দারুচিনি একটি মসলা জাতীয় দ্রব্য। এর প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এ গাছের বাকল মসলা হিসেবে পরিচিত। পাতার তেল সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি বিভিন্ন খাবারে মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাছাড়া ও ওষুধ শিল্পে, সাবান ও দাতের মাজন তৈরিতে ও এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
জলবায়ু ও মাটি(Soil & climate):
দারুচিনি চাষের জন্য উষ্ণ বা অল্প উষ্ণ আবহাওয়া উপযোগী। এর জন্য বর্ষাকাল বা বর্ষাকালের শেষ সময়ে এটি রোপন করা হয়ে থাকে। দারুচিনি চাষের জন্য উর্বর বেলে দোআঁশ মাটি বিশেষ উপযোগী। এ ধরনের মাটিতে এটি চাষ করলে এর গুনগত মান ভালো হয়। জমি অবশ্যই সুনিষ্কাশিত হতে হবে।
দারুচিনি গাছ একটানা বেশিদিন খরা সহ্য করতে পারে না। এটি এমন স্থানে চাষ করতে হবে যেখানে সূর্যের আলো পর্যাপ্ত ও আলো বাতাস চলাচল করে।
জমি তৈরি:
যেসব জমিতে অন্য কোনো ফসল ভালো জন্মে না সেসব জমি দারুচিনি চাষের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। সাধারনত বসত বাড়ির আঙিনা, পুকুর পাড়ে ও এটি চাষ করা যেতে পারে। জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে নিতে হবে।মাটি সমতল করে নিতে হবে ও ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। জমি যেন আগাছা মুক্ত থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
চারা তৈরি:
দারুচিনি সাধারনত বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে কলমের মাধ্যমে ও এর চারা তৈরি করা হয়ে থাকে। কলমের ক্ষেত্রে গুটি কলম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।দারুচিনি গাছে সাধারনত জানুয়ারি মাসে ফুল আসে। জুলাই মাস থেকে আগস্ট মাসে ফসল আসা শুরু করে।
আরও পড়ুন - Red Spinach Cultivation: জেনে নিন লাল শাক চাষের সহজ পরিচর্যা ও সম্পূর্ণ পদ্ধতি
রোপন পদ্ধতি:
দারুচিনি চাষ করতে জমিতে বর্গাকারে বা ষড়ভূজ আকারে গর্ত তৈরি করতে হবে। তারপর গর্তে সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিটি গর্তে গোবর, ছাই ও টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে। সার দেওয়ার পর তা মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে। গর্ত ভরাট করার ১০-১৫ দিন পর চারা রোপন করতে হবে। মে মাস থেকে অক্টোবর মাসে চারা রোপন করার সময়। বীজ থেকে যখন কচি চারা হয় তখন এর রং থাকে অনেকটা লাল রঙের। এ সময় চারা তোলা উচিত নয়। তখন চারা মারা যাবার সম্ভাবনা থাকে। তাই চারার পাতা যখন সবুজ রং ধারন করবে তখন চারা তুলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় লাগাতে হবে। বর্ষাকালে চারা রোপন করা উত্তম। চারা সারি করে লাগাতে হবে। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব হবে ৩ মিটার।
সার প্রয়োগ:
উন্নত ও ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে। একটি গাছের জন্য ৪-৫ কেজি গোবর সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, প্রয়োগ করতে হবে। বৈশাখ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস এবং ভাদ্র মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত জমিতে সার দেওয়া ভালো।
সেচ:
জমিতে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হবে। চারা যখন ছোট থাকে তখন ঘন ঘন সেচ দেওয়া ভালো । গাছ একটু বড় হলে এত সেচ দিতে হয় না। জমিতে যেন জল জমে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায়।
ফসল সংগ্রহ:
দারুচিনি গাছ সাধারনত ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। গাছের বয়স ৫ বছর হলে সেখান থেকে বাকল সংগ্রহ করা যাবে। এক হেক্টর জমি থেকে এক বছরে প্রায় ২০০-৩০০ কেজি বাকল পাওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন -Wood Apple Farming Method: এই পদ্ধতিতে বেল চাষ করে আপনিও হয়ে উঠুন লাভবান