কলা আমাদের দেশের সর্বপ্রধান ফল যা সারা বছর প্রায় একই হারে বাজারে পাওয়া যায়। কলার চাহিদা বাজারে সবসময় তুঙ্গে থাকে। ইহা সুস্বাদু সহজলভ্য ও পুষ্টিকর এর ফলন অন্যান্য ফল ও ফসল অপেক্ষা অনেক বেশি। কলা মূলত ক্যালরি সমৃদ্ধ ফল। এছাড়াও এতে ভিটামিন এ, বি-৬ ও সি এবং ফসফরাস, লৌহ ও ক্যালসিয়াম রয়েছে।
পাকা কলা ফল হিসাবে খাওয়া হয়, আবার কাঁচা কলা তরকারি হিসাবে অনেকের প্রিয় খাদ্য। কলার থোর/মোচা এবং শিকর ডায়াবেটিস, আমাশয়, আলসার ও পেটের পীড়া নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। তাই, কলা চাষে (Banana Cultivation) কৃষকদের আর্থিক লাভও হয়ে থাকে |
মাটি ও জলবায়ু (Soil and climate):
পর্যাপ্ত রোদযুক্ত ও জল নিকাশের সুব্যবস্থাসম্পন্ন উর্ববর দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। গাছের বৃদ্ধি এবং উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী তাপমাত্রা ১৫-৩৫০সে.। তাপমাত্রা ১৩০সে. এর নীচে কলায় শৈত্যাঘাত দেখা যায়। প্রতি মাসে গড়ে ১২০ সেমি বৃষ্টিপাত কলা চাষের জন্য অনুকুল। শুষ্ক আবহাওয়া বা দীর্ঘকালীন খরা, শিলাবৃষ্টি, ঝড়, সাইক্লোন ও বন্যা কলা চাষের বাধা সৃষ্টি করে |
চারা নির্বাচন:
বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য টিস্যুকালচার চারা নির্বাচন করাই শ্রেয়। তবে টিস্যুকালচার চারা না পাওয়া গেলে অসি তেউড় লাগাতে হবে। তিন-চার মাস বয়স্ক সুস্থ্য সবল অসি তেউড় রোগমুক্ত বাগান থেকে সংগ্রহ করা উচিৎ। সাধারণত বেটে জাতের গাছের ৩৫-৪৫ সে.মি. এবং লম্বা জাতের ৫০-৬০ সে.মি. দৈর্ঘ্যরে ১.৫-২.০ কেজি ওজনের চারা লাগানো হয়।
টিস্যুকালচার চারা ব্যবহারের সুবিধা (Benefits of Tissue Culture):
চারা তাড়াতাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয় ও চারার মৃত্যুহার কম এবং সব চারার বৃদ্ধি সমান হয় | সব গাছের ফুল প্রায় একই সাথে আসে এবং সব গাছের ফল প্রায় একই সাথে আহরণ হয় | ফল পেতে সময় কম লাগে ও ফলন বেশি হয় | চারা রোগমুক্ত থাকে ফলে রোগ ব্যবস্থাপনা কম নিতে হয় ও শ্রমিক খরচ কম লাগে |
জমি তৈরী:
জমি ভালোভাবে চাষ করে ১.৫-২.০ মিটার দূরে দূরে ৪৫ সে.মি.দ্ধ ৪৫ সে.মি. দ্ধ ৪৫ সে.মি. আকারের গর্ত খনন করতে হয়। চারা রোপণের ১৫-২০ দিন আগেই গর্তে গোবর সার ও টিএসপি মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত বন্ধ করে রাখতে হবে। চারা রোপণের পর পানি দিয়ে জমি ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হয়।
রোপনের সময়:
বছরের যে কোন সময়েই কলার চারা রোপণ করা যায়। তবে অতিরিক্ত বর্ষা ও অতিরিক্ত শীতের সময় চারা না লাগানোই ভালো। বর্ষার শেষে আশ্বিন-কার্তিক মাস চারা রোপণের সর্বোত্তম সময়। এসময় মাটিতে যথেষ্ট রস থাকে, ফলে সেচের প্রয়োজন হয় না। এ সময়ে রোপিত চারার ফলন সবচেয়ে বেশি। কলার চারা রোপণের দ্বিতীয় সর্বোত্তম সময় হলো মাঘ মাস। এ সময় চারা রোপণের জন্য জল সেচ প্রয়োজনীয় |
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
মধ্যম উর্বর জমির জন্য গাছ প্রতি গোবর/আবর্জনা পচাসার ১০ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০ গ্রাম, এমওপি ৬০০ গ্রাম, জিপসাম ২০০ গ্রাম, বরিক এসিড ২ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। উল্লিখিত পরিমাণের সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিঙ্কঅক্সাইড ও বরিক এসিড এবং অর্ধেক এমওপি সার গর্ত তৈরির সময় গর্তে দিতে হয়। ইউরিয়া ও বাকী অর্ধেক এমওপি চারা রোপণের ২ মাস পর থেকে ২ মাস পর পর ৩ বারে এবং ফুল আসার পর আরও ১ বার গাছের চর্তুদিকে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। সার দেওয়ার সময় জমি হালকাভাবে কোপাতে হবে যাতে শিকড় কেটে না যায়। জমির আর্দ্রতা কম থাকলে সার দেওয়ার পর জল সেচ দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
সেচ:
শুষ্ক মৌসুমে ১০-১৫ দিন পর পর জমিতে সেচ দেওয়া দরকার। আবার বর্ষার সময় বাগানে যাতে জল জমতে না পারে, তার জন্য নালা করে অতিরিক্ত জল নিকাশের ব্যবস্থা করতে হয়।
আরও পড়ুন - Palang Farming: জেনে নিন পুষ্টিকর পালং শাক চাষ পদ্ধতি
ফল সংগ্রহ:
ঋতু ভেদে রোপণের ১০-১৩ মাসের মধ্যেই সাধারণত সব জাতের কলাই পরিপক্ক হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করলে কলার গাঁয়ের শিরাগুলো তিন-চতুর্থাংশ পুরো হলেই কাটতে হয়। তাছাড়াও কলার অগ্রভাগের পুষ্পাংশ শুকিয়ে গেলেই বুঝতে হবে কলা পুষ্ট হয়েছে। সাধারণত মোচা আসার পর ফল পুষ্ট হতে ২-৪ মাস সময় লাগে। কলা কাটানোর পর কাঁদি শক্ত জায়গায় বা মাটিতে রাখলে কলার গায়ে কালো দাগ পড়ে এবং কলা পাকার সময় দাগওয়ালা অংশ তাড়াতাড়ি পচে যায়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - কালোজিরা চাষ থেকেও হতে পারে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন, জানুন চাষের পদ্ধতি