পুরোনো ফল বাগানের নানান সমস্যা আছে। যেমন – ফলন কমে যাওয়া, ফলের গুণগত মান হ্রাস পাওয়া ও রোগপোকার উপদ্রব ইত্যাদি। এই সমস্ত সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য বাগানের যত্ন ও পরিচর্যা একান্ত প্রয়োজন।
আম বাগানের পুনর্নবীকরণ প্রযুক্তির সংক্ষেপ বর্ননা (Renewal technology of mango orchards) –
-
পৌষ – মাঘ মাসে প্রথমে যন্ত্রচালিত হাত করাত দিয়ে গাছের ডালপালা ছাঁটাই করে দিতে হবে, যাতে পরে সেখান থেকে ডালপালা ও পাতা জন্মাতে পারে। সতর্কতার সাথে ডালপালাগুলি কাটতে হবে যাতে সেখানে চিড় না ধরে।
-
ডালের কাটা অংশে কপার অক্সিক্লোরাইডের পেষ্ট বানিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে। পৌষ থেকে জৈষ্ঠ মাসে ১৫ দিন অন্তর ও আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ন মাস পর্যন্ত ২৫ দিন অন্তর জলসেচ দিতে হবে। ফাল্গুন মাসে সার প্রয়োগ করতে হবে। ৭৩০ গ্রাম নাইট্রোজেন, ৪০০ গ্রাম ফসফরাস,৭৮০ গ্রাম পটাশিয়াম, ১৬০০ গ্রাম নিম কোটেড ইউরিয়া, ২৫০০ গ্রাম সি. সু. ফসফেট, ১২৫০ গ্রাম মিউরেট অফ পটাশ এই সারগুলি দুভাগে ভাগ করে বর্ষার আগে ও পরে প্রয়োগ করতে হবে।
-
বাগানে জৈব সার প্রয়োগ আবশ্যিক। প্রতি বছর ১০০ কেজি জৈব সার ও ১০০ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ব্যবহারে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়।
-
বর্ষার সময় সুস্থ্য নীরোগ ডালগুলি রেখে অতিরিক্ত ডাল কেটে ফেলতে হবে ও পুনরায় কপার অক্সিক্লোরাইডের পেষ্ট কাটা অংশগুলিতে লাগিয়ে দিতে হবে।
-
দ্বিতীয়বার ডাল কাটার পর ২-৩ ঝুড়ি গোবর সার ও ১.২৫ কেজি ইউরিয়া আবার প্রয়োগ করতে হবে।
-
ফুল আনার জন্য ছাঁটাইয়ের ২০ মাস পর প্যাকোবুট্রাজন হরমোন স্প্রে করা যেতে পারে। তবে এই হরমোন দ্বিতীয়বার প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় না।
-
পুনর্নবিকৃত আম গাছের পরিচর্যায় অতিরিক্ত সতর্কতার ও যত্নশীল হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
-
যে আমের জন্য চাষী ভাইবোনেরা ভাল দাম আশা করছেন তাকে পাড়ার আগে থেকে গুটি ধরার সময় থেকেই যত্ন নিতে হবে।
আরও পড়ুন - টমেটোর বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার
আমের গুটি ধরার পর ফল চয়নের আগে অবধি পরিচর্যা নিচে দেওয়া হল -
-
এই সময় থেকেই সেচের জন্য লক্ষ্য রেখে ১৫-২০ দিন অন্তর নিয়মিত সেচ দেওয়া দরকার ফলে আমের পরিপুষ্টতা ও গুনমান সমৃদ্ধ হয়।
-
কচি অবস্থা থেকেই সূলীপোকা বা ফলছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হয় আর এর জন্য নিম ঘটিত যে কোন কৃষি বিষ সেই বিষের ঘনত্ব অনুযায়ী বলা প্রয়োগ মাত্রায় স্প্রে করুন। এতে পূর্ববর্তী প্রতিরক্ষার সঙ্গে আমকে নিরাপদ বিষ প্রয়োগের ব্যবস্থাপনায় আনা যাবে।
-
আমের গুটি বড় হতে শুরু করলেই চৈত্র-বৈশাখ মাসেই ফলের মাছির উপদ্রব শুরু হয়। ফলে এই সময় ব্যবস্থা নিলে পরবর্তী পর্যায়ে আম বড় হলে ক্ষতিকারক রাসায়নিক প্রয়োগ থেকে যেমন বাঁচা যাবে তেমনই খরচ কমিয়ে বাগানকে তথা আমকে “Export Quality” তে উন্নীত করা যাবে।
-
চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে পুরো আমের ফল তোলার মরশুম অবধি আম বাগিচায় হেক্টর প্রতি ১০-১২ টি (বিঘা প্রতি ২-৩ টি) ফলের মাছি ধরার ফাঁদ লাগাতে হবে। বাজারে নানা কোম্পানীর ফেরোমোন ফাঁদ সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়।
-
উৎকৃষ্ট গুণমানের লক্ষে ফলের উপর কালো দাগ একটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা। আমের বিভিন্ন শোষক পোকাদের দ্বারা নিঃসৃত মধুর উপর ছত্রাক জমে আমের পাতার উপর কালো দাগ সৃষ্টি করে যা বৃষ্টির সঙ্গে ধুয়ে নেমে ফলের উপর কালো দাগ করে ফলের গুণমান তথা দাম কমিয়ে দেয়। প্রতি বাগিচাতেই কম বিস্তর পাতায় কালো ছোপ হয়। ফলে এগুলি চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই জলে দ্রবনীয় সালফার + অ্যাসিফেট + গাম অ্যাকাসিয়া (০.২% + ০.০৫% + ০.৩%) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। চাষীভাই বোনেরা এসমস্ত রাসায়নিক প্রয়োগ না করতে পারলে শুধুমাত্র ভাতের মাড় বা স্টার্চ ২% স্প্রে করলে কিছুটা সুফল পাবেন।
এছাড়া অ্যানথ্রাকনোস বা ধ্বসা রোগ গাছের মুকুলে এলে প্রতিকার ব্যবস্থা ঠিকমত না নিলে তা আমে এসে ফলকে ক্ষতিগ্রস্থ করে বা পরবর্তী পর্যায়ে ফল পাকার সময় ভ্যাপসা আবহাওয়ায় পরিপূর্ণ ফলের গায়ে এই রোগের ফলে কালো দাগ পড়ে ফলগুলির গুণমান প্রভূত পরিমানে কমিয়ে দেয়। ফলের গুটি অবস্থা থেকেই কুয়াসা, হালকা বৃষ্টিপাত ও ভ্যাপসা আবহাওয়ার ক্ষেত্রে কার্বেন্ডাজিম ১ গ্রাম প্রতি লিটারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এর সঙ্গে ২ মিলি অ্যাসিফেট + ইমিডাক্লোপ্রিডের মিশ্র কীটনাশক মিলিয়ে এই দুই রাসায়নিক স্প্রে আমের গুটি অবস্থায় রোগ ও পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে এক সুরক্ষা কবচের কাজ করবে।
তথ্য সহায়তা : ড. শুভদীপ নাথ
আরও পড়ুন - জানুন টিউলিপ ফুলের বৈশিষ্ট্য ও টিউলিপ ফুলের চাষাবাদের পদ্ধতি