে হবে। এতে ২-৩ দিনের মধ্যে প্রবল হাঁপানি কমে যাবে।
চুলকানির সমস্যায় চিরতার ব্যবহার:
গায়ে চুলকানি হলে ২০ গ্রাম চিরতা অল্প পানি ছিটিয়ে বেটে নিতে হবে। এরপর কড়াই বা তাওয়াতে ১০০ গ্রাম সরিষার তেল দিয়ে জ্বাল দিতে হবে।
তেল গরম হয়ে ফেনামুক্ত হলে তাতে চিরতা ছাড়তে হবে। ভালো করে ভাজা হলে নামিয়ে ছাঁকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে চিরতা যেন পুড়ে না যায়। এ তেল চুলকানোর জায়গায় ঘষে অল্প অল্প করে মালিশ করলে দ্রুত চুলকানি সেরে যাবে।
চুল ওঠা বন্ধ করতে চিরতার ব্যবহার:
কোনো কারণ দেখা যাচ্ছে না, অথচ রোজ মাথা থেকে প্রচুর চুল উঠছে। চুল উঠতে উঠতে ঘন কেশ পাতলা হয়ে যাচ্ছে।
এক্ষেত্রে আগের দিন রাতে এক কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেই পানি ছেঁকে তা দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেললে চুল ওঠা কমবে।
একদিন পর পর একদিন এভাবে চিরতার পানি দিয়ে মাথা ধুতে হবে। ৩-৪ বার এভাবে ধুতে পারলে চুল ওঠা অনেক কমে যাবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চিরতার ব্যবহার:
চিরতা নিয়মিতভাবে খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে বা কমে। চিরতা দেহে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করে।
এক্ষেত্রে আগের দিন রাতে শুকনো চিরতা ৪-৫ গ্রাম পরিমাণ এক গ্লাস (২৫০ মিলিলিটার) গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন ওটা ছেঁকে সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
কৃমি সারায়:
কৃমি হলে পেটের উপরের অংশ মোচড়ায়, ব্যথা করে। এক্ষেত্রে আধা গ্রাম চিরতার গুঁড়ো সকালে মধুসহ বা চিনি মিশিয়ে চেটে খেতে হবে। পরে পানি খেতে পারেন। এতে কৃমির উপদ্রব চলে যাবে।
তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে:
নিজের তারুণ্য ধরে রাখার জন্য রোজ চিরতার পানি খেতে পারেন। কারণ চিরতা রক্তকে পরিষ্কার করে। রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। যেটি তারুণ্য ধরে রাখার একটি শর্ত।
তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে:
নিজের তারুণ্য ধরে রাখার জন্য রোজ চিরতার পানি খেতে পারেন। কারণ চিরতা রক্তকে পরিষ্কার করে। রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। যেটি তারুণ্য ধরে রাখার একটি শর্ত।
সতর্কতা:
তবে চিরতা যেহেতু ব্লাড সুগার লেবেলকে কম করে, তাই এটি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত। আর চিরতা খুব তেঁতো তাই বমি হয়ে যাবার সম্ভবনা থাকে। এছাড়া চিরতার জল খুবই উপকারি সেটা দেখলেন। তাই শরীরকে সুস্থ্য রাখার জন্য এবার থেকে রোজ খান চিরতার জল।