পারিজাত বা পারিজাত মান্দার বৈজ্ঞানিক নাম: Erythrina variegata । বাংলায় এটি 'পালতে বা পালধে মাদার' নামে পরিচিত। হিন্দীভাষীরা একে বলে 'মান্দার'। মেদিনীপুর বা ঝাড়খণ্ড অঞ্চলে এটি 'ফরৎ' এবং উড়িষ্যার লােকেরা একে বলে 'পালধুয়া'।
পারিজাত ফুল (Parijat Flower) প্রায় সব এলাকাতে পাওয়া যায় ।এই গাছ ১৫/২০ ফুট বেশী উঁচু হয় না । ডাল থেকে ৭/৮ ইঞ্চি লম্বা পাতার ডাটা হয়। ডাটাই দুপাশে দু’টি ও মাঝখানে একটি – তিনটি পাতা দেখা যায়। পরিবেশের প্রভাবে ও যত্নের অভাবে দিনে দিনে এই গাছ দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে । পারিজাতের কিছু ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে । এখন আমরা এর সম্পর্কে কিছু জানব ।
পারিজাত গাছের উপকারিতা আয়ুর্বেদিক জগতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ওষুধের কাজে লাগে মূল-এর ছাল ও পাতা।
মূলত এই কতগুলি রোগে পারিজাত গাছের উপকারিতা অতুলনীয়। সেই রোগগুলি হলো –
১. ক্রিমি রোগে পারিজাত গাছের উপকারিতা (Health Benefits) :-
এই গাছ ক্রিমি রোগে দারুণভাবে কাজ করে। ক্রিমি অনেক ধরনের হয় ছোট বড়। ক্রিমির উপদ্রবে মাথা ধরা রোগও এসে হাজির হয়। এই অবস্থায় পারিজাত পাতার রস ৪ চামচ একটু গরম করে খেতে হয়।
২. স্তন্য হীনতায় :-
পারিজাত পাতার রস ২/৩ চামচ তার সঙ্গে ঝুনা নারকেল বেটে তার দুধ ৫ চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে সকালে কয়েকদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৩. মূত্রকৃচ্ছ রোগে :-
বর্তমানে এই রোগকে বলে বি-কোলাই ইনফেকশন। এই রোগে রোগীর জ্বরও হয় এবং ক্রিমিও থাকে পেটে। এই অবস্থায় পারিজাত পাতার রস ১ চামচ অল্প জল দিয়ে একটু গরম করে সকালে একবার, বিকেলে একবার খেতে হয়। এর ফলে ক্রিমি অর্থাৎ ব্যাকটিরিয়াগুলি ধ্বংস হয়।
৪. রিকেট রোগে :-
এই রোগ শিশুদের বেশী দেখা বা শোনা যায় শরীর দিন দিন শুকিয়ে যায়। গ্রাম-এর লোকেরা আবার অনেকে একে বলে পুঁয়ে লাগা রােগ। এই অবস্থায় পারিজাত গাছের মূলের ছালের রস ১০/১৫ ফোটা একটু দুধের সঙ্গে মিশিয়ে শিশুকে খাওয়াতে হয়।
৭. উদক মেহ রোগে:-
এই মেহরোগের প্রধান লক্ষণ প্রস্রাবের পরিমাণ বেশী হয়, তবে একটু ঘোলাটে ধরনের। প্রস্রাবে কোনও গন্ধ থাকে না। মুখের (গহ্বরের) তালু শুকিয়ে। যেতে থাকে। পিপাসার স্থানটাও শুকিয়ে যায়। এছাড়া ঐ রােগীর স্মরণ শক্তিও ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে। এই অবস্থায় ২ চামচ পারিজাত গাছের ছালের রস ১ চামচ মধু মিশিয়ে প্রত্যেকদিন সকালে একবার করে খেতে হয়। ২ বার করে (সকালে ও বিকেলে) খেলে ও উপকার পাওয়া যায়।
৮. অববাহুক রোগে :
এই রোগের প্রধান লক্ষণ হাত ঘােরানাে যায় না বা উঁচুতে তোলাও যায় না। অর্থাৎ হাত ঠিক মতো নাড়াচাড়া করা যায় না। এই অবস্থায় পারিজাত গাছের মূলের ছালের রস শুয়ে নাকের ফুটোতে (নাসাছিদ্রে) টোপ ফেলা দরকার। কয়েকদিন ৩০/৪০ ফোটা করে নাসাছিদ্রে (ড্রপার দিয়ে) ওষুধ (রস) দিতে হবে। উপকার পাওয়া যাবে।
৯. রক্ত আমাশয় :-
পারিজাত পাতা থেঁতো করে ২ চামচ এবং কাচা দুধ ৪ চামচ মিশিয়ে একটু গরম করে নিতে হবে। এই ভাবে ওষুধ তৈরি করে ৩/৪ দিন খেলেই রক্ত আমাশা রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।