গাজর (Carrot) এর বৈজ্ঞানিক নাম Daucus carota। গাজরের ভিটামিন ও মিনারেলস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।গাজর ওজন কমানোর জন্য এটি একটি আদর্শ খাবার।
গাজরের উপকারিতা সর্বজন-প্রশংসিত। এজন্য একে সুপার ফুড বলা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গাজর সালাদ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পোলাও, খিচুড়ির সাথে মিশিয়েও গাজর রান্না করা যায়। এছাড়া গাজরের আচার, হালুয়াও দারুণ উপাদেয় খাবার।
গাজরের পুষ্টিগুণ (Benefits Of Carrot) -
গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-বি, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড, ফোলেট, পটাসিয়াম, আয়রন এবং ফাইবার রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে ৮২৮৫ মাইক্রোগ্রাম বিটাক্যারোটিন, ৪১ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি, ৩৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১২ মিলিগ্রাম ফসফরাস এবং ১২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।
গাজরের উপকারিতা-
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে-
গাজর চোখের রেটিনাতে বেগুনি পিগ্মেট এর সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে চোখের ফাংশন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। রাতকানা রোগ দূরীকরণে গাজর বেশ উপকারি।
লিভারের সমস্যা সমাধানে-
গাজরে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া যায় যা মলত্যাগের উদ্দীপনা সৃষ্টি করে লিভার ও কোলনকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন একটি করে গাজর সেবন করলে লিভারে প্রদাহ, ফোলা ভাব ও সংক্রমণ কমে যায়। এটি হেপাটাইটিস, সিরোসিস এবং কোলেস্টেসিসের মতো সমস্যা থেকে লিভারকে রক্ষা করে। গাজর লিভারের পিত্ত এবং হিমায়িত ফ্যাট কমাতেও সাহায্য করে। এটা দেহের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
অ্যান্টিএজিং হিসেবে-
গাজর আমাদের শরীরের অ্যান্টি এজিং উপাদান হিসেবেও কাজ করে। মেটাবলিজমের কারণে শরীরে ক্ষয়প্রাপ্ত সেলগুলিকে ঠিকঠাক করতে গাজর খুব কার্যকর।
সুন্দর ত্বকের জন্য গাজর-
গাজর ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত গাজরের জুস খেলে মুখের দাগ, বয়সের ছাপ দূর হয়ে যায়। এছাড়া গাজরে বিদ্যমান অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্টস্ ত্বক শুকিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে, ত্বককে করে তোলে সুস্থ এবং সতেজ।
মুখের স্বাস্থ্যসুরক্ষায় গাজর-
গাজর মুখের লালা উৎপাদন বাড়ায়। গাজর খাওয়ার সময় আমাদের মুখে ‘সিলভা’ নামক একটি যৌগের নিঃসরণ ঘটে। সিলভা মুখে অ্যাসিডের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং দাঁতের ক্ষয়ের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। নিয়মিত গাজর খেলে দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়।
কানের ব্যথার প্রতিকারে-
সর্দি-কাশি বা কোনো অসুস্থতার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কারণে অনেকসময় কানে ব্যথা হয়। কলা, গাজর, আদা এবং রসুন একসাথে পানিতে সেদ্ধ করে ১-২ ফোঁটা কানে ব্যবহার করলে ব্যথা কমে যাবে ইনশা’আল্লাহ ।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে-
গাজরের জুস শরীরে ক্ষতিকর জীবাণু, ভাইরাস এবং বিভিন্ন ধরনের প্রদাহের বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে। গাজর রক্তও পরিষ্কার করে থাকে। গাজরের স্যুপ ডায়রিয়া নিরাময়ে ভারি উপকারি। কৃমিনাশক হিসেবে গাজর ভালো প্রতিষেধক। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গাজরের সঙ্গে কয়েক কোয়া রসুন মিশিয়ে খান।
হার্টের সুরক্ষায় গাজরের উপকারিতা-
গাজর ডায়েটরি ফাইবারে পরিপূর্ণ থাকে। এই উপাদানগুলো ধমনির ওপর কোনো কিছুর আস্তরণ জমতে না দিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, হার্টকে সুস্থ রাখে। গাজরের আলফা ক্যারোটিন ও লুটিন নামক উপাদান হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে -
কোলেস্টেরল এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে গাজর দারুণ উপকারি। গাজরের রস দেহে চর্বির মাত্রা কমায়। সে সঙ্গে গাজরে বিদ্যমান ফাইবার কোলন পরিষ্কার রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে রক্ষা করে। গাজর রক্তের প্রধান উপাদান আরবিসিকে দীর্ঘজীবী করে। ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে। সাথে সাথে গাজর ত্বকে উপকারি কোলেস্টেরলের বা লাইপোপ্রোটিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। গাজরের পুষ্টিগুণ ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বের করে দেয় যা এথারোস্কেলোরোসিস এবং স্ট্রোক এর ঝুঁকি হ্রাস করে।
মস্তিষ্কের সুরক্ষায় -
গাজরের হালুয়া শিশুদের বুদ্ধি বিকাশে সাহায্য করে। এবং গাজরের জুস নার্ভাস সিস্টেমকে উন্নত করে ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা সমাধানে -
ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে এবং শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা(যেমন- অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস এবং এমফিসেমা ইত্যাদি) প্রতিরোধে গাজর খুব উপকারি।
আরও পড়ুন - যষ্টিমধু কি? কেন খাবেন এটি? জানুন বিস্তারিত (Health Benefits Of Liquorice)