কৃষ্ণ মুলোর বৈজ্ঞানিক নাম রাফানাস স্যাটিভাস ভার নাইজার | এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপযোগী | সাধারণত, এটি একটি বার্ষিক উদ্ভিদ; এর অর্থ হল, কয়েক মাসের মধ্যে এটি অঙ্কুরোদগম হয়, বেড়ে ওঠে, পুষ্পিত হয় এবং ফলসজ্জার পরে এটি মারা যায় | এটি ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এবং কালো ত্বক থাকে এবং দীর্ঘতর বা বৃত্তাকার মুলো জন্মায় | এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ও লিভারের রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে | বাড়িতে খুব সহজেই কৃষ্ণ মুলো চাষ (Black Radish Farming) করা যায় |
মাটি(Soil):
উঁচু মাঝারি ও মাঝারি নিচু জমিতে মুলো চাষ করা যায়। সুনিস্কাশিত বেলে দোআঁশ মাটি মুলো চাষের জন্য উপযুক্ত। এঁটেল মাটিতে মুলোর বৃদ্ধি কম হয়। প্রধানত, মুলো চাষের জন্য জমি গভীরভাবে ধুলো ধুলো করে চাষ করতে হয়। ছাই ও জৈব সার বেশী ব্যবহারে মুলোর বৃদ্ধি ভালো হয়।
বীজের হার ও বপন(Seed):
সাধারণত, আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসের মধ্যেই অধিকাংশ মুলোর বীজ বপন করা হয়। প্রতি হেক্টরে বপনের জন্য ২.৫-৩.০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। সাধারণত, ছিটিয়ে বীজ বপন করা হয়। তবে সারিতে বপন করলে ভালোভাবে পরিচর্যা করা হয় । সারিতে চাষ করলে, এক সারি থেকে আর এক সারির দূরত্ব হতে হবে ২৫-৩০ সেমি.।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
মুলোর অধিক ফলনের জন্য বিঘা প্রতি গোবর বা আবর্জনা পচা সার ১.৫ থেকে ২ টন জমি তৈরির সময় সবটুকু জৈব সার দিতে হবে | ট্টিপুল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সার ২০ কেজি, ইউরিয়া সার ৪০-৪৫ কেজি ও মিউরেট অব পটাশে (এমওপি) ২৫-৩০ কেজি ব্যবহার করতে হবে। টিএসপি সব ও এমওপি সারের অর্ধেক মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বীজ বপনের পর তৃতীয় ও পঞ্চম সপ্তাহে ইউরিয়া ও বাকি অর্ধেক এমওপি সার সমান ২ কিস্তিতে ভাগ করতে হবে | তারপর, সেচ দিতে হবে। মুলোর বীজ উৎপাদন করতে হলে জমিতে অবশ্যই বোরন সার হিসেবে বোরিক পাউডার/বোরক্স ব্যবহার করতে হবে। প্রতি বিঘায় ২ কেজি বোরিক এসিড/বোরাক্স দেওয়া বাঞ্চনীয়।
আরও পড়ুন -Muskmelon cultivation guide: জেনে নিন সহজ উপায়ে বাঙ্গি বা খরবুজা চাষের পদ্ধতি
পরিচর্যা:
প্রধানত, বীজ বপনের ৭-১০ দিন পর অতিরিক্ত চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে বেশি জায়গার দরকার হয়। তাই চারা অবস্থায় চারার ঘনত্ব বেশি হলে কয়েক দফায় চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। তুলে নেওয়া চারাগুলো বাজারে বিক্রি করা যেতে পারে। মাটিতে রস কম থাকলে সেচ দিতে হবে। প্রতি কিস্তির সার উপরি প্রয়োগের পর পরই সেচ দিতে হবে। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য মাঝে মাঝে নিড়ানী দিয়ে আগাছা পরিস্কার করে দিতে হবে।
রোগবালাই ও দমন(Disease management system):
মুলোর পাতায় অল্টারনারিয়ার দাগ একটি প্রধান সমস্যা | মুলো পাতায় বিটল বা ফ্লি বিটল পাতা ছোট ছোট ছিদ্র করে খেয়ে ফেলে। এ ছাড়া করাত মাছি বা মাস্টার্ড স ফ্লাই, বিছা পোকা ও ঘোড়া পোকা এরাও মূলার পাতা খেয়ে ক্ষতি করে। বীজ উৎপাদনের সময় জাব পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। তাই, গাছ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে | বেশি পচন ধরলে সেই পাতা কেটে বাদ দিতে হবে |
আরও পড়ুন -Worm control in agricultural field: জেনে নিন কৃমির উপদ্রব থেকে ফসল রক্ষার উপায়