গোলমরিচ একটি মসলা জাতিয় অর্থকরী ফসল। খাবারকে সুস্বাদু করতে এবং বিভিন্ন ভেষজ ওষুধের সাথে এর ব্যবহার দেখা যায় | সকল রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবার জন্য এই গোলমরিচ খুবই উপকৃত | বাজারে এর চাহিদা বছরের সবসময় থাকে তুঙ্গে | তাই বেশিরভাগ চাষীরা এগিয়ে আসছেন গোলমরিচ চাষে | গ্রামীণ অর্থনৈতিক ভিত সুদৃঢ় ও কম সময়ে অধিক উপার্জন পেতে গোলমরিচ এক অর্থকরী ফসল হিসেবে বিবেচিত। তাই গোলমরিচ চাষ (Black pepper cultivation) করতে কৃষকের ক্ষেত প্রস্তুত, চারা উৎপাদন ও রোপণ প্রণালী, রোগ প্রতিরোধ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করে হল এই নিবন্ধে |
মাটি(Soil):
অব্যবহৃত বা পতিত জমিতে উচ্চ জৈব সার বিশিষ্ট জল জমে না, পাহাড়ের লালমাটি গোলমরিচ চাষের জন্য বেশি উপযোগী। বন্যা কবলিত অঞ্চল ছাড়া বেলে দো-আঁশ মাটিতে গোল মরিচের চাষ করা যায়। আমাদের দেশের উত্তরবঙ্গের মাটি গোলমরিচ চাষের জন্য উপযুক্ত |
জলবায়ু(Climate):
গোলমরিচের পরাগ সংযোগ বৃষ্টির উপর নির্ভর করে। গোলমরিচ চাষের জন্য বার্ষিক ২৫০০ মিঃ মিঃ বৃষ্টি এবং ১০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজনীয়। দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টি অথবা খরা পরিস্থিতি গোলমরিচ চাষের জন্য খারাপ।
জাত:
অনেকগুলো জাত থাকলেও উত্তরবঙ্গের জন্য পানিয়ূর-১, কারিমুণ্ডা জাতগুলি বেশি প্রচলিত। ইরিথ্রিনা, সিলভার ওক, সুপারি, নারকেল ইত্যাদি অবলম্বণকারী গাছের সঙ্গে লতিয়ে বাড়ে গোলমরিচ।
আরও পড়ুন - Star Fruit Cultivation: জেনে নিন ছাদে কামরাঙার চাষ পদ্ধতি
চারা উৎপাদন পদ্ধতি:
সাধারণত গোলমরিচের চারা ডালের কলম থেকে তৈরি করা হয়। গোলমরিচের গাছের গোড়ার অংশকে ‘রানার’ বলা হয়। রানারের প্রতিটি গাঁট থেকে শিকড় বের হয়ে থাকে। রানারের প্রতি তিনটি গাঁটের একটি অংশ কেটে নিয়ে আশ্রয়ী গাছের কাছে ‘সরা’ লাগিয়ে দিতে হয়। মাটির সঙ্গে ৩ : ১ অনুপাতে দাগ দিয়ে গোলমরিচের ডাল থেকে তিনটি গাঁটযুক্ত কলম কেটে লাগাতে হবে। এক থেকে দেড় মাস পর ওই কাটিং থেকে শিকড় বেরিয়ে আসবে। তখন পলিথিন ব্যাগে ৪ ইঞ্চি করে ৩ ভাগ দো- আঁশ মাটি ভর্তি করে ওই শিকড়যুক্ত কাটিং থেকে সাবধানে উঠিয়ে পলিথিন ব্যাগে রোপণ করে দিতে হবে। রোপণের আগে বাঁশের কাঠি দিয়ে পলিথিন ব্যাগের মাটিতে গর্ত করে নিয়ে শিকড়যুক্ত কাটিং লাগাতে হবে। ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে একটি সুন্দর চারা গজাবে।
রোপণ পদ্ধতি:
বর্ষার শুরুতে ২ বা ৩ টি পর্ব যুক্ত গোলমরিচের কলম প্রতিটি অবলম্বনকারী গাছের উত্তর-পূর্ব কোণে ৩০ সেমি জায়গা ছেড়ে লাগাতে হবে। অন্তত এক ফুট লম্বা, এক ফুট চওড়া এবং এক ফুট গভীর গর্ত করে তাতে ৮-১০ কিলোগ্রাম কম্পোস্ট সার মিলিয়ে গর্ত ভর্তি করে কলম চারা লাগাতে হবে। পরে যখন গোলমরিচের লতা বাড়বে তা অবলম্বনকারী গাছের সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে। আসতে আসতে পর্ব থেকে শিকড় বার হয়ে অবলম্বনকারী গাছকে আঁকড়ে ধরে ফেলবে।
রোগবালাই ও দমন(Disease management system):
গোলমরিচ চাষে কিছু ছত্রাক জাতীয় রোগ দেখা দেয়। এদের মধ্যে কুইক উইল্ট, অ্যানথ্রাকনোজ উল্লেখযোগ্য। এই সমস্ত রোগের হাত থেকে দূরে রাখতে হলে দেখতে হবে যাতে জমিতে জল না দাঁড়ায়, গাছের মূল ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
ছত্রাক জাতীয় রোগে আক্রান্ত হলে গাছের পাতাগুলি ধীরে ধীরে কালো রং ধারণ করে। মাটির উপরে থাকা কাণ্ড পচতে শুরু করবে এবং গাছটি খুব দ্রুত শুকিয়ে যাবে। এই ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে কপার অক্সিক্লোরাইড (০.২ শতাংশ) ৫-১০ লিটার প্রতি গাছের গোড়ায় দিতে হবে। এবং বোর্দো মিশ্রণ এক শতাংশ স্প্রে করতে হবে ১২-১৫ দিন অন্তর। অন্তত ৩ থেকে ৪ বার।
তবে এই সমস্ত রোগ দেখা দেওয়ার আগে থেকেই চাষিকে সতর্ক থাকতে হবে। এর জন্য বর্ষার আগে থেকেই মেটালাক্সিল এবং ম্যানকোজেবের মিলিত ওষুধ যা বাজারে রিডোমিল বলে পাওয়া যায় ০.২ শতাংশ হারে ১৫ দিন অন্তর দুই-তিন বার স্প্রে করতে হবে। যদি রোগ বাগানে ছড়িয়ে যায়, গাছগুলিকে বাগান থেকে দ্রুত বার করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
সাধারণ ভাবে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ৪-৫ কিলোগ্রাম কাঁচা ফল পাওয়া যায়। যা শুকিয়ে নিলে ১-১.২৫ কিলোগ্রাম শুকনো ফল পাওয়া যায়। এর বাজার মূল্য ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এক বিঘা জমিতে গোলমরিচ চাষ করলে শুধু গোলমরিচ থেকে অতিরিক্ত এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় সম্ভব এবং কৃষকবন্ধুদেরও আর্থিক উন্নতি ঘটতে পারে |
আরও পড়ুন -Shing Fish Farming: পুকুরে লাভজনক শিং মাছ চাষ করে দ্বিগুন উপার্জন করুন