অজস্র ফুল আমাদের বাংলা জুড়ে রয়েছে। ঘরে ঘরে আমারা বিভিন্ন ফুলের গাছও লাগাই। এতে যেমন বাড়ির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি ঘটে তেমনই মনও ভালো থাকে। আমাদের রাজ্যে একটি অন্যতম সুন্দর দেখতে ফুল হলো দোপাটি। সংগীত থেকে সাহিত্য ভাবনা শিল্পমাধ্যমের এই দুই ভাবনাতেই দোপাটির প্রসঙ্গ উঠে এসছে বারবার। অত্যন্ত সুন্দর দেখতে এই ফুল, বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। প্রায় সব ঋতুতেই এই ফুল ফুটলেও, বর্ষাকালে এই ফুলের রঙও যেমন খোলে তেমনই এর আকারও অনেকটা বৃদ্ধি পায়। মূলত দোপাটি গাছের কান্ড খুবই নরম হয়, এবং গাছ বড় হলে ঝোপালো আকার নেয়। দোপাটি গাছ ২ ফুটের মতন লম্বা হয়। উর্বর মৃত্তিকা পেলে এই ফুল গাছের চাষ খুবই ভালো হয়। বাড়ির ছাদেও এই চাষ খুব ভালো হয়। আমাদের দেশে প্রধানত বালসাম এবং ক্যামেলিয়া প্রজাতির দোপাটি ফুলের চাষই বেশি পরিমাণে হয়।
মাটি ও জলবায়ু: (Soil and Cimate)
দোপাটি ফুলের চাষের জন্য দো-আঁশ মৃত্তিকা সর্বোত্তম। এ ফুল চাষের জন্য আর্দ্র আবহাওয়া সবথেকে ভালো। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টি পড়লে এই ফুল চাষে ক্ষতি হতে পারে।
জমি তৈরী ও বীজ বপন: (Land Preparation)
গভীরভাবে কুপিয়ে লাঙ্গল ও মই দিয়ে মাটি নরম করে দোপাটি চাষের জন্য প্রথমে জমি বানিয়ে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে দোপাটি চাষের সময় যেন জমি আগাছা মুক্ত থাকে। ২০০ কেজি কম্পোষ্ট বা গোবর সার, ৩ কেজি হাড়েরগুড়া অথবা সিঙ্গল সুপার ফসফেট প্রতি ১০০ বর্গমিটার জায়গায় প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া উচিত। সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য জমি ভাগ করে নিতে হবে। ১০০ বর্গমিটার জমির চারার জন্য ৫ থেকে ৬ গ্রাম বীজ জরুরি।
চারা রোপন: (planting)
চারা ৮-১০ সেমি. এর মতন যখন বড় হবে তখন তা তুলে নিয়ে মূল জমিতে একফুট বা ৩০সেমি. দূরে দূরে রোপণ করতে হবে।
সার প্রয়োগ: Fertilizer)
চারা রোপনের প্রায় ২০ দিন বাদে গাছের গোড়ায় এক সপ্তাহ অন্তর খোল ও গোবর ভেজানো জল দিতে হবে। এই জৈব তরল সার ফুল আসার আগে প্রতি লিটারে ১০০ গ্রাম সুপার ফসফেট মিশিয়ে দিলে ফুলের মান ভালো হতে বাধ্য।
সেচ: (Irrigation)
দোপাটি চারা পোঁতার পর গাছের গোড়া শুকনো হয়ে এলে হালকা ভাবে সেচ দিয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে জল এই চাষের জন্য উপযুক্ত হলেও, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত দোপাটি চাষের উপযুক্ত নয়।
আরও পড়ুন: Toamto Farming Process: টমেটো চাষ শিখে হয়ে উঠুন ভাগ্যবান
আগাছা পরিষ্কার: (Weed Management)
লক্ষ্য রাখা দরকার দোপাটি ক্ষেতে যেন আগাছা না জন্মায়। আগাছামুক্ত দোপাটি চাষের জন্য বাগানে দোপাটি গাছের গোড়ার মাটি খুঁচিয়ে হালকা করে দিতে হবে এবং আগাছা জন্মালে তা নিড়ানি দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
কীটপতঙ্গ দমন ও রোগ নিয়ন্ত্রণ: (Pest control and Disease Management)
দোপাটি চাষের সময় লাল মাকড়সা, জাবপোকা ও শোষক পোকা ইত্যাদি কীটপতঙ্গের তরফ থেকে আঘাত আসতে পারে। এর থেকে গাছকে বাঁচানোর জন্য প্ৰয়োজনীয় কীটনাশক গাছে স্প্রে করে দিতে হবে। এছাড়াও দোপাটি গাছে চিতি রোগ দেখা দেয়। যার ফলে গাছের পাতায় সাদা আস্তরণ পড়ে যায়। এর ফলে গাছের বাড়বাড়ন্ত বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই রোগ থেকে গাছকে বাঁচানোর জন্য দ্রবণীয় গন্ধক জলে গুলি পাতায় ষ্প্রে করা উচিত।
ফুল সংগ্রহ: (Harvest)
চারা লাগানোর দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই গাছে ফুল চলে আসে। ওই সময়ই ফুল তুলে নেওয়া ভালো। বীজ সংগ্রহ করতে হলে, ফল পাকার আগেই তা করে নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: Papaya Farming – অতিরিক্ত আয় করতে খুব সহজেই করুন বাগানে পেঁপে চাষ