কাজু বাদাম সকলের কাছেই এক অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল | কাজু বাদামকে ইংরেজিতে Cashew nut বলে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Anacardium occidentale । কাজু বাদাম হলো সুস্বাদু ও অত্যন্ত পুষ্টিকর প্রাকৃতিক ফল। এই বাদামের চাহিদা বাজারে অন্যান্য বাদামের থেকে অনেকাংশে বেশি |কাজু বাদামের দুটি অংশ। কাজু যাকে আপেল বলা হয় আর অন্যটি বাদাম যা দেখতে অনেকটা মানুষের কিডনির মত। আপেল সরাসরি খাওয়া যায়। বাদাম প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়ার উপযোগী করা হয়। গাছ ১০-১২ মিটার উঁচু হয় এবং ৬০-৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এই নিবন্ধে, কাজু বাদামের চাষাবাদ (Cashew Cultivation) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
জাত:
ফলের রংয়ের ভিত্তিতে লাল, হলুদ, গোলাপী জাত নামে চেনা যায়। VLA-4, BPP-1, BPP-8, Vengurla-1, Vengurla-8, Ullal-1, BLA39-4, ভাস্করা প্রভৃতি কাজু বাদামের উন্নত হাইব্রিড জাত যা চাষের বেশ উপযোগী |
মাটি(Soil):
ভারী বেলে দো-আঁশ এবং লাল মাটির পাহাড়ী ঢালে এটি ভালো জন্মায় |মাটির অম্লমান ৫-৬.৫০ এই গাছের বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত |
জলবায়ু(Climate):
কাজু বাদাম সাধারণত উষ্ণ মন্ডলীয় ফল। কষ্ট সহিষ্ণু ও খরা প্রতিরোধী। প্রখর সূর্যালোক পছন্দ করে এবং ছায়াতে তেমন বৃদ্ধি পায়না। তাপমাত্রা অত্যধিক হলে কচি ফল ঝরে যায়। অধিক বৃষ্টিপাত এবং মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া ফলন কমিয়ে দেয়। ২০ ডিগ্রী-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১০০০ মিমি – ২০০০মিমি কাজু বাদাম চাষে বেশ সহায়ক।
আরও পড়ুন -Black Radish Cultivation: জেনে নিন কৃষ্ণ মুলো চাষ পদ্ধতি ও তার পরিচর্যা
চারা তৈরী:
পাকা ফল গাছ থেকে ঝরে পড়লে সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করা বেশ ভালো। এপ্রিল- মে মাসে পাকা ফলের বাদাম সংগ্রহ করে ৩-৪ দিন রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। শুকনো বীজ ২৪-৩৬ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে অংকুরিত বীজ জুন মাসে বপন করলে অংকুরোদগম বেশী হয়।
কলমের চারা তৈরী:
জুলাই- অক্টোবর মাস পর্যন্ত কলম করা যায়। ২-৬ মাসের চারাকে আদি জোড় হিসাবে নেয়া হয়। কাঙ্খিত গাছের সায়ন ফাটল জোড় পদ্ধতিতে স্থাপন করে নতুন চারা তৈরি করা যায়।
রোপণ পদ্ধতি(Planting process):
জুন- আগষ্ট মাস চারা রোপনের উপযুক্ত সময়। কমবেশি ১ বছরের কলমের চারা লাগালে ভালো হয়। চর্তুভূজী পদ্ধতিতে ৭-৮ মিটার দূরত্বে রোপন করলে হেক্টরে কমবেশি ১৫০-১৮০ টি চারা প্রয়োজন। এ দূরত্বে চারা লাগালে ৩-৪ বছর আন্তঃফসল হিসাবে অন্যান্য ফসল আবাদ করা যাবে। ত্রিভুজী পদ্ধতিতে পাহাড়ীঢালে একই জায়গায় ১৫% বেশি চারা রোপন সম্ভব। ঘন পদ্ধতিতে ৪ মিটার দূরত্বে হেক্টরে ৫০০-৬০০ চারা রোপন সম্ভব। ঘন পদ্ধতিতে চারা রোপন করলে রোপনের ৩-৪ বছর হতে গাছের অঙ্গ ছাঁটাই করতে হবে।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
মে- জুন মাসে প্রথমবার এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের দ্বিতীয়বার গাছের গোড়ায় রিং পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। ১ বছর বয়সী গাছের গোড়ায় ২ বারে গোবর/জৈবসার ১০ কেজি, ইউরিয়া সার ২৫০ গ্রাম, টিএসপি ২০০ গ্রাম এবং পটাশ ১৫০ গ্রাম প্রয়োজন। পরবর্তীতে ২য় বছরে ১ম বছরের দ্বিগুণ, ৩য় বছরে তিনগুণ, ৪র্থ বছরে চারগুণ এভাবে সারের মাত্রা বাড়াতে হবে। তবে কাঙ্খিত ফলনের জন্য গাছের চাহিদামত যুক্তিসংগত মাত্রায় সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
সেচ:
কাজু বাদামে তেমন সেচের প্রয়োজন হয়না। তবে গ্রীষ্মকালে ফল ধরার সময় ১ বার সেচ দিয়ে মালচিং করে দিলে বেশ ভালো |
আগাছা দমন:
কলমের চারার ক্ষেত্রে জোড়া লাগা স্থানের নীচে গজানো সকল ডাল কেটে ফেলতে হবে। ৩-৪ বছরের মধ্যে ডালপালা কেটে গাছের উপযুক্ত কাঠামো তৈরী করতে হবে। ৪-৫ বছর পর মাটি থেকে ৪-৫ মিটার উপরে গাছের কাণ্ড কেটে দিতে হবে। তাছাড়া ঘন, রোগাক্রান্ত মরা ডালা ছাঁটাই করে দিতে হবে।
রোগ ও প্রতিকার(Disease management system):
কাণ্ড ও মূল ছিদ্রকারী পোকা গাছের ক্ষতি করে থাকে। কার্বারাইল কীটনাশক ২ গ্রাম পরিমান ১ লিটার জলে মিশিয়ে ছিদ্রের ভিতরে স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া তুলোয় কেরোসিন মিশিয়ে ছিদ্রে প্রবেশ করলে এ পোকা মারা যায়। ফল ও বাদাম ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য মনোক্রোটোফস ০.০৫% হারে প্রয়োগ করা যায়।
ফল সংগ্রহ:
বীজের গাছে ৩-৪ বছর পর এবং কলমের গাছে পরের বছর ফল ধরে। ১০ বছর গাছে পূর্ণ ফলন পাওয়া যায় এবং ২০-২৫ বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। নভেম্বর- জানুয়ারী ফুল ফোটে এবং মার্চ- মে মাসে ফল পাকে। পরিপক্ক ফল সংগ্রহ পরবর্তী বাদাম আলগা করে ৩-৪ দিন রোদে শুকিয়ে বীজে ৯-১০% আর্দ্রতা থাকে এমন অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়। ১০ বছর একটি গাছে গড়ে ৭-৮ কেজি বাদাম হয়। তবে, হাইব্রিড গাছে ফলন আরও ভালো হয় |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন -Turnip Cultivation: অধিক উপার্জনের জন্য চাষ করুন শালগম