শীতকালীন গাজর চাষ কৃষকবন্ধুদের কাছে অন্যতম লাভজনক সবজি চাষ | গাজরের চাহিদাও বাজারে থাকে প্রচুর | ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ পুষ্টিকর সবজি হলো গাজর । এতে ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, শ্বেতসার এবং অন্যান্য ভিটামিন যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। তরকারি ও সালাদ হিসেবে গাজর খাওয়া যায়। গাজরের হালুয়া অনেকের প্রিয় খাবার। নিয়ম অনুযায়ী চাষ করলে গাজরের ভালো ফলন পাওয়া যায়। এটি সহজে নষ্ট হয় না। সারা বছর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই গাজর চাষ তুলনামূলক লাভজনক।
গাজরের জাত:
সাধারনত বিদেশ থেকে বিভিন্ন জাতের গাজরের বীজ আমদানি করে চাষ করা হয়। যেমন-রয়েল ক্রস, কোরেল ক্রস, কিনকো সানটিনে রয়েল ও স্কারলেট নান্টেস। এছাড়াও আরও আছে পুষা কেশর, কুরোদা-৩৫, নিউ কোয়ারজা, সানটিনি, ইয়োলো রকেট ইত্যাদি জাতগুলো কৃষকদের নিকট জনপ্রিয়। এসব জাতের মধ্যে পুষা কেশর আমাদের দেশের জলবায়ুতে বীজ উৎপাদনে সক্ষম।
মাটি(Soil):
পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন বেলে দোঁআশ ও দোআঁশ মাটি গাজর চাষের জন্য উপযোগী।
বীজ বপন সময়:
আশ্বিন থেকে কার্তিক (মধ্য সেপ্টেম্বর-মধ্য নভেম্বর) মাস বীজ বপনের উত্তম সময়।
বীজ হার ও বীজ বপন:
প্রতি হেক্টরে ৩-৪ কেজি বীজ লাগে।সারি-সারির দূরত্বঃ ২০-২৫ সেমি।গাছ-গাছের দূরত্বঃ ১০ সেমি |
জমি তৈরী:
১) গাজর চাষের জন্য ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরী করতে হবে।
২) জমির মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরী করতে হবে।
৩) গাজরের বীজ সারিতে বপন করা ভাল। এতে গাজরের যত্ন নেয়া সহজ হয়।
৪) গাজরের বীজ খুব ছোট বিধায় ছাই বা গুড়া মাটির সাথে মিশিয়ে বপন করা ভাল।এজন্য ভাল বীজের সাথে ভাল শুকনা ছাই বা গুড়া মাটি মিশিয়ে বপন করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন -Vertical Farming: উল্লম্ব চাষ ও ছাদ বাগানের সাথে কৃষির ক্রমবিকাশ
সার প্ৰয়োগ:
গাজর চাষে হেক্টরপ্রতি নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে। গোবর/জৈবসার ১০ টন, ইউরিয়া ১৫০ কেজি, টিএসপি ১২৫ কেজি, এসওপি/এমপি ২০০ কেজি হারে প্রয়োগ করতে হবে | সম্পূর্ণ গোবর ও টিএসপি এবং অর্ধেক ইউরিয়া ও এমপি সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সমান দুই কিসিৱতে চারা গজানোর ১০-১২দিন ও ৩৫-৪০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।বাকি অর্ধেক এমপি সার চারা গজানোর ৩৫-৪০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
পরিচর্যা:
১। বীজ থেকে চারা গজাতে ১০-২০ দিন সময় লাগতে পারে। তবে বপনের আগে বীজ ভিজিয়ে রাখলে (১৮-২৪ ঘন্টা) ৭-১০ দিনের মধ্যে চারা বের হয়।
২। চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর ৮-১০ সেমি পরপর ১ টি করে গাছ রেখে বাকী সব উঠিয়ে ফেলতে হবে। একই সাথে আগাছা পরিস্কার ও মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।
৩। প্রয়োজনমত সেচ দেয়া ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। মাটির জো দেখে দুসপ্তাহ পরপর ৩-৪ টি সেচ দেয়া উৎপাদনের জন্য ভালো।
রোগবালাই ও প্রতিকার:
জাব পোকা:
এ পোকা ও গাছের কচি অংশের রস শুষে খেয়ে গাছের সমূহ ক্ষতি করে। পোকা দমনের জন্য রগোর এল -৪০, ক্লাসিক ২০ ইসি, টিডফেট ৭৫ এসপি, টিডো ২০ এসএল ইত্যাদি কীটনাশকের যে কোন একটি অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করা যেতে পারে।অথবা, বাইকাও-১ প্রয়োগ করতে হবে।
পচারোগ:
গাজর চাষে প্রায়শ এ রোগরে র্প্রাদুভাব লক্ষণীয়। গাজরে মূল ও পাতার গোড়ায় ব্যাক্টেরিয়াজনিত পচন রোগ দেখা যায়। উল্লখ্যে যে, নাইট্রোজনে সার অতিরিক্ত প্রয়োগে এ রোগ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। কম্প্যানিয়ন ২ গ্রাম/লিটার পানি অথবা ইন্ডোফিল এম-৪৫ ২ গ্রাম/লিটার পানিতে স্প্রে করতে হবে।
গাজরের হলুদ ভাইরাস রোগ:
লীফ হপার পোকার মাধ্যমে গাজরে অনেক সময় হলুদ ভাইরাস রোগ র্প্রাদুভাব দেখা যায়। এ পোকার আক্রমণের ফলে গাজরের ছোট বা কচি পাতাগুলো হলুদ হয় পরে কুঁকড়িয়ে যায় এবং লক্ষণীয়ভাবে গাছের পাতার পাশের ডগাগুলো হলুদ ও বিবর্ণ হয়ে যায়।লীফ হপার পোকা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।আক্রান্ত ডালপালা কেটে ফেলতে হবে এবং চারপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সবিক্রন ৪২৫ ইসি ২ মিলি/লিটার পানি অথবা রেলোথ্রিন ১ মিলি/লিটার পানিতে স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
চারা গজানোর ৭০-৮০ দিন পর সবজি হিসেবে গাজর খাওয়ার জন্য তোলার উপযুক্ত হয়। হেক্টরপ্রতি গাজরের ফলন ২০-২৫ টন।
আরও পড়ুন -Weed management methods: দেখে নিন ক্ষেতের আগাছা দমন করার উপায়